রাজ্যে বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। আগামী ৪ নভেম্বর থেকে বিএলও-রা শুরু করবেন ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার যাচাইয়ের কাজ। তার আগে চলছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা এবং বর্তমান তালিকার মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি পর্ব। কিন্তু সেই কাজে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪১ শতাংশ ভোটারের নামের মিল পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ম্যাপিং সম্পন্ন হয়েছে ৩৫ শতাংশের মতো।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ইস্পাত, কয়লা, রেল এবং চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ কারখানার মতো বহু সংস্থা রয়েছে, সেখানে বহু বছর ধরে ভিনরাজ্যের মানুষ কাজ করতে এসেছেন। কেউ কেউ অবসরের পর ফিরে গিয়েছেন নিজের রাজ্যে। এর ফলে পুরনো ভোটার তালিকায় যাঁরা আর এখানে থাকেন না, তাঁদের নাম রয়ে গিয়েছে। আবার যাঁরা নতুন করে এসেছেন, তাঁদের নাম যোগ করা হয়েছে। এই জটিলতাই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
Advertisement
এই প্রেক্ষিতেই বুধবার পশ্চিম বর্ধমানে সর্বদলীয় বৈঠক করেন জেলাশাসক তথা জেলার প্রধান নির্বাচনী আধিকারিক এস পোন্নাবলম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে উঠে আসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
Advertisement
বিজেপি নেতা তাপস রায় বলেন, সমস্ত আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি কেটে যাবে, যখন ৪ নভেম্বর থেকে কমিশনের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। কিছু রাজনৈতিক দল ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কিন্তু কোনও বৈধ ভোটার বাদ যাবেন না। তিনি আরও জানান, যাঁরা ভিনরাজ্য থেকে এসেছেন, তাঁদের জন্য আলাদা ফর্ম থাকবে— অ্যানেক্সচার ৪। সেটা পূরণ করলেই তাঁদের নাম যথাযথভাবে ম্যাপিং হয়ে যাবে। একজন মানুষের নাম এক জায়গাতেই থাকবে, এটা নিশ্চিত করা হবে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ রায় বলেন, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে মানুষ বারবার চাকরির কারণে শহর বদল করেন। কেউ স্থানান্তরিত হন, কেউ আবাসন বদল করেন। পুরনো বুথ নম্বর মনে রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া এখানে প্রচুর অবাঙালি ভোটার রয়েছেন, যাঁরা বাংলা জানেন না। তাঁদের জন্য ফর্ম পূরণের বিষয়টি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এজন্য তিনি কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন,’আমরা কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছি, ফর্মটি যেন বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বা অন্য ভাষাতেও পাওয়া যায়।’
এদিকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বলে দাবি করা হয়েছে। দলের নেতা উৎপল সেন বলেন, এসআইআর নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি খুবই সহজ। ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের জন্য আলাদা ফর্ম রয়েছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সাধারণ এবং সবার কাছেই থাকে। এর আগেও এমন প্রক্রিয়া হয়েছে। এবারও তেমনভাবেই হবে।
প্রশাসনের তরফে জেলাশাসক এস পোন্নাবলম বলেন, ‘যাঁরা ভিনরাজ্য থেকে এসেছেন, তাঁদের আমরা ম্যাপিং করব ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে। কেউ চাইলে নিজেও সেই ম্যাপিং করতে পারেন। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় নেই, তাঁরা রক্তের সম্পর্কের কারও নাম দিয়েও ম্যাপিং করতে পারবেন। ফলে কোনও বৈধ ভোটার বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই।’
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এসআইআরের বুথ স্তরের কাজ। প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি বৈধ ভোটারের নাম নিশ্চিতভাবে তালিকায় থাকবে। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শিল্পাঞ্চলে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের উপস্থিতির কারণে পশ্চিম বর্ধমান জেলাই হতে পারে এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকা।
Advertisement



