প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে গত দশ বছরে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সর্বাধিক ঋণ মকুব করা হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা। সংসদে এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে একথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শিল্প ও পরিষেবায় বড় কর্পোরেটদের গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ মকুব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই ব্যাঙ্কগুলিতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণে এগিয়ে রয়েছে বৃহৎ কর্পোরেটরা। একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঋণ মকুব করা হয়েছে সেই কর্পোরেট সংস্থাগুলিরই। অন্যদিকে ছোট, অতি ছোট, মাঝারি শিল্পে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ অনেক কম এবং একই সঙ্গে তাদের ঋণ মুকুবের হারও কম।
ঋণ মকুব আগেও ছিল। তবে মোদী জমানায় দেখা গিয়েছে কর্পোরেটদের বকেয়া ঋণের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, একই হারে তাঁদের ঋণ মকুবের হার বেড়ে চলেছে। অর্থমন্ত্রীর লিখিত জবাবে জানা গিয়েছে, ২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ সালে সর্বাধিক ঋণ মকুব হয়েছে ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। মোদী সরকারের প্রথম দফার সরকারের শেষ বছরে কর্পোরেটদের রেকর্ড হারে ঋণ মকুব হয়েছে। প্রসঙ্গত, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুবের হার ছিল খুবই কম, ৩১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। দেখা গেল মোদীর ক্ষমতায় থাকার পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই কর্পোরেটদের ঋণ মকুবের পরিমাণ প্রায় চারগুণ বেড়ে গিয়েছে।
দশ বছরে মোট ঋণ মকুবের পরিমাণ এবং শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের বড় কর্পোরেট এবং বিভিন্ন সংস্থার ঋণ মকুবের তথ্য আমরা জানতে পারছি। তাতে দেখা গিয়েছে, মোট ১৬.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুবের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি টাকার উপর ঋণ মকুব হয়েছে কর্পোরেট সংস্থার। মোদী জমানার দশ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর দেখা গিয়েছে কর্পোরেট শিবিরে ঋণ মকুবের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ২০১৪-১৫ সালে যেখানে কর্পোরেট ঋণ মকুবের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা, মোদীর দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সেই ঋণ মকুবের পরিমাণ ২০১৯-২০ বেড়ে হয় ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। তারপর থেকে তিন বছর গড়ে দেড় লক্ষ কোটি টাকার উপর ঋণ মকুব হয়েছে। ২০২১-২২ এবং ২০২৩-২৪ সালে একটু কম, যথাক্রমে ৬৯ হাজার এবং ৬৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব হয়েছে।
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে অতি ছোট, ছোট এবং মাঝারি (এমএসএমই) শিল্পে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ হলো মাত্র ৭ লক্ষ ৬১ কোটি টাকা। বছরে গড়ে অনাদায়ী পরিমাণ হলো ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে বড় কর্পোরেটের শুধু এক বছরে অনাদায়ী ঋণ মকুবের পরিমাণ বেড়ে চলে যায় ২ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্যে বলা হয়েছে, ১০০০ কোটি টাকার উপর অনাদায়ী ঋণ রয়েছে এই রকম ২৯টি কর্পোরেটের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ হলো ৬১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, অতিক্ষুদ্র শিল্পে অনাদায়ী ঋণের হার যেখানে খুব কম। সংসদে পেশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে দেশের অতি ক্ষুদ্র শিল্পে ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ মাত্র ২৮ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। অবশ্য এর ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলছেন, ঋণ মকুব করা হলেও ঋণের দায় পুরো মিটছে না। এই ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
অর্থমন্ত্রী যেটা বলেননি তা হলো, ঋণ মকুবের পরে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া চললেও সেই ঋণ আদায়ের হার খুব কম। তা মোট আনাদায়ী ঋণের ৩ শতাংশের বেশি নয়। ফলে কর্পোরেটদের ঋণ মকুবের পরে আদায় প্রক্রিয়া চললেও সেই ঋণ কার্যত প্রায় অনাদায়ীই থেকে যায়। কর্পোরেটের অনাদায়ী ঋণ মকুবের পর আদায় না হওয়ায় প্রায় সবটাই তামাদি হয়ে যায়।