প্রায় ৩০০ বছরের ডেমুরিয়ার রথ আজও উজ্জ্বল

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক রথ হল কাঁথির ডেমুরিয়ার রথ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনাে এই রথ আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে মানুষের মনে।

Written by SNS Purba Medinipur | July 3, 2019 4:08 pm

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক রথ- কাঁথির ডেমুরিয়ার রথ। (Photo: Statesman News Service)

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক রথ হল কাঁথির ডেমুরিয়ার রথ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনাে এই রথ আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে মানুষের মনে। এই রথ দেখতে আজও জেলার প্রতিটি প্রান্ত ও ভিন জেলা থেকেও মানুষের ভিড় হয়।

প্রকাশ, আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওড়িশার বাসিন্দা মগ্নীনারায়ণ চৌধুরী ডেমুরিয়াতে বসবাসের উদ্দেশ্যে আসেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল রথের সময় তীর্থযাত্রীদের পুরী দর্শনে নিয়ে যাওয়া। তিনি তাঁর এই ইচ্ছাকে বাস্তব করতে প্রতি বছর বহু তীর্থযাত্রীকে পায়ে হেঁটে পুরী দর্শনে নিয়ে যেতেন।

তিনি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছাকে প্রতিহত করেননি। একবার তিনি তীর্থযাত্রীদের পুরী নিয়ে যাওয়ার সময় ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে দেখা দেন প্রভু জগন্নাথদেব। প্রভু জগন্নাথ বলেন, তিনি যেন আর কষ্ট করে পুরী না গিয়ে বাড়ির কাছে যেন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

এরপর মগ্নীনারায়ণ বাড়ি ফিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মাটির মূর্তি গড়ে পুজো শুরু করেন। মগ্নীনারায়ণের মৃত্যুর পরে ১৭৪৩ সালে বর্গীরা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা দখল করে নেয়। ১৭৫২ সাল পর্যন্ত এই দখল থাকে। বর্গীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের হল্যে প্রচুর হিন্দু মন্দির লুঠ করতাে।

সেই সময় মগ্নীনারাণের উত্তরাধিকারীরা নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী করুণাকরণ পাহাড়ির বাড়িতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে লুকিয়ে রাখেন। মগ্নীনারায়ণের পরিবারের লােকজনেরা ভোগ রান্না করে এখানে নিবেদন করে যেতেন।

কালক্রমে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা আর মগ্নীনারায়ণের বাড়িতে ফিরে আসেননি। তখন জলামুঠের জমিদার যাদুররাম রায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে প্রভূত পরিমাণে ভূ-সম্পত্তিতে ভূষিত করেন এবং করুণাকরণ পাহাড়িরা চৌধুরী উপাধি নিয়ে সেবার কাজে নিয়ােজিত থাকেন।

জগন্নাথদেবের সেদিনের সেই মাটির মন্দির আজ পাকা। কিন্তু সেদিনের নিয়ম মেনে আজও মগ্নীনারায়ণের পরিবারের লােকজনেরা ভােগ রান্না করে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার কাছে নিবেদন করেন।

করুণাকরণের পরিবারের লােকজনেরা আজও জগন্নাথদেবের সেবাদাতা হিসেবে নিযুক্ত। প্রতি বছর পুরীর রীতি মেনেই রথের দিন তিনটি পৃথক রথে চড়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা মাসির বাড়িতে যাত্রা করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পৃথক তিনটি ৩০ ফুটের রথ গড়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা মাসির বড়িতে যাত্রা করতেন এবং রথের শেষে তা ভেঙে ফেলা হত।

প্রতি বছর এইভাবে রথের ভাঙা-গড়া যেমন ব্যয়বহুল হত, তেমনই সৌন্দর্যও হ্রাস পেত। তাই গতবছর থেকে স্থায়ীভাবে রথ গড়ে যাত্রার ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরেও সেই রথে চড়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা যাবেন মাসির বাড়ি। তাই একমাস আগে থেকে পুরীর রথের মূখ্য নির্মাতার বড়ছেলে অভিনন্দন মহারানার নেতৃত্বে চলছে ডেমুরিযার রথের সাজসজ্জা।

উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরি। প্রতি বছর প্রায় ২-৩ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এখানকার এই রথে। ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর করতে তৎপর কর্তৃপক্ষ।

রথযাত্রা কমিটির সম্পাদক তমালত রু দাস মহাপাত্র জানান, ‘আমাদের প্রায় দশটি জোনে সিসিটিভি থাকে এবং প্রায় শতাধিক পুলিশ ও ভলেন্টিয়ার রথের মেলায় থাকে। প্রায় দশ থেকে এগারাে দিন ধরে চলে মেলা। রথেরদিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিন থাকে মনােজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।