• facebook
  • twitter
Tuesday, 15 July, 2025

বুদ্ধপূর্ণিমা: করুণা, জ্ঞান আর শান্তির উৎসব

ভারতীয় সংস্কৃতিতে পূর্ণিমা নিছক কালচক্র গণনার ক্রম মাত্র নয় বরঞ্চ, আত্মচিন্তন, সাধনা ও চিত্ত-বিশুদ্ধির মত বিশিষ্ট ক্ষণ বা মুহূর্তস্বরূপ।

ভারতীয় সংস্কৃতিতে পূর্ণিমা নিছক কালচক্র গণনার ক্রম মাত্র নয় বরঞ্চ, আত্মচিন্তন, সাধনা ও চিত্ত-বিশুদ্ধির মত বিশিষ্ট ক্ষণ বা মুহূর্তস্বরূপ। মাঘ, ফাল্গুন এবং চৈত্র পূর্ণিমার ক্রমানুসারে বৈশাখী পূর্ণিমার (পালি : বেসাখ পুন্নিম) আগমন হয় যা সূর্যের উত্তরায়ণে গমনের পর চতুর্থ পূর্ণিমা রূপে খ্যাত। এই বিশেষ দিনটি সাধকের জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে নির্দিষ্ট নয় – ব্যক্তিবিশেষের আন্তরিক জাগরণ আর উৎকর্ষ অর্জনের প্রতীক স্বরূপ হয়ে ওঠে। এই হল সেই পুণ্য তিথি যে বিশেষ তিথিতে গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি মহত্ত্বপূর্ণ ঘটনা- জন্ম, বোধি প্রাপ্তি ও মহাপরিনির্বাণ সংঘটিত হয়েছিল।

এই ঘটনাত্রয় স্মরণ করেই এই পূর্ণিমা সমগ্র বিশ্বে বুদ্ধ পূর্ণিমা রূপে পালন করা হয়। বৌদ্ধ পরম্পরায় এই তিথি এক বিশেষ উপোসথ দিবস রূপে প্রতিষ্ঠিত – যাকে বেসাখ উপোসথ অথবা বুদ্ধদিবস বলা হয়। এই বিশেষ পার্বণে চন্দ্রমার পরিপূর্ণতার মতোই সাধক চিত্তও আত্মিক পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্যে উন্মুখ হয়ে ওঠার জন্য সংকল্পবদ্ধ হওয়ার অবসর লাভ করে।

এই ‘সংকল্প’ এক এমন ‘সংকল্প’ যা সাধক চিত্তকে আত্মউন্মোচনসহ সনাতন মার্গে অগ্রসর করে। বুদ্ধপূর্ণিমা সেই পুণ্য অবসর যা শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণের মধ্যে সীমায়িত নয় বরঞ্চ সেই বোধির স্মৃতিকে উজাগর করে তোলার একটি অনুষ্ঠান যার মধ্যে সমস্ত প্রাণীর কল্যাণ ও নির্বাণের মার্গ নিহিত আছে। বৌদ্ধ কালগণনা অনুসারে বৈশাখী পূর্ণিমা আবার বৌদ্ধ নববর্ষের সূচনা রূপে স্বীকৃত।

বুদ্ধ এবং পূর্ণিমা, অর্থ ও তার প্রতীকী একাত্মতা।

‘বুদ্ধ’ শব্দ সংস্কৃত ও পালিতে বুধ্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন যার অর্থ হল ‘জাগরণ’ ‘জ্ঞান অর্জন’ বা ‘বোধিপ্রাপ্তি’। এইভাবে ‘বুদ্ধ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল— যে ব্যক্তি অজ্ঞানরূপী নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়েছেন বা যিনি সংসার সম্পর্কে যথাযথ বা সম্যক জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন। বৌদ্ধ পরম্পরায় বুদ্ধ তিনি, যিনি স্বীয় পুরুষার্থ ও ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে সম্যক সম্বোধি (পূর্ণ জ্ঞান) প্রাপ্ত এবং লোক কল্যাণ ভাবনার দ্বারা অপরকেও মুক্তি মার্গ প্রদর্শনে সক্ষম।

দ্বিতীয়ত যেদিন চন্দ্রমা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় সেই দিনটি পূর্ণিমা রূপে স্বীকৃত যার সাধারণ অর্থ হল ‘পূর্ণ চন্দ্রের দিন’। পূর্ণিমা শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ ও লোকসমাজে তথা জগতে যা ‘পূর্ণিমা’ নামে বিখ্যাত। এইভাবে বুদ্ধপূর্ণিমা শুধুমাত্র পুণ্য তিথি নয়, এই তিথি সুগভীর আধ্যাত্মিকতার প্রতীক স্বরূপ। এই দিন বাহ্যতঃ চন্দ্রমা যেমন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় সেইরকম মানুষের অন্তর্জগৎ বোধির আলোকে আলোকিত হয়ে ওঠে।

এই দিন স্মরণ করা হয় যে বুদ্ধত্ব কেবলমাত্র ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, ব্যাক্তি চেতনার অজ্ঞানরূপ অন্ধকার নিরসনের দ্বারা জ্ঞান, করুনা ও সমত্বের স্ফুরণ ও বিকরণের হেতু। যেভাবে চন্দ্রমা তার পূর্ণরূপে সমস্ত আকাশকে আলোকিত করে সেভাবে আমরাও সাধনা সংকল্প আর আত্ম অন্বেষণের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে পূর্ণতা, প্রশান্তি আর ঈপ্সিত প্রজ্ঞার অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য বলপ্রাপ্ত হই।

বুদ্ধের জীবনী: এক সংক্ষিপ্ত পরিচয়

গৌতম বুদ্ধের জন্ম ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লুম্বিনীতে (বর্তমান নেপাল) হয়েছিল। তাঁর মূল নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। তিনি শাক্য বংশের রাজা শুদ্ধোদন ও রানী মহামায়া দেবীর পুত্র। আশৈশব সিদ্ধার্থের প্রকৃতি ছিল গম্ভীর, বিচারশীল এবং বৈরাগ্যপ্রবণ। একদিন নগর ভ্রমণকালে সিদ্ধার্থ যথাক্রমে এক বৃদ্ধ, এক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, একটি মৃতদেহ এবং এক সন্ন্যাসীর দর্শন পান। এই চারটি দৃশ্য (চতুর্নিমিত্ত) তাঁর অন্তঃকরণে গভীর প্রভাব রেখে যায়। সংসারের অসারতা ও ক্ষণভঙ্গুরতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা হয়। পরিনামস্বরূপ ২৯ বছর বয়সে সাংসারিক জীবন ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে গৃহ ত্যাগ করেন। এই মহান ঘটনা বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে মহাভিনিষ্ক্রমণ (পালি মহাভিনিক্খমন) রূপে সমাদৃত।

অতঃপর সিদ্ধার্থ ছ’বছরব্যাপী কঠোর তপশ্চর্যা ও ধ্যান সাধনা করেন। কিন্তু অনুভব করেন যে এইরকম কঠোর সংযম ও কঠোর তপশ্চর্যা মুক্তি মার্গের পথে অন্তরায়। তখন বুদ্ধগয়ায় (বর্তমান বিহার রাজ্যে) অশ্বত্থ বৃক্ষের (মতান্তরে বটবৃক্ষ) নিচে ধ্যান নিমগ্ন হন এবং ৩৫ বৎসর বয়সে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ অর্থাৎ জ্ঞানী পুরুষ রূপে স্বীকৃত হন। বোধিজ্ঞান প্রাপ্তির পর সারনাথে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশে) পূর্বতন পাঁচজন সহচর যাঁরা পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষু রূপে পরবর্তীকালে প্রসিদ্ধ হন তাঁদের কাছে প্রথম উপদেশ প্রদান করেন। এই উপদেশবাণী ধর্মচক্রপ্রবর্তন (পালি : ধম্মচক্কপ্পবত্তন) রূপে খ্যাত যার মাধ্যমে চতুরার্যসত্য ও আর্যঅষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁর শিক্ষার আধার ‘ধম্ম’ (সং ধর্ম) রূপে স্বীকৃত।ভগবান বুদ্ধ আনুমানিক পঁয়তাল্লিশ বর্ষব্যাপী ভারত ভুমির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিভ্রমণ করে স্বীয় ধর্ম প্রচার করেন। আশি বছর বয়সে কুশীনগরে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশে) অন্তিম উপদেশ প্রদান করার পরে মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন।

ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা সমূহ : চতুরার্যসত্য এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ

ভগবান বুদ্ধ যে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন তা শুধুমাত্র তাঁর আত্মকল্যাণের মধ্যে সীমিত ছিল না; সর্বজীবের কল্যাণার্থে বা লোককল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিল। ভগবান বুদ্ধ স্বীয় অনুভূত জ্ঞানের ভিত্তিতে যে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তার মধ্যে চতুরার্যসত্য ও আর্যঅষ্টাঙ্গিক মার্গ ছিল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত চতুরার্যসত্যের মধ্যে প্রথমটি হল দুঃখ। দুঃখ কী? জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু, প্রিয়বিয়োগ এবং অপ্রিয়সংযোগ— সংক্ষেপে আমাদের যে অস্তিত্ব তাই দুঃখদায়ক। এই দুঃখের কারণ হলো দ্বিতীয় আর্যসত্য যা হলো তৃষ্ণা যা নিরন্তর কাম-প্রবৃত্তি ও বৈষয়িক আসক্তির সমন্বয়। তৃতীয়টি হল এই তৃষ্ণা থেকে মুক্তির উপায়— যা নির্বাণ রূপে অভিব্যক্ত। চতুর্থ সত্য হলো এই মুক্তি অর্জনের জন্য যে ব্যবহারিক মার্গ তার অনুসরণ ও অনুশীলন আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ রূপে প্রসিদ্ধ। আর্যঅষ্টাঙ্গিক মার্গ গঠিত হয়েছে অষ্ট অঙ্গের সমবায়— সৎ দৃষ্টি, সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য, সৎ কর্ম, সৎ আজীব, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সৎ সমাধি। এই শিক্ষার সারমর্ম হল জীবনে কোনো ব্যক্তি ইন্দ্রিয় ভোগে লিপ্ত না হয়ে বা সাধ্যাতিরিক্ত কিছু সাধনেও প্রণোদিত না হয়ে মধ্যম মার্গ অনুসরণ করবেন। সংযম, অপ্রমাদ‌, করুণা ও আত্মিক প্রগতির পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। এই মার্গ অনুসরণ ব্যক্তিবিশেষকে দুঃখের নিবৃত্তি ও চিত্তবিশুদ্ধির পথে নিয়ে যায়। এই মার্গ ইন্দ্রিয়সুখে লিপ্ত হতে শেখায় না বা কঠোর তপশ্চর্যার শিক্ষা দেয় না বরঞ্চ জীবনে সংযম, যা জাগ্রত ও মৈত্রী ভাবাপন্ন হওয়ার সমন্বয়ে সাধনার এক ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়।

বুদ্ধ পূর্ণিমার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মহত্ত্ব

বুদ্ধপূর্ণিমা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণ মাত্র নয়, এই উৎসব মানবিক চেতনা, করুণা ও আত্মবোধের এক দিব্য উৎসব। থেরবাদ বৌদ্ধ পরম্পরা অনুসারে বুদ্ধগণের জীবনের তিনটি মুখ্য ঘটনা— জন্মগ্রহণ, বোধিপ্রাপ্তি ও মহাপরিনির্বাণ এই বৈশাখী পূর্ণিমাতেই সংঘটিত হয়, তাই এই তিথি শুধুমাত্র ত্রিবিধ পুণ্য স্মৃতির প্রতীক নয়, নতুন ধর্মে সংকল্প করে আত্মশুদ্ধি আর সাধনা পুনরারম্ভের সূচক। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, বুদ্ধপূর্ণিমা এক দিব্য মুহূর্তের সাক্ষী যে মুহূর্তে বোধিসত্ত্বের বুদ্ধ হয়ে ওঠার যাত্রা পরিপূর্ণ হয়। এই সেই বিশেষ ক্ষণ, যে ক্ষণে অজ্ঞানের অন্ধকার বিদূরিত হয়ে আত্মবোধের উন্মোচন সম্ভব হয়। বৌদ্ধ পরম্পরা অনুসারে, বুদ্ধের বোধি দ্বারা নিছক ব্যক্তিগত মুক্তি নয়, সমগ্র প্রাণীকুলের দুঃখ নিবৃত্তির মার্গদর্শনও প্রাপ্তি হয়েছিল। ভগবান বুদ্ধ তাঁর উপদেশের দ্বারা যথাযথ শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা, চার ব্রহ্মবিহার ভাবনা, যথা— মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা প্রভৃতিকে নিয়ে মানব জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর প্রস্তুত করেছেন।

এই বিশেষ দিনে বুদ্ধের এইসব গুণাবলী ও শিক্ষাসমূহ স্মরণের অবকাশে সাধক আত্মনিরীক্ষণ ধ্যান, উপবাস ও পুণ্যকর্ম প্রয়াসের অভ্যাস করেন। এমনকি এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যেমন চন্দ্রমা নিজে পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করে রাত্রিকে প্রকাশ করে, অনুরূপভাবে মানুষ তার সাধনা, সংযম ও সংকল্পের দ্বারা নিজের জীবনকে পূর্ণ সার্থক করে তুলতে পারে। এই দিন আত্মজাগরণের আহ্বান স্বরূপ— অন্তরের অন্ধকারকে দূর করার দিন, তৃষ্ণা ও মোহ থেকে মুক্তির দিন, শান্তি ও স্থিতির তুলনাত্মক বিচার সহ অগ্রসর হওয়ার দিন। ধ্যান, প্রার্থনা মৌনব্রত ও সেবা- এই সব পালনের মাধ্যমে এই দিন সাধকের চিত্তশুদ্ধির দ্বার উন্মুক্ত করার দিন। সাংস্কৃতিক দিক থেকে দেখা যায় যে ভারতবর্ষে ও বিশ্বের বহু দেশে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনটি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভব্যতার সঙ্গে পালন করা হয়।

রাষ্ট্রসঙ্ঘ ১৯৯৯ সালে ১৩ ডিসেম্বর মহাসভার ৫৪তম সনদে বুদ্ধ পূর্ণিমাকে আনুষ্ঠানিকরূপে ‘আন্তঃরাষ্ট্রীয় বেসাখ দিবস’ রূপে মান্যতা প্রদান করেছে। এই মান্যতা প্রদান থেকে সুদৃঢ় রূপে প্রমাণিত হয় যে বুদ্ধের শিক্ষাসমূহ আজও বৈশ্বিক শান্তি, মানবিক মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক চেতনা বিকাশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যখন আধুনিক সমাজ হিংসা, দ্বেষ ভোগবাদ ও মানবিক অস্থিরতার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে তখন ভগবান বুদ্ধের বাণী—
ন হি বেরেন বেরানি সম্মন্তী’ধ কুদাচনং। অবেরেন চ সম্মন্তী এস’ধম্মো সনন্তনো।। ধম্মপদ, গাথা- ৫, (যমকবগ্গ)
বৈরিতার দ্বারা বৈরিতার উপশম হয় না, অবৈরিতার (অর্থাৎ অহিংসা ও ক্ষমা) দ্বারাই বৈরিতার উপশম হয়, এ হল আবহমানকালের ধর্ম যা এক আলোকবর্তিকার মত সম্পূর্ণ মানব সমাজকে সত্য, সংবেদনা আর সংযমের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা দান করে।

উপসংহার

ভারতীয় জীবনে পর্ব ও উৎসবের স্থান অতি বিশিষ্ট যা কেবল ধার্মিক ভাবনাপ্রসূত নয়। সামাজিক চেতনা, নৈতিক শিক্ষা আর আধ্যাত্মিক সচেতনতা এর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এই সন্দর্ভে বুদ্ধ পূর্ণিমাকে শুধুমাত্র অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিরূপে নয়, বর্তমান জীবনের নৈতিকতা করুণা আর সচেতনতাকে পুনর্জাগ্রত করার দিব্যবার্তা রূপে দেখা উচিত। যেদিন এই ঘটনা অন্তরে হিল্লোল তুলবে, জীবনের ক্ষণভঙ্গুরতা উপলব্ধ হবে, আর আত্মিক পূর্ণতা অর্জনের দিশায় অগ্রসর হওয়ার আশ্বাস প্রদান করবে, সেদিন এই উৎসব পালন সার্থক হবে।

গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং কখনো এরকম দাবি করেননি যে তিনি একমাত্র বুদ্ধ। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন পূর্বাপর বহু বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এই ‘বুদ্ধ’ শব্দটি নিছক এক পুরুষ বা ব্যক্তিত্ব কে নির্দেশ করে না, বরং, এটি হল বোধিপ্রাপ্ত মহান ব্যক্তিবর্গের সার্বভৌমিক উপাধি, যা যুগে যুগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বুদ্ধ যে ধর্মের উপদেশ দিয়েছেন তা শুধুমাত্র ব্যক্তি বিশেষ, জাতিবর্গ বা সময়ের মধ্যে সীমায়িত বা একটি নির্দিষ্ট জীবনচক্রের মধ্যে আবদ্ধ নয়- এই ধর্ম আবহমানকালের ধর্ম— “এস ধম্ম সনন্তনো” বুদ্ধপূর্ণিমা যেন এই সনাতন ধর্মের পরিপুষ্টির দ্যোতক যা করুণা, সত্য, অহিংসা ও আত্মজ্ঞানের আধারস্বরূপ বিদ্যমান।

এই পর্বোৎসব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রত্যেক ব্যক্তির অন্তরে বুদ্ধত্বলাভের সম্ভাবনা সুপ্তভাবে আছে যা ধ্যান, মৈত্রী, সংযম আর ধার্মিক আচরণের দ্বারা পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে সক্ষম।

বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।
ধম্মং সরণং গচ্ছামি ।
সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি।