দেশের সুরক্ষার পাহারায় থাকেন যিনি, নিজের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিই পড়লেন চাঁদাবাজদের খপ্পরে। সিউড়ি শহরের পাঁচেরপল্লিতে সেনা জওয়ান ও তাঁর পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কাশ্মীর ফেরত জওয়ান গোপীনাথ বল, তাঁর স্ত্রী চৈতি দত্ত এবং তাঁদের অসুস্থ শিশুপুত্র। পুলিশ ইতিমধ্যেই একজনকে আটক করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে। গোপীনাথ দুবরাজপুর থেকে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সিউড়ির চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৪ নম্বর বাইপাস পার হয়ে পাঁচেরপল্লির গ্যাস গোডাউনের সামনে পৌঁছতেই ১০-১২ জন যুবক তাঁদের অটো ঘিরে ফেলে। চাঁদা দাবি করে তারা। অসুস্থ সন্তানের কথা জানিয়ে গোপীনাথ অনুরোধ করেন, ‘এখন ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরি, ফেরার পথে টাকা দেব।’ কিন্তু কথায় কান না দিয়ে শুরু হয় বচসা। এরপরই হামলা। অভিযোগ, জওয়ানকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করে তারা। এমনকি স্ত্রী ও শিশুর উপরও চড়াও হয় হামলাকারীরা।
Advertisement
আহত জওয়ান বলেন, ‘ওরা একটাও কথা শুনল না। আমি বুঝিয়েছিলাম আমার ছেলেকে আগে ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু ওরা আমার স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে দেয়। শিশুটির গায়েও হাত তোলে। পরে আমাকে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। আমি পাল্টা দিইনি, কারণ তখন ছেলেকে বাঁচানোই ছিল আসল উদ্দেশ্য।’
Advertisement
চৈতি দত্তের অভিযোগ, হামলাকারীরা তাঁদের মোবাইল ফোনও ভেঙে দেয়। তাঁর কথায়, ‘আমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, আগে ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে দিন, পরে যা বলবেন করব। কিন্তু ওরা গালাগাল করে, টানাটানি করে, এমনকি আমার ছেলেকেও ধাক্কা দেয়।’
ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে সিউড়ি থানার পুলিশ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদার টাকা দাবি এবং হামলার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। আরও কেউ যুক্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিউড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিল দাস বলেন, ‘এটা শুধু অন্যায় নয়, নৃশংসতাও বটে। একজন সেনা জওয়ান যিনি দেশের জন্য প্রাণপাত করেন, তাঁর উপর এমন হামলা বরদাস্ত করা যায় না। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ করা।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচেরপল্লি এলাকায় চাঁদা তোলার নামে এরকম জুলুমবাজি নতুন নয়। মাঝেমধ্যে বিয়ে, পূজা বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের নামে টোল তোলা হয়। কিন্তু এবার তা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাস— দোষীদের কোনওভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠছে— চাঁদার নামে সাধারণ মানুষ সিউড়ির রাস্তায় কতটা নিরাপদ!
Advertisement



