শ্রদ্ধাবােধ উধাও, লাইকের লােভে মৃত্যু উপত্যকা চেরনােবিলে নগ্ন সেলফি

‘এখানে এখন আর ভালােবাসার ছোঁয়া নেই, এখানে স্পর্শে আছে মৃত্যু’। এই ভাষ্য এইচবিও-র সাম্প্রতিক সিরিজ ‘চেরনােবিল’-এর।

Written by SNS Moscow | June 17, 2019 8:39 pm

'চেরনােবিল' সিরিজের পোস্টার (Photo: IMDb)

‘এখানে এখন আর ভালােবাসার ছোঁয়া নেই, এখানে স্পর্শে আছে মৃত্যু’। এই ভাষ্য এইচবিও-র সাম্প্রতিক সিরিজ ‘চেরনােবিল’-এর। সেই চেরনােবিল, যেখানে ‘একশাে শতাংশ নিরাপদ’ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা প্রাণ কেড়ে ছিল হাজার হাজার মানুষের। লাখাে মানুষকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ উৎখাত করা হয়েছিল। সভ্যতার অগ্রগতি নিয়ে বুক বাজানাের ভয়ংকর পরিণতি বিশ্বের সচেতন নাগরিকদের আজও বেদনাহত করে, হতাশ করে, ক্ষুব্ধ করে।

বর্তমানে পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে সেই চেরনােবিলে ভিড় করা পর্যটকদের কাছে সেই হতাহত এবং উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকবে না? সােশ্যাল মিডিয়ায় ‘লাইক’- এর লােভে সেখানে হাসিমুখে সেলফি তােলা চলছে ইদানীং। এমনকি নগ্ন ফোটোশুটও। সেই ঘটনা মর্মাহত করেছে নেটিজেনদের। হতাশ করেছে ‘চেরনােবিল’ নির্মাতাদেরও।

২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬। তৎকালীন সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমান ইউক্রেনের চেরনােবিলে ঘটে যায় ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়। জাপানের হিরােসিমায় ফেলা মার্কিন বােমার চেয়ে হ্রত্মত্ম গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে চেরনােবিলের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে। এই বিস্ফোরণের অভিঘাত ৫০০টি পরমাণু বােমার তুল্য। লক্ষাধিক নাগরিককে জোর করে সেই জায়গা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়।

হতাহসের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রাষ্ট্র সংঘ অন্তত ৪০০০ মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করলেও সেই বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা আজও অজানা। বছর কেটে গেলেও, সেই এলাকা আজও বসবাসের অনুপযুক্ত। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাবে বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের কয়েক লক্ষ হেক্টর জমি আজও কৃষিযােগ্য নয়। আজও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সেখানে জলভাত। আরও কতকাল সেই ক্ষত বইতে হবে, কে জানে!

ভারতে মহারাষ্ট্রের তারাপুরে, রাজস্থানের রাওয়াতভাতায়, তামিলনাড়ুর কুদানকুলাম এবং কালপক্কমে, কর্নাটকে কাইগায়, গুজরাতের কাকরাপারে, উত্তরপ্রদেশের নারােয়ায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে পিছু হটছে দেশের পরমাণু শক্তি মন্ত্রক। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয় মােকাবিলায় বর্তমানে আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা এবং চেরনােবিল বা জাপানের ফুকুসিমার অভিজ্ঞতা মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছে।

যা হােক, চেরনােবিলের সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কাহিনিকে পাঁচটি পর্বের একটি সিরিজে তুলে এনেছেন ‘চেরনােবিল’ ধারাবাহিকের নির্মাতা ক্রেগ মার্জিন। সেই মার্জিন নিজেই চেরনােবিলের তেজস্ক্রিয়তার শিকার মানুষদের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে এই খুল্লামখুল্লা ছবি তােলার হিড়িকের নিন্দা করেছেন।

কী আছে ক্রেগ মজিনের ‘চেরনােবিল’-এ? চেরনােবিল বিপর্যয়ের ওপর নির্মিত কাহিনিচিত্র। পাঁচ পর্বের এই সিরিজটি জনপ্রিয়তায় ‘গেম অব থ্রোন’ ও ‘ব্রেকিং ব্যাড’কে ছাপিয়ে গিয়েছে। ছবিত দেখানাের চেষ্টা হয়েছে, এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে সতর্ক করা হয়নি। বরং প্রথমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। নিজেদের পিঠ বাঁচানাের জন্য লাখাে মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে বুক কাঁপেনি প্রশাসকদের। দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র তিন কিলােমিটার দূরে প্রিপেত শহরের মানুষকে সরানাে হয়নি। রাষ্ট্রের তরফে সত্য গােপন করা এবং মিথ্যা ছড়নাের চেষ্টা হয়েছে।

অন্যদিকে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও উদ্ধারকাজে ঝাপিয়ে পড়েছেন নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের অনেক কর্মী এবং কর্তারাও। নাটকীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে সেই ভয়াবহ দিনগুলির কথা। তবে চেরনােবিলে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় কিউবার ভূমিকা দেখা যায়নি এ ছবিতে। রুশ এবং কমিউনিজমের জুজু দেখা মার্কিন ধ্যাস্টমােটুকু ছাড়া এই ‘চেরনােবিল’ দেখার মতাে ছবি।