কেন্দ্রীয় বাজেটে সংকীর্ণ প্রাদেশিকতার প্রতিফলন ঘটাল মোদি সরকার৷ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে বাজেট পেশ করলেন, তা আসলে বিজেপি জোট সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম দিয়ে তুষ্ট করা৷ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ নয়, এখানে সংকীর্ণ স্বার্থে রাজনৈতিক উৎকোচের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জাত-ধর্মের নামে ভেদাভেদের পাশাপাশি রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে প্রাদেশিকতার রাজনীতি হচ্ছে৷ এটা সংবিধান বিরোধী, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী৷
সবাই জানে, পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা প্রকল্প অসম্পূর্ণ, গঙ্গার ভাঙন সমস্যা রয়েছে, উত্তরবঙ্গ এখনই বন্যাক্লিষ্ট৷ মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত৷ কিন্ত্ত পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাগুলিকে সম্পূর্ণ অবহেলা করা হয়েছে এই বাজেটে৷ মোদি ভোটের আগে স্বপ্ন বিক্রি করেছেন, ‘মোদি গ্যারান্টি’র কথা বলেছেন৷ এখন বাজেটে আর সেগুলি নেই৷
Advertisement
বঞ্চনার বাজেট অসাংবিধানিক বাজেট বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছন, ‘বাংলার আশপাশের রাজ্যগুলিকে ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের টাকা দেওয়া হল৷ একমাত্র রাজ্য বাংলা কী অপরাধ করল যে তাকে একা করে দেওয়া হল? এই সরকার বাংলাকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করলেও কিন্ত্ত ভোটের ময়দানে দেখা হবে৷ বাংলা একা নয়, একাই একশো৷’
Advertisement
অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীর আসন ধরে রাখতে জেডি(ইউ) এবং টিডিপি-কে খুশি রাখতেই হবে৷ এবারের বাজেটে তা খোলসা করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা৷ তাই তিনি দৃষ্টিকটু হলেও কার্যত উদার হস্তে দুই রাজ্যের অন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছেন৷ মোদি তথা বিজেপিকে সমর্থনের বিনিময়ে দুই দলের প্রধান যথাক্রমে নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু নিজ নিজ রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছিলেন৷ বাজেটে দেখা গেল তারই প্রতিফলন৷ বিহারে নতুন বিমানবন্দর, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, মেডিকেল কলেজ, ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করে সেগুলির জন্য ২৬ হাজার কোটি টাকা এবং সে রাজ্যের বন্যা নিয়ন্ত্রণে আরও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই বাজেটে৷ অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী অমরাবতীর পরিকাঠামো নির্মাণেও ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে৷
বস্ত্তত, এবারের বাজেটে অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি করার পদক্ষেপের বদলে জোগান বাড়ানোর উপরেই মূল জোর দেওয়া হয়েে্ছ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷ তাঁরা বলছেন, সেখানেই বাজেটের সমস্যা৷ কারণ, চাহিদা না বাড়লে উৎপাদন বাড়ে না৷ আর উৎপাদন না বাড়ানো গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার জায়গা নেই৷ বাজেটে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতনে নিযুক্ত নতুন কর্মীদের এক মাসের বেতন সরকার দেবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ এই প্রকল্পে দেশে কর্মসংস্থানের জোয়ার আসবে বলে নির্মলার দাবি৷
তবে তিনিই আবার গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প রেগা বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে বাজেট ভাষণে রেখে দিয়েছেন বঞ্চনার জায়গায়৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ জেরবার হলেও এবারের বাজেটে খাদ্যে ও সারে ভরতুকি কমানো হয়েছে৷ এরপরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যথারীতি বাজেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছেন, এই বাজেট দেশের গরিব মানুষ, গ্রাম এবং কৃষককে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে৷ বিপরীতে বিরোধী দলগকুলি কটাক্ষ করে বলেছে, দেশের আসল সমস্যার সমাধানের রাস্তা খোঁজার দিকে না গিয়ে শরিকদের তুষ্ট করে মোদির কুর্সি বাঁচানোর পথেই হেঁটেছে এবারের কেন্দ্রীয় বাজেট৷
Advertisement



