শীতের হিমেল হাওয়া মানুষকে টেনে আনে বেড়াতে। তার প্রতিচ্ছবি মিলল মায়াপুর ইসকনে। গীতা জয়ন্তীর সপ্তাহব্যাপী উৎসবে শুধু ইসকনের ভক্তই নন, দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকে কার্যত প্লাবিত হয়েছে ইসকন হেডকোয়ার্টার। শান্ত, অনাড়ম্বর কিন্তু নজিরবিহীন ভিড়—এমনটাই বলছে ইসকনের নিজস্ব পরিসংখ্যান।২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর—ছ’দিনের উৎসবে ইসকন কর্তৃপক্ষের দাবি, কমপক্ষে তিন লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকের ঢল নেমেছে মায়াপুরে। শুধু ভারত নয়, আমেরিকা, রাশিয়া, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ বহু দেশের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন এই আন্তর্জাতিক উৎসবে।
ইসকনের পিআরও রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানাচ্ছেন, “গীতা জয়ন্তী এখন শুধু ভারতের উৎসব নয়। বিদেশ থেকেও প্রতিনিধি এসেছেন। আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন থাকলেও এবারের ভিড় আমাদের প্রত্যাশার বহু ঊর্ধ্বে।” তাঁর কথায়, ১০ হাজার যুবক-যুবতী আগেই অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন, তাঁরা এসেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। কিন্তু সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক—‘ওয়াক-ইন’ ভিড়। যা ইসকনের আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের।গীতা যজ্ঞ, কীর্তন-ভজন, গীতা পাঠ, পুজো—বিচিত্র অনুষ্ঠান যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে, তেমনই নির্মীয়মাণ টেম্পল অব দ্য ভেদিক প্ল্যানেটোরিয়াম (TOVP)-এর অভ্যন্তর পরিদর্শনের সুযোগও বাড়িয়েছে সাধারণের আগ্রহ।শীত পড়তেই বেড়াতে আসা সাধারণ পর্যটকরাও মায়াপুরে ভিড় বাড়িয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ভক্ত নন। কিন্তু গীতা জয়ন্তীর আবহ—আলো, সঙ্গীত, আধ্যাত্মিক পরিবেশ—টেনে এনেছে সকলকে। মায়াপুরের বিশেষ আকর্ষণ নদীপথ। জলঙ্গী, ভাগীরথী (বা হুগলি) এবং গঙ্গার সঙ্গমস্থলের কাছে হওয়ায় নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের বাড়তি পাওনা। বিকেলের নরম আলোয় নদীপথে ভেসে বেড়ানো যেন উৎসবের আনন্দকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
Advertisement
গীতা জয়ন্তীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্র সমরাঙ্গনে হতাশাগ্রস্ত অর্জুনকে যে জ্ঞান দান করেছিলেন, সেই কথোপকথনই ভগবদগীতা। মানব ধর্মতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত পাঠ হিসেবেই গীতাকে মানা হয়। আজ থেকে প্রায় ৫১৫৮ বছর আগে সেই দিব্য জ্ঞান প্রদান করা হয়েছিল। সেই ঐতিহ্য স্মরণ করেই প্রতিবছর পালিত হয় গীতা জয়ন্তী।”ইসকন সূত্রের দাবি, এ বছরের ভিড় প্রমাণ করে গীতা জয়ন্তীর জনপ্রিয়তা এখন আর শুধু ধর্মীয় উৎসবের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়—এটি পরিণত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলায়। শীতের শুরুতেই যার রেশ টেনে এনেছে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষকে মায়াপুরে।
Advertisement
Advertisement



