এবছর ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি প্যানোরামা বিভাগে স্থান করে নিয়েছে তথ্যচিত্র উমা। এই ছবিটি ৫ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হবে শিশির মঞ্চে সন্ধ্যা ৬.৩০টায় এবং ৬ ডিসেম্বর দেখানো হবে নন্দন ৩ প্রক্ষাগৃহে, বিকেল ৫টায়। বিষয় ভাবনায় বরাবরই নতুনত্ব কিছু উপহার দিয়ে থাকেন মহিলা তথ্যচিত্রকার অবন্তী সিনহা। উমা নামক তাঁর এবারের তথ্যচিত্রটি বায়োগ্রাফিকাল। ছবির কেন্দ্রে ভাস্কর উমা সিদ্ধান্ত।
মহিলা ভাস্করের সংখ্যাটা তুলনামূলকভাবে বরাবরই অনেকটা কম। কিন্তু সেই হাতে গোনাদের মধ্যেই স্বমহিলায় উজ্জ্বল উমা সিদ্ধান্ত। সমকালীন ত্রিমাত্রিক রূপ রচনায় তাঁর অবদান আলাদা করে বলার মতো। আবার, ছবি আঁকা, প্রতিমা গড়াতেও তাঁর দক্ষতা তাৎপর্যপূর্ণ। হাতের গদ্যটিও চমৎকার। এহেন বহুমুখী এক শিল্পীকে নিয়েই, মধুছন্দা সেনের প্রযোজনায় এবং মায়া আর্ট স্পেস-এর নিবেদনে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন অবন্তী।
Advertisement
জানা যাচ্ছে, ১৯৩৩ সালের ১১ জানুয়ারি বরানগরে বনহুগলীতে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন উমা। তাঁর বাবা শচীন্দ্রনাথ রায় ও মা বিভাবতী দেবী উভয়েরই শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ ছিল। ছোট থেকেই খেলার ছলে মাটির পুতুল, মূর্তি প্রভৃতি গড়ায় মন ছিল উমার। তিনি প্রথম শিল্পকলার পাঠ নেন শিল্পী নন্দলাল বসুর ছাত্র ফণীভূষণ দাস-এর কাছে। স্কুলের পাঠ শেষ হতে বাবা-মা তাঁকে গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটে ভর্তি করে দেন। তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল মহিলা হওয়ার কারণেও কিন্তু ভর্তিকালে সমস্যায় পড়েছিলেন উমা।
Advertisement
অবন্তী জানাচ্ছেন, ভাস্কর্য নিয়ে পড়তে গিয়ে প্রথমে বাধার মুখে পড়েন উমা। পরীক্ষক মন্ডলী তাঁকে পেইন্টিং-এ ভর্তির পরামর্শ দেন। তাঁদের যুক্তি ছিল ভাস্কর্য গড়তে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন যা মহিলাদের দ্বারা সম্ভব নয়। কিন্তু এখানেই প্রথম দেওয়ালটা ভাঙলেন উমা। তিনি পাল্টা যুক্তি দিলেন গ্রামের বধূরা দূর থেকে বোঝা মাথায় বয়ে আনে, তাতেও যথেষ্ট মেহনত লাগে। যুক্তি শুনে পরীক্ষকরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভাস্কর্য বিভাগে ভর্তি করে নিতে রাজি হলেন এই শর্তে যে, কাজ ঠিকমতো করতে না পারলে তাঁকে পেইন্টিং-এ পাঠিয়ে দেবেন। বাকিটা তো ইতিহাস!
অবন্তী এর আগে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রযোজনায় ‘ইন সার্চ অফ পরভা ছৌ’ নামের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন এক বিরল ঘরানার ছৌ নাচের উপর। সিকিম সরকারের প্রযোজনায় ভূমচু তথ্যচিত্রটি তৈরি করেন বৌদ্ধ জল সংরক্ষণের আচারকে ঘিরে।ছবিটি ইতালির দুটি উল্লেখযোগ্য ফিল্ম উৎসবে প্রদর্শিত হয়। এছাড়া নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে কেন্দ্রে রেখে তৈরি করেছেন এনএফডিসি প্রযোজিত ওয়ার অ্যান্ড ওয়ারশিপ। তিনটি ছবিই দেশবিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে। পরভা এবং ওয়ার অ্যান্ড ওয়ারশিপ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় যথাক্রমে ২০২১ ও ২০২২ সালে। উমা তাঁর চতুর্থ তথ্যচিত্র।
Advertisement



