• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

তুলো আমদানিতে আপাতত করছাড় ভারতের

অর্থ মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ১৯ আগস্ট, মঙ্গলবার থেকে এই শুল্কছাড় কার্যকর হবে এবং তা বহাল থাকবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

ভারতে তুলো আমদানির উপর আপাতত শুল্ক নেওয়া হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন দেশের তুলো ব্যবসায়ী, বস্ত্র শিল্পের উদ্যোক্তারা। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ১৯ আগস্ট, মঙ্গলবার থেকে এই শুল্কছাড় কার্যকর হবে এবং তা বহাল থাকবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এর আগে তুলো আমদানিতে ১১ শতাংশ শুল্ক ধার্য ছিল। তবে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং রপ্তানি বাজারে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু তুলো নয়, কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো ও উন্নয়ন খাতে যে কর ধার্য ছিল, সেটিও আপাতত মকুব করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত  বস্ত্র শিল্পের কারবারিদের আর্থিক সুরাহা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই করছাড় সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ভারতীয় পণ্যের উপর দু’দফায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানির গতি হঠাৎই হোঁচট খেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বস্ত্র, চর্ম, অলঙ্কার সহ একাধিক শিল্পখাতে, যেখানে বিপুল কর্মসংস্থান রয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় শিল্পকে কিছুটা স্বস্তি দিতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি যেমন ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সুরাহা আনবে, তেমনঅ দেশীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার ব্যবসায়ীদের ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি দেশীয় পণ্যের প্রতি আস্থা রাখার কথা বলছেন এবং স্বদেশি শিল্পকে মজবুত করার উপর জোর দিচ্ছেন। এই শুল্কছাড়ও তারই একটি অংশ বলে মনে করছেন অনেকে।

সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যদি ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকায় সত্যিই ২৫ শতাংশ এবং পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়, তাহলে দেশীয় ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো তীব্র চাপে পড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে উৎপাদনে, কর্মসংস্থানে এবং রপ্তানিতে। সেই সম্ভাব্য সংকটের আগেই সরকার কিছুটা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তুলো আমদানিতে শুল্কছাড় কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি কৃষক, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা – যে সরকার তাঁদের পাশে আছে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের চাপ মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ করছে।

এই করছাড়ের ফলে তুলোর দাম কিছুটা কমতে পারে, যা পাট, সুতির কাপড় ও অন্যান্য বস্ত্রশিল্পে কাঁচামাল সরবরাহে স্বস্তি আনবে। ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে আরও সক্ষম হবেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, এই শুল্কছাড় দেশের কৃষি ও শিল্প – দুই ক্ষেত্রেই আশার আলো হয়ে উঠেছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণের উপর। আপাতত, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের তুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে এক স্বস্তির সময় বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement