• facebook
  • twitter
Tuesday, 22 April, 2025

২০২৫ অর্থবর্ষে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির পথে ভারত

বিশ্ব পণ্যদ্রব্য রপ্তানিতে ভারতের অংশও ১.৬৬ শতাংশ থেকে ১.৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সেই বিচারে আমাদের দেশ ২০ তম থেকে ১৭ তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের মতে, গত চার বছরে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তরের সময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথমবার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি দিয়ে আর্থিক বছর শেষ করব। তবে, অভ্যন্তরীণ ঘাটতি এবং উচ্চ চাহিদার কারণে পেট্রোলিয়াম পণ্য, কোকিং কয়লা, ডাল এবং ভোজ্য তেলের মতো কিছু উপকরণের আমদানি অনিবার্য। অভ্যন্তরীণ খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানির বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য একটি ভালো লক্ষণ।’

মন্ত্রীর মতে, এই ক্ষেত্রগুলিতে উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। বিশ্ব বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বিভিন্ন বিভাগ জুড়ে বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের মোট রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৭৭৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যেটি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৪৬৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায়, ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি।

গোয়েলের মতে, বিশ্ব পণ্যদ্রব্য রপ্তানিতে ভারতের অংশও ১.৬৬ শতাংশ থেকে ১.৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সেই বিচারে আমাদের দেশ ২০ তম থেকে ১৭ তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং ত্বরান্বিত করতে সরকার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত করায় এই কৃতিত্ব অর্জন করা গেছে।

কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫-২৬-এ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাণিজ্য, এমএসএমই এবং অর্থমন্ত্রক দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত সেক্টরাল এবং আগামী লক্ষ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত একটি রপ্তানি প্রচার মিশন স্থাপনের ঘোষণা করেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি রপ্তানি ঋণের সহজ অ্যাক্সেস দেবে, আন্তঃসীমান্ত ফ্যাক্টরিংকে সমর্থন করবে এবং বিদেশি বাজারে নন-প্রচলিত ট্যারিফ ব্যবস্থার মোকাবেলায় এমএসএমইগুলিকে সহায়তা করবে।

এদিকে ভারতের ওষুধ রপ্তানি ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুন হয়ে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে মূল্যের দিক থেকে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যদিও ভারত বিশ্বব্যাপী জেনেরিক ওষুধের বৃহত্তম সরবরাহকারী হলেও, রপ্তানি মূল্যের দিক থেকে আমাদের দেশ ১১তম স্থানে রয়েছে।
বেইন অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদন, ‘হিলিং দ্য ওয়ার্ল্ড: রোডম্যাপ ফর মেকিং ইন্ডিয়া আ গ্লোবাল ফার্মা এক্সপোর্টস হাব’ অনুসারে, ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে সেরা পাঁচটি দেশের মধ্যে নিজের স্থান নিশ্চিত করতে পারে। ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্স (আইপিএ), অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএমএ) এবং ফার্মেক্সিলের সহযোগিতায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে সঠিক স্থান সুরক্ষিত করতে ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির জন্য ভলিউম-ভিত্তিক থেকে মূল্য-ভিত্তিক প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তর অপরিহার্য। বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার শ্রীরাম শ্রীনিবাসন বলেন, ‘বিশেষ জেনেরিক, বায়োসিমিলার এবং অভিনব পণ্যের দিকে পরিবর্তন-সহ নানা উদ্ভাবন, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি হবে।’

গুণমান, নিয়ন্ত্রণ, বিশ্ব বাজারে প্রবেশাধিকার, দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা উদ্ভাবনের উপর সঠিক মনোযোগ দিয়ে ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ পাঁচটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে স্থান পেতে পারে। ইন্ডিয়ান ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএমএ) জাতীয় সভাপতি বীরাঞ্চি শাহ বলেন, ‘ভারত ওষুধ রপ্তানিতে অগ্রণী হতে পারে, তবে কৌশলগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাল্ক ড্রাগ পার্কগুলি এপিআই রপ্তানি বৃদ্ধির মূল উৎস। ভারতকে তাই জ্বালানি সরবরাহ, বর্জ্য পরিশোধন এবং সড়ক সংযোগ উন্নত করার পাশাপাশি, এপিআই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।’

ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের (আইপিএ) সেক্রেটারি জেনারেল সুদর্শন জৈন বলেছেন, ‘ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে এবং এটি অর্জনের জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে অবশ্যই সমস্ত ফ্রন্টে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বর্তমানে মূল্যের দিক থেকে ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির ৬ শতাংশ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এপিআই, বায়োসিমিলার এবং জেনেরিক ফর্মুলেশনের মতো মূল শিল্প বিভাগগুলি, ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশ বেশ কয়েকটি মূল পণ্য বিভাগের জন্য রপ্তানিতে তীব্র বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে। শীর্ষ ১০টি বিশ্ব সরবরাহকারীদের মধ্যে বর্তমানে ভারতের উল্লখযোগ্য অবস্থান। ইলেকট্রনিক্স এবং সেমিকন্ডাক্টরের উপরও দেশের কৌশলগত ফোকাস রয়েছে।