আসানসোলের পলাশডাঙার জঙ্গল থেকে এক কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর দেহে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত, গলায় কালসিটে দাগ, মুখে রক্ত বেরোনোর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই মৃতার প্রেমিক রাকেশ সিংকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গাপুরের গোপালমাঠ এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরী বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু বিকেল গড়ালেও সে বাড়ি না ফেরায় পরিবার স্কুলে খোঁজ নেয়। সেখানেই জানা যায়, ওই দিন স্কুলে যায়নি সে। এরপর শুক্রবার সকালে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার। বিকেলে খবর আসে, ডামরা এলাকার পলাশডাঙার জঙ্গলে ঝোপের মধ্যে চাপা দেওয়া অবস্থায় এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। পরে দেহটি নিখোঁজ তরুণীর বলে চিহ্নিত করা হয়। শনিবার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
Advertisement
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, তরুণীর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষতও স্পষ্ট। মুখ থেকে রক্ত বেরোনোরও প্রমাণ মিলেছে। তবে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে তবেই প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে।
Advertisement
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, ‘এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে রাকেশ সিংয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ওই তরুণীর। তারপর থেকেই তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ চলত। যেহেতু তরুণীর নিজের মোবাইল ছিল না, বাবার ফোন থেকেই কথা বলত সে। পরিবারের অভিযোগ, সেই সম্পর্ক নিয়েই বারবার সতর্ক করা হয়েছিল মেয়েকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মেয়ের মোবাইল ব্যবহারের তথ্য ঘেঁটে পরিবার জানতে পারে, সেদিন সকালে রাকেশের সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিল সে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ রাকেশকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
নিহত তরুণীর বাবার দাবি, ‘আমার মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। দেহের যে অবস্থা, তা দেখলে বোঝা যায় কী নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই।’
মেয়েটির মা ভাঙা গলায় বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে। স্কুলে যাবে বলে বেরিয়েছিল, আর তারপরে এই পরিণতি! মেয়ের কাছে কোনও ফোন ছিল না, তাই বন্ধুর ফোন বলে বাবার মোবাইলেই কথা বলত। এখন মনে হচ্ছে, সেই পরিচয়ই মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল।’
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই ঘটনার প্রকৃত কারণ পরিষ্কার হবে এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Advertisement



