• facebook
  • twitter
Monday, 2 December, 2024

কোর কমিটির বৈঠক নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে বীরভূমে

ওয়াই প্লাস নিরাপত্তার বলয়ে এলেন শেখ কাজল

বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ। ফাইল চিত্র

জেলা বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একের পর এক চমক আসছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি থাকার পরে, তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর বোলপুরের নীচুপট্টির কালিকাপুরের বাড়িতে ফেরেন। ২০২২ সালের ১১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার অনুব্রত মণ্ডলকে তাঁর বোলপুরের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল সিবিআই। তারপর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলকে জেলা সভাপতির পদে রেখেই, জেলায় দল পরিচালনার জন্য কোর কমিটি গঠন করে দেন।

অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে থাকাকালীন সময়েই বিগত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ নানুর থেকে জেলা পরিষদে নির্বাচিত হয়ে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ থাকা আব্দুল কেরিম খানকে মনোনয়ন না দিয়ে ওই আসনে প্রথমবার জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় নানুরের পাপুড়ীর ফায়েজুল হক (শেখ কাজল)-কে। তিনি জেলায় জেলা পরিষদ আসনে সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী হন এবং তাঁকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি করা হয়। জেলায় দল পরিচালনার জন্য যে ছয় সদস্যের কোর কমিটি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে দেন তাতে রয়েছেন রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শেখ কাজল ও বোলপুরের সুদীপ্ত ঘোষ। শারদোৎসবের পরে দলীয়স্তরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যে বিজয়া সম্মিলনী হয় তাতে শেখ কাজল ও অনুব্রত মণ্ডলকে এক মঞ্চে একবারও দেখা যায়নি।

এমন কী, দলীয়ভাবে শেখ কাজলের দায়িত্বে থাকা শান্তিনিকেতন থানার কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের মুলুকে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির অনতিদূরে মুলুক স্কুল ময়দানে দলের যে বিজয়া সম্মিলনী হয় তাতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শেখ কাজল উপস্থিত থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল সেখানে ছিলেন না। দলের বিজয়া সম্মিলনী শেষ হতেই শান্তিনিকেতনের উত্তরনারায়ণপুরে শনিবার ২ নভেম্বর রাতে বেধড়ক মারধর করা হয় কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারুলডাঙা সংসদের তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য সমীর থান্দারকে। তাঁকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পরদিন তিনি সেখানেই মারা যান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল দেখা না করলেও, শেখ কাজল ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়ান এবং সমীর থান্দারকে ‘তাঁর দুর্দিন ও অসময়ের সাথী’ বলে উল্লেখ করেন। এদিক দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলীয় এক কর্মীর মোবাইলে ফোন করে, সেই ফোনেই অনুব্রত মণ্ডলকে জানিয়ে দেন যে, জেলায় আর একলা চলা যাবে না।

দলীয় রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে কোর কমিটির সদস্য শেখ কাজল বার বার অভিযোগ তোলেন যে, দীর্ঘদিন ধরেই জেলা কোর কমিটির কোনও বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা দলের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বিষয়ের একটি চিঠির প্রসঙ্গ সামনে আসে। তারপরই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে বসে জানিয়ে দেন যে, শনিবার ১৬ নভেম্বর বেলা ৩ টেয় দলের বোলপুর কার্যালয়ে কোর কমিটির বৈঠক বসবে এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকের বিষয়ে কোর কমিটির সব সদস্যকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনুব্রত মণ্ডল কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা ছয় থেকে বাড়িয়ে পনেরো জন করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন।

জেলা কোর কমিটির বৈঠক বসার আগেই সরকারিভাবে শেখ কাজলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এনিয়েও রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা পান। আর মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর থেকে শেখ কাজলকে ওয়াই প্লাস ক্যাটাগরি নিরাপত্তা দেওয়া হলো। শেখ কাজল অবশ্য জানিয়েছেন, সোমবার ১১ নভেম্বর রাত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেন নিরাপত্তা বাড়ানো হলো তা জানি না।

জনগণই আমার নিরাপত্তা। গত মাসে শেখ কাজলকে দেওয়া হয়েছিলো ওয়াই ক্যাটাগরি নিরাপত্তা। এবার পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় বন্দুকধারী বাহিনী যোগ হয়েছে। শনিবার ১৬ নভেম্বরের কোর কমিটির বৈঠকের আগে শেখ কাজলকে ওয়াই প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক এবং তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয়স্তরে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।