বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে সাম্প্রতিক হামলার জন্য ভারতের তীব্র নিন্দা বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্যের অভাবকেই প্রতিফলিত করে। গত আগস্টে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং ভারতে আসার পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে ইন্ধন দেওয়া হয় অসামাজিক উপাদান ও মৌলবাদীদের দ্বারা। যেখানে অনেক জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের টার্গেট করা হয়েছে। এর পর নয়াদিল্লি বারবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটা পরিহাসের বিষয় যে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং ভারপ্রাপ্ত সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূসের আমলে হিন্দু পরিচয়ের প্রতীককে টার্গেট করা অব্যাহত রয়েছে। ধর্মীয় স্থান ও পূজা মণ্ডপে অসম্মান, ভাংচুর ও ডাকাতির মতো অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
এ বিষয়ে ইউনূসের যুক্তি হল, এসব হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একে সাম্প্রদায়িক বলা যাবে না। এবং সময়ে সময়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং মন্দির পরিদর্শনের বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণার একটি নিয়মতান্ত্রিক প্যাটার্নকে বিকাশ লাভ করতে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় সরকারি চাকরি ও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত সংখ্যালঘুদের পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সম্প্রতি বিখ্যাত যশোশ্বরী মন্দির থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় দেওয়া মুকুট চুরির খবরও এসেছে। নিঃসন্দেহে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এই প্রচারণা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
Advertisement
অবশ্যই, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য এটি পরীক্ষার সময়। শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় ফেরত পাঠানোর দাবিতে নয়াদিল্লির নীরবতা ঢাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন একটি শ্রেণির আবির্ভাব ঘটেছে যারা চায় বাংলাদেশ তার শক্তিশালী প্রতিবেশীর সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলুক। যাইহোক, এই ধারণা ভুল এবং অবাস্তব। তবুও উভয় পক্ষকেই অবিশ্বাসের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান পূরণে বিলম্ব এড়াতে হবে। কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সক্রিয় করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজনে কঠোরতা দেখাতে হবে। এমতাবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোর পোস্টার বয় হয়ে ক্ষমতার লাগাম নেওয়া মোহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়।
Advertisement
অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে যা ঘটছে তা ভারতের জন্যও শিক্ষা। আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে কোনো ধরনের বৈষম্য ও বৈষম্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি যতটা অন্যায় করা হচ্ছে ততটাই হবে। এই বৈষম্যমূলক আচরণ ও অযৌক্তিকতার অবসান ঘটাতে হবে। এটা হবে ভারতের বসুধৈব কুটুম্বকম নীতির বিরুদ্ধে। অন্য কথায়, এটি ভারত এবং ভারতীয়ত্বের অপমানও হবে। প্রতিটি দেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করা এখন সময়ের দাবি।
Advertisement



