এই ডিজিটাল যুগে উপভোক্তা সুরক্ষা জোরদার করতে এবং ই-কমার্স ও অনলাইন পরিষেবাগুলিতে অপরাধমূলক কাজকর্ম রোধ করতে- সরকার কৌশলগতভাবে এই প্রচেষ্টার সূত্রপাত করেছে। কেন্দ্রীয় গ্রাহক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (সিসিপিএ) ২০২৩ সালে, ডার্ক প্যাটার্ন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল। এর ভিত্তিতে ১৩টি ডার্ক প্যাটার্ন নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যেগুলি হল- ফলস আর্জেন্সি, বাস্কেট স্নিকিং, কনফার্ম শেমিং, ফোর্সড অ্যাকশন, সাবস্ক্রিপশন ট্র্যাপ, ইন্টারফেস ইন্টারফিয়ারেন্স, বেইট অ্যান্ড সুইচ, ড্রিপ প্রাইসিং, ডিসগাইজড অ্যাডভার্টাইজমেন্টস এবং নাগিং, ট্রিক ওয়ার্ডিং, সাস বিলিং এবং নকল মালওয়্যার।
সিসিপিএ এর আগে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এবং বুক মাই শো-কে উপভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯-এর অধীনে, প্রতারণামূলক ডিজাইন ও ডার্ক প্যাটার্নের আকারে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন তথা অন্যায্য বাণিজ্য করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছিল।
সিসিপিএ-র নজরে আসে যে, বুক মাই শো টিকিট কনফার্ম করার পর গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত চার্জ চাপিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই প্রি-টিকিটের আকারে ‘বুক আ স্মাইল’-এর জন্য ডোনেশন হিসাবে টিকিট প্রতি ১টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ করা হয়েছিল। এটি ডার্ক প্যাটার্ন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা, ২০২৩-এর পরিশিষ্ট ১-এর ধারা (২)-এর অধীনে সংজ্ঞায়িত ‘বাস্কেট স্নিকিং’-এর আওতায় পড়ে।
সিসিপিএ-এর হস্তক্ষেপের পর বুক মাই শো ব্যবহারকারীদের, ‘বুক আ স্মাইল’-এর জন্য ডোনেট করতে চান কিনা, তা বেছে নেওয়ার বিকল্প দিয়ে ‘বাস্কেট স্নিকিং’-এর এই অভিযোগ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
ন্যাশনাল কনজিউমার হেল্পলাইনে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে, সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রোটেকশন অথরিটি, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স অ্যাপে ‘কনফার্ম শেমিং’ সম্পর্কিত অন্যায্য বাণিজ্য ও ডার্ক প্যাটার্নের জন্য ইন্টারগ্লোব অ্যাভিয়েশন লিমিটেড-কে (ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স) নোটিশ পাঠিয়েছে।
সিসিপিএর হস্তক্ষেপের পর, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স ‘না, আমি ভ্রমণে যোগ করব না’, অপশন যুক্ত করে সমস্যার সমাধান করেছে। আগে যে-শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলি হল, ‘না আমি ঝুঁকি নেব’, যা ‘কনফার্ম শেমিং’-এর সমতুল্য একটি ডার্ক প্যাটার্ন। অন্য একটি ক্ষেত্রে, বিমান সংস্থাটিকে ‘সিট নির্বাচন’ পৃষ্ঠায় ‘স্কিপ বটন’ অপশন যোগ করে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে।
সংস্থার ওয়েব চেক-ইন পেজ-এ একটি ব্যাপক পরিবর্তন করে নতুন নকশা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তদনুসারে, বিমান সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপের পরিবর্তন করে ‘স্কিপ বটন’-এর বাম দিকে একটি ‘নো ক্লেইম’ যুক্ত করেছে। এর ফলে গ্রাহক ‘পছন্দসই আসন নির্বাচন’ অপশনটি এড়িয়ে যেতে পারেন এবং নিজের বুকিং সম্পূর্ণ করতে পারেন।
বর্তমান নিয়মে, ভ্রমণের আগে ইন্ডিগো স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি আসন বরাদ্দ করবে। এই আইনী ব্যবস্থার অংশ হিসাবে, সিসিপিএ সংস্থার অংশীদারদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে এবং তাদের ডার্ক প্যাটার্ন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে যা, উপভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯-এর অধীনে অন্যায্য বাণিজ্য বিষয়টির অন্তর্গত।
সিসিপিএ ডার্ক প্যাটার্ন-এর তথ্যমূলক পোস্ট, ভিডিও এবং গল্পের মাধ্যমে তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে, তার উপভোক্তাদের সংখ্যা প্রসারিত করার দিকে সচেষ্ট হয়েছে। ডার্ক প্যাটার্ন সম্পর্কিত অভিযোগগুলি কার্যকরভাবে সমাধান করার জন্য তারা, জাতীয় গ্রাহক হেল্পলাইনে তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগ এখন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে ডার্ক অ্যাক্টিভিটি সনাক্ত করার উপায় এবং সংস্থানগুলির সাহায্যে, শীঘ্রই গ্রাহকদের সুরক্ষা বৃদ্ধিতে সক্রিয় হতে চলেছে।
গবেষণার অংশ হিসাবে, তিনটি অ্যাপ কোড করা হয়েছে; ‘জাগো গ্রাহক জাগো অ্যাপ’, ‘জাগৃতি অ্যাপ’ এবং ‘জাগৃতি ড্যাশবোর্ড’। এগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন, সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের অংশ। এটি রিয়েল-টাইমে কাজ করে এবং ন্যাশনাল সুপার কম্পিউটিং মিশন ফর এআই এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের অধীনে, ঐরাবত এআই সুপার কম্পিউটারে চলে। এই উদ্ভাবনী ব্যবস্থাটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে থাকা টেক্সট এবং নকশার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে এবং নির্ধারণ করে যে, সেগুলি উপভোক্তাদের প্রতি অনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা।
‘জাগো গ্রাহক জাগো অ্যাপ’ গ্রাহকের অনলাইন কার্যকলাপের সময় সমস্ত ইউআরএল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ই-কমার্স তথ্য সরবরাহ করে। যদিও দেখা গেছে ইউআরএল-ও বিপজ্জনক হতে পারে এবং সতর্কতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ‘জাগৃতি অ্যাপ’ ব্যবহারকারীদের ইউআরএলগুলি রিপোর্ট করার অপশন দেয়। যদি এক বা একাধিক ডার্ক প্যাটার্নের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং সেগুলি সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে রিপোর্ট করার সুযোগ আছে। এই রিপোর্ট করার ভিত্তিতে, সম্ভাব্য প্রতিকার এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সিসিপিএ-তে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়।
উপরন্তু, সিসিপিএ-কে ‘জাগৃতি ড্যাশবোর্ড’-এর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। পূর্বোক্ত ডার্ক প্যাটার্নগুলির উপস্থিতি সনাক্ত হওয়ামাত্র, ই-কমার্স ইউআরএলগুলি রিয়েল-টাইম রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে, অনলাইন উপভোক্তাদের। এই সমাধান সিসিপিএ-কে ডার্ক প্যাটার্নগুলি চিহ্নিত করতে, উপভোক্তাদের সমস্যা সমাধান ও ত্বরান্বিত করতে এবং তাদের স্বার্থরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।