আগামী ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি গড় বৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিল বেসরকারি ব্যাংকিং সংস্থা অ্যাক্সিস। সম্প্রতি এই ব্যাঙ্কের ‘আউটলুক ২০২৬’ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কাঠামোগত সংস্কার, নিয়মকানুনে শিথিলতা, ঋণে সুদের হার কম থাকা এবং পুঁজি বিনিয়োগের গতি বাড়ার জেরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের বৃদ্ধির গতি আরও বাড়তে চলেছে। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কের গবেষণা বিভাগ মনে করছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রসঙ্গত, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ নীলকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অর্থনীতিতে এখনও যথেষ্ট শিথিলতা রয়েছে। সেই কারণে উচ্চ হারে বৃদ্ধি হলেও তা মূল্যবৃদ্ধির উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে না। বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধিশীল বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত আগামী দিনেও শীর্ষে থাকবে বলে মূল্যায়ন এই ব্যাঙ্কের।
Advertisement
অ্যাক্সিসের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীরে ধীরে চাপ কমছে সরকারের অর্থনীতিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সহায়ক মুদ্রানীতি অর্থনীতিকে বাড়তি গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি অৰ্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সরলীকরণ মাঝারি মেয়াদে বৃদ্ধির ভিত আরও মজবুত করবে। ব্যাঙ্কের মতে, শিল্প সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থার উন্নতি, মূলধনের খরচ কম থাকা এবং উৎপাদন ক্ষমতার উচ্চ ব্যবহার নতুন পুঁজি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করবে, এই বিনোয়োগের প্রয়োজন ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে প্রভাব পড়বে।
Advertisement
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উৎপাদন দক্ষতায় ধারাবাহিক উন্নতি এবং পুঁজি গঠনের পুনরুজ্জীবন ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির হারকে প্রায় ৭ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদি গতি ছাড়াও অর্থনীতির ভিত মজবুতই থাকবে।
মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মূল্যায়ন, ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় চার শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে। যদিও খাদ্যপণ্যের দামে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি হতে পারে। তবু অর্থনীতির ভেতরের শিথিলতার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে না, বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি হার প্রায় তিন শতাংশের আশপাশে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল রয়েছে, যা বাজারে এখনও চাহিদার সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়।
মুদ্রানীতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদের হার সম্ভবত তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। তবে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে এবং নীতির কার্যকারিতা জোরদার করতে অর্থের জোগান আরও বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র ও বিলের জোগান বাড়ালে সুদের হারের কাঠামো আরও স্থিতিশীল হতে পারে। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের অনুমান, ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণে সুদের হার প্রায় ছয় শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে।
এদিকে দেশের বৈদেশিক ভারসাম্য নিয়েও আশাবাদী ব্যাঙ্কটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে টাকার কিছুটা দুর্বলতা বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এনে দিয়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি সামান্য বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হলেও, তা মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যেই থাকবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে যে বড় অঙ্কের পুঁজির বহির্গমন লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তা আগামী দিনে অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মূল্যায়ন, নীতি সহায়তা, কাঠামোগত সংস্কার ও বিনিয়োগের জোরে ভারত আগামী অর্থবর্ষগুলিতে উচ্চ হারে বৃদ্ধি বজায় রাখবে। আর সেই পথচলায় মূল্যবৃদ্ধি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
Advertisement



