শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে তৃতীয় মোদী সরকারের দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হল। বাজেট পেশের পর প্রথমে শেয়ার বাজার কিছুটা ওঠানামা করলেও পরে উর্দ্ধমুখী হয়। ফলে বোঝাই যায় শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে আশঙ্কার মেঘ কেটেছে। ইতিমধ্যে দেশের শিল্পপতিরা তাঁদের বিভিন্ন মতামত ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অন্যান্য শিল্পপতিদের মতো রিয়েল এস্টেট সংস্থা মার্লিন গ্রুপের কর্মকর্তারা তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মার্লিন গ্রুপের চেয়ারম্যান সুশীল মোহতা নির্মলার এবারের বাজেট নিয়ে অনেকটাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি এই বাজেটকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ক্ষেত্রে উৎসাহব্যঞ্জক বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বাজেটে আরও সংস্কারের প্রয়োজন ছিল বলে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মার্লিন গ্রুপের এই কর্ণধার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের প্রশংসা করে বলেছেন, তাঁর উপস্থাপিত কেন্দ্রীয় বাজেট স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেছে। যেখানে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে এমন বেশ কয়েকটি নীতি নেওয়া হয়েছে। তিনি আয়কর ছাড়ের ঊর্দ্ধসীমা নিয়েও বাজেটের প্রশংসা করেছেন। সুশীল মোহতা বলেছেন, আয়কর ছাড়ের ঊর্দ্ধসীমা বাড়িয়ে ১২লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ভাড়ার উপর উচ্চতর টিডিএস-এর মাত্রা ২ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। যা মানুষের নির্ভরযোগ্য আয় বৃদ্ধি করবে এবং মানুষের আবাসন কেনার চাহিদা বাড়িয়ে দেবে।
মার্লিনের এই কর্ণধার আরও বলেছেন যে, শহরের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হলে উন্নত নগর পরিকল্পনাকে আরও উৎসাহিত করবে। সেক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পরিকাঠামোর আরও সম্প্রসারণ সম্ভব হবে। পাশাপাশি উড়ান প্রকল্পের সম্প্রসারণের ফলেও অঞ্চলকে সংযোগ আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশাবাদী। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শহরে নতুন রিয়েল এস্টেটের বাজার উন্মুক্ত হবে। তবে মার্লিন কর্তা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পের গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি এক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারকে উচ্চ গৃহ ঋণে সুদের ক্ষেত্রে আরও ছাড়ের দাবি করেছেন। এব্যাপারে তিনি ৪৫ লক্ষ টাকার পরিবর্তে আবাসন ইউনিটের আকারের উপর ভিত্তি করে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন সংজ্ঞার সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। এই সংস্কারগুলি আবাসন সাশ্রয় ও বিনিয়োগের মাত্রাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারত বলে তিনি মনে করেন। যদিও বর্তমান বাজেটের ঘোষণাগুলি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদী। যা ক্রেতাদের বাড়ি ক্রয়ে আরও আগ্রহ বাড়াবে।
এদিকে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) ২০২৫-২৬-এর কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে একটি লাইভ প্রোগ্রামের আয়োজন করে। আইসিসি-র সভাপতি অভ্যুদয় জিন্দাল (ভার্চুয়ালি), ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সহ-সভাপতি পার্থিব বিক্রম নিওটিয়া, আইটিসি লিমিটেডের হেড-ট্যাক্সেশন (অবসরপ্রাপ্ত) পল্লব গুপ্ত, নিউ এরিনা হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেডের অধিকর্তা গৌরব জালান ছাড়াও আরও অন্যান্য বিশিষ্টরা বাজেট সম্পর্কে তাঁদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।
সামগ্রিক বাজেট অধিবেশন নিয়ে অভ্যুদয় জিন্দাল বলেন, ‘২০২৫ সালের বাজেট কেন্দ্র সরকারের একটি অগ্রগামী চিন্তাধারার আর্থিক নীলনকশা। যা বিকাশিত ভারত ২০৪৭-এর জন্য একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি সহ টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সমাজকল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটি কর সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং এমএসএমই-গুলির জন্য নিবেদিত সহায়তার উপর জোর দিয়েছে। যা কেবল ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনাকেই শক্তিশালী করবে না, কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে। এই বাজেটের একটি প্রধান আকর্ষণ হল স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খেলনা শিল্প ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ব্যয় বৃদ্ধি করে। এই কৌশলগত বরাদ্দ নাগরিকদের জীবনে প্রত্যক্ষ ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উপরন্তু, এমএসএমই-গুলির জন্য বর্ধিত ক্রেডিট গ্যারান্টি, ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য কাস্টমাইজড ক্রেডিট কার্ড প্রবর্তন এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে ১০,০০০ নতুন আসন যুক্ত করার মতো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী ভিত হিসাবে কাজ করে। বাজেটে উড়ান প্রকল্প এবং জাহাজ নির্মাণের মতো উদ্যোগ সহ পরিকাঠামো ব্যয়কেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। সামগ্রিকভাবে, এটি একটি ব্যাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক পরিকল্পনা, যা সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন অংশীদারীত্ব, ব্যবসা ও পরিবেশের চাহিদা পূরণ করে। এই বাজেট ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়িত করা এবং একটি বিকাশিত ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি সঠিক ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ।’
ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ডিরেক্টর জেনারেল ড. রাজীব সিং বলেন, ‘এই বাজেট অত্যন্ত বাস্তববাদী, বিশ্বাস ভিত্তিক, ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু টেকসই প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ইত্যাদির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অত্যন্ত ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা। প্রধান কারণ হিসাবে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ, কৃষি, লজিস্টিক সহ উৎপাদন চক্রকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ খরচ, নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, এই বাজেট অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত দেশের ভিত্তি স্থাপন করবে।’
এদিকে মার্লিন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সাকেত মোহতা নির্মলার বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য ক্রেডিট কার্ড সুবিধা ও স্টার্টআপগুলির জন্য পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি অনুযোগ করেন, ‘আমরা রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রের জন্য শিল্পের মর্যাদা আশা করেছিলাম। যা আরও বেশি বিনিয়োগকে সহজতর করত। তবে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য প্রদেয় আয়কর ছাড়, ভাড়ার উপর টিডিএসের সীমা বৃদ্ধি, নিষ্পত্তিযোগ্য আয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে। এর ফলে মানুষের আবাসন চাহিদাও বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়া সামগ্রিক খরচ রিয়েল এস্টেট ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটাবে।’