নব্বইয়ের দশক। রাতারাতি ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ্যায়। আজও বহাল তাঁর অন্তর্ধান রহস্য। সেই প্রেক্ষাপটেই নতুন ছবি করছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। ছবির নাম কর্পূর। ছবির কথা বার্তা, কাস্টিং প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এই ছবি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ছবিতে ব্রাত্যর পাশাপাশি কুণাল ঘোষের অভিনয়ের খবরে টান টান উত্তেজনা রয়েছে।
দুর্নীতি, শাসকের ক্ষমতা, সম্পর্ক ঘিরে এক টানটান পলিটিকাল থ্রিলার। লোগো ও লুক রিলিজ হয়েছে মঙ্গলবার। বুধবার মহরৎ। বৃহস্পতিবার থেকে শুটিং শুরু। সুত্রের খবর, ৫৭টি লোকেশনে হবে শুটিং। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন ও কাহাক স্টুডিওর প্রযোজনায় একসময় খবরের শিরোনামে থাকা এই ঘটনা ঘিরে ছবিতে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা, ব্রাত্য, সাহেব, অনন্যা, কুণাল, অরিন্দম, লহমা, অর্পণসহ অন্য শিল্পীরা।
১৯৯৭ সালের ঘটনা। ৩ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে ওঠার পর থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে মনীষা। এর পর মনীষার মা চিনুদেবী হাই কোর্টের মাধ্যমে লালবাজারের গোয়েন্দা দপ্তরকে দিয়ে তদন্ত করলেও আজ পর্যন্ত তাঁর হদিশ মেলেনি। বাম জমানায় শিক্ষা দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাইয়ে দেওয়া নিয়ে টাকা লেনদেনের নানা অভিযোগে সরগরম হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতি।
এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শোনা যাচ্ছে, সিনেমায় তৎকালীন সিপিএম পার্টির রাজা সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আর লালবাজারের গোয়েন্দা অফিসারের চরিত্রে শিক্ষামন্ত্রী তথা অভিনেতা-পরিচালক ব্রাত্য বসু।
পরিচালক জানিয়েছেন, ‘গত ছ’মাস ধরে চেষ্টা করেছেন দীপান্বিতা রায়ের ‘অন্তর্ধানের নেপথ্যে’ উপন্যাসের চলচ্চিত্র রূপ দেওয়ার জন্য। উপন্যাসটি এখন বেস্ট সেলার। তবে সিনেমার প্রয়োজনে উপন্যাসের গল্পে কিছু বদল ঘটছে। বিশেষ করে শেষের দিকে দুটো টুইস্ট আছে। ১৯৯৭ এবং ২০১৯ সাল থাকবে ছবিতে। একই লোকেশনে দুটো সময়কালও দেখানো হবে, যেটা ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। আরও চমকপ্রদ, এআই জেনারেটেড কিছু কাজও থাকবে।’
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, ‘গল্পটা খুব স্ট্রং। প্রথমদিন আমার মনে হয়েছিল এরকম গল্প যদি সিনেমাটিক লিবার্টি নিয়ে করতে পারি, খুব ভালো হয়। অরিন্দম যখন প্রথম দীপান্বিতার গল্প নিয়ে ভেবে দেখার কথা বলে, বলেছিলাম ঠিক আছে। আমার চরিত্র মৌসুমির বড় ভূমিকা আছে। কেন্দ্র চরিত্র বলেই নিয়েছি। এরকম চরিত্র সচরাচর আসে না। এখন এই রকম চরিত্রগুলোই করতে চাই।’
সিনেমায় হাতেখড়ি। অভিনয়ে নবাগত কুণাল ঘোষ জানান, ‘স্ক্রিপ্টটা খুব ভালো। আমি সাংবাদিকতা করেছি, আমি রাজনীতি করেছি, আমি লিখি কিন্তু পরিচালক অরিন্দম শীল আমাকে অভিনেতার ভূমিকায় ভেবেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। এ ক্ষেত্রে আমার শিক্ষক অরিন্দম শীল এবং বন্ধু ব্রাত্য। তাঁরা নানারকমভাবে আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আশা করছি ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারব।’ কাকে ফলো করছেন সাংবাদিকের এই প্রশ্নে কুণালের বক্তব্য, হরেক রকম ছবি দেখলেও, আপাতত কুণাল ঘোষকেই ফলো করছেন। প্রেস কনফারেন্সে যা যা ভুল ভ্রান্তি হয়, সেগুলো যেন রিলে না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখছেন।
অন্যদিকে ব্রাত্য বসু বললেন, “কুণালের লুক দারুণ লাগল। বাধ্য ছাত্রের মতো প্যাশন নিয়ে কাজ করছে। খুব যত্ন নিয়ে কাজটা করছে কুণাল। আমি বন্ধু হিসাবে মাঝে মাঝে রিহার্সালের সময় দু’-একটা কথা হয়তো আদানপ্রদান হয়েছে, সেটা কুণালও আমাকে অনেক সময় বলেছে। আমার চরিত্রটা কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিটেকটিভের। যে খুবই হতাশ, ধর্মকর্ম নিয়ে থাকে। কিন্তু অ্যান্টেনাগুলো খুবই প্রখর এখনও। ও যখন বুঝতে পারে ১৯৯৭সালের কোল্ড কেস রি-ওপেন হচ্ছে তখন সেটায় ও কীভাবে সাহায্য করে সেটাই ছবির মূল প্রতিপাদ্য।