• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিকড় অনেক গভীরে: বিশ্বমোহন

ভারত সরকারের এই পদ্মশ্রী পুরস্কার আমাদের কাছে বিরাট এক সম্মান। যে-কোনও শিল্পীর কাছে এই সম্মাননা এক বিশাল বড় প্রাপ্তি।

পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে সুপরিচিত নাম। কাজ করেছেন বলিউডের একাধিক ছবিতে। গত মাসের শেষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি জয়পুর থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। সেই সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলেন অরুণাভ রাহারায়।

প্রশ্ন: আপনি মোহনবীণা বেছে নিলেন কেন?

Advertisement

বিশ্বমোহন: আমি মোহনবীণাকে বেছে নিইনি। আমি মোহনবীণা নিজে তৈরি করেছি। আসলে আমি এই বাদ্যযন্ত্রটি আবিষ্কার করেছি। কারণ এই যন্ত্রের মধ্যে আমি গায়কি, অঙ্গ-এর মতন সঙ্গীতশৈলী এবং তন্ত্রীবাদ্যের মতো যন্ত্রশৈলীর সমন্বয় ঘটিয়েছি। ঝালা, লয়কারীর সঙ্গে আমি সুরের এক অভিনব গুণমানের মিশ্রণ ঘটাতে চেয়েছি এই বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে।

Advertisement

প্রশ্ন: শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পথে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কার কাছ থেকে?

বিশ্বমোহন: শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণা, আমার পরম শ্রদ্ধেয় গুরু পণ্ডিত রবিশঙ্করজী।

প্রশ্ন: রাজস্থান, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে জয়পুরের পরিবেশ আপনাকে নতুন নতুন সুর সৃষ্টি করতে আপনাকে কীভাবে প্রাণিত করে প্রতিনিয়ত?

বিশ্বমোহন: রাজস্থানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বড় বৈচিত্র্যময়। সেখানকার লোকসঙ্গীত আমার ভীষণই জনপ্রিয়। বাড়িতে আমার মা এবং অন্যান্য মহিলারা যে কোনও অনুষ্ঠানে লোকসঙ্গীত গাইতেন। সেইসব গানের সুর আমার মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে। আমার কাছে নতুন নতুন সুরসৃষ্টি করার অনুপ্রেরণা ছিল আমার ছোটবেলায় শোনা ওই লোকগানগুলো। পরে যখন রেওয়াজ শুরু করি তখন বুঝতে পেরেছিলাম পারিবারিক কারণে আগে থেকেই আমার ভিতরে সুর রয়েছে।

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জন্য কতটা জায়গা আছে বলে আপনি মনে করেন?

বিশ্বমোহন: আমার মনে হয় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে মানুষের মনে। যেভাবে মানুষ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের মর্যাদা দেন, শ্রদ্ধা করেন তার থেকে মনে হয় শ্রোতারা ভীষণভাবেই এই ঘরানার সঙ্গীতের কদর করেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিকড় অনেক গভীরে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক শ্রোতাই অন্যান্য ধারার সঙ্গীত যেমন বলিউডের গান, জ্যাজ, রক, পপ, পশ্চিমী সঙ্গীত শোনেন। কিন্তু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি নিজস্ব মৌলিক জায়গা রয়েছে। পশ্চিমী সঙ্গীত হোক বা বলিউডের গান, কোনওটাই খারাপ নয়। এই ধারার সঙ্গীতও ভীষণই সুন্দর। আমার বেশ ভালো লাগে। সারাবিশ্বেই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। আমি ৮২টি দেশে পারফর্ম করেছি। সব জায়গায় গিয়েই দেখেছি রীতিমতো রাগসঙ্গীতের কদর করেন শ্রোতারা। এ বছর ৮ জুলাই আমরা জেনেভা, সুইজারল্যান্ডে ইউএনওর অফিসে পারফর্ম করেছি। সেখানে ১৯০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সেখানকার সঙ্গীতশিল্পীরা। যা এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা!

প্রশ্ন: ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ সম্মান পেয়েছেন আপনি। একজন শিল্পীর জন্য কি এইসব সম্মান প্রকৃত স্বীকৃতি হতে পারে?

বিশ্বমোহন: ভারত সরকারের এই পদ্মশ্রী পুরস্কার আমাদের কাছে বিরাট এক সম্মান। যে-কোনও শিল্পীর কাছে এই সম্মাননা এক বিশাল বড় প্রাপ্তি। কেননা এর ফলে সারাবিশ্বে শিল্পীদের কদর বাড়ে। এই সম্মাননার সূত্র ধরে সারা পৃথিবীতে একজন শিল্পী এবং তাঁর শিল্পকে সবাই স্বীকৃতি দেন। এই পুরস্কার অবশ্যই একজন শিল্পীর কাছে প্রকৃত স্বীকৃতি। কিন্তু আমরা যখন পারফর্ম করি তখন মানুষের যে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা পাই, তা হল আমাদের মতো শিল্পীদের কাছে আসল স্বীকৃতি।

Advertisement