পরিবেশ দূষণের কারণে আইনি বাধা সত্ত্বেও শান্তিনিকেতন সংলগ্ন সোনাঝুরি হাট থেকে সরতে চাইছেন না ব্যবসায়ীদের একাংশ। এক দিকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় ঘোষণার অপেক্ষা, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের আপত্তি নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক নিয়মভঙ্গের অভিযোগে যে মামলার শুনানি চলছে, তার নিষ্পত্তি আগামী ১৪ নভেম্বর। রায় কী হবে, তার দিকে তাকিয়ে আছেন ব্যবসায়ী থেকে পরিবেশ সচেতন মানুষেরা।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আদালতে জানিয়েছেন, জঞ্জাল ফেলে রাখা, প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিশোধিত তরল বর্জ্য জমা, এমনকি গাছ কেটে ফেলার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বনদপ্তর আদালতে হলফনামা দিয়ে স্বীকার করেছে, হাট এলাকার আশেপাশে বনদপ্তরের জমি দখল করে বেশ কিছু হোটেল ও রিসর্ট গড়ে উঠেছে, যাদের দূষণ নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্র নেই।
Advertisement
আবার খাতায়কলমে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৮০০ হলেও বাস্তবে চার হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী সপ্তাহে ছয় দিন হাটে বসেন। ফলে প্রতিনিয়ত বড় ভিড়, যানজট এবং দূষণ বেড়েই চলেছে। বনদপ্তর মাঝেমধ্যেই অভিযান চালালেও ফের বেনিয়ম শুরু হয় বলেই দাবি স্থানীয়দের।
Advertisement
গত ৭ নভেম্বর বোলপুরে সিনার্জি বাণিজ্য সম্মেলনে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানিয়েছেন, ‘পরিবেশ আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নির্দেশ মেনে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্য সরকার শিবপুরে বিশ্বক্ষুদ্র বাজারে হস্তশিল্পীদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।’ অর্থাৎ সোনাঝুরি হাটের আদলে বিকল্প হাট গড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে হাট সরানো বা বন্ধের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা শিল্পী–ব্যবসায়ীদের মধ্যে গভীর আশঙ্কা তৈরি করেছে। তাঁদের বক্তব্য, হাট জায়গা বদলালে পর্যটকের আগমন কমে যাবে, আর তাতে ভেঙে পড়বে বহু মানুষের জীবিকা। হাট ব্যবসায়ী ইনসান মল্লিক ও তন্ময় মিত্রের কথায়, এই হাটই স্থানীয় বহু পরিবারের রুজি–রোজগারের একমাত্র ভরসা। দেশ–বিদেশের পর্যটকদের কাছে সোনাঝুরি এখন অন্যতম আকর্ষণ। বনদপ্তরের নিয়ম মেনেই এত দিন হাট চালানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সেন মজুমদার এবং অহনা বিশ্বাস বলেন, ২০০০ সালে আশ্রমকন্যা শ্যামলী খাস্তগীরের উদ্যোগে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে ছোট আকারে যে হাটের শুরু হয়েছিল, তা আজ বহু জেলার ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে বিশাল আকার ধারন করেছে।
এখন সকলের চোখ পরিবেশ আদালতের দিকে। আদালতের রায়ই সোনাঝুরি হাটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
Advertisement



