• facebook
  • twitter
Wednesday, 17 December, 2025

পরম্পরা বনৌষধি

বিভিন্ন ভেষজের ঔষধি ব্যবহার।

শিমূল

শিমূল (Bombax Malabaricum) :

শাল্মলি , মোচা, পিচ্ছিলা, পূরণী, স্থিরায়ু, কন্টকাঢ্যি, তুলিনী প্রভৃতি শিমূলের পোশাকি নাম। সিমিল ও এদেল এর কুড়মালি ও সাঁওতালি নামান্তর । এটি বৃক্ষ শ্রেণীভুক্ত এক ভেষজ উদ্ভিদ , যা ত্রিদোষ নাশক গুণসম্পন্ন। এর ব্যভারিক মাত্রা = চার আনা =তিন গ্রাম পরিমাণ।

Advertisement

অতিসার অর্শ , আমদোষ , কাস, ফোলা, পোড়া ঘা, প্রদর ,প্লীহা, ফোড়া ব্রণ, মেচেতা, রক্তপিত্ত, প্রদাহ, শিশুর অপুষ্টি, শুক্রতারল্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিমূলের প্রয়োগ প্রচলিত। অতিসার , আমদোষ , দমকাদস্তি , কাসি, শোথ(ফোলা), প্রদের ,প্লীহা , রক্তপিত্ত, শিশুর অপুষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিমূল ছাল বা পাতার রস বা ক্কাথ ব্যবহার্য্য। ফোলা জায়গায় ঐ রস বা ক্কাথ প্রলেপ্যও। পোড়া ঘা বা ফোলাতে এটি চমৎকার ফলদায়ক। মেচেতা সারাতে শিমূল কাঁটা চূর্ণ বা ঘসা (চন্দনের মত) , নিমপাতা ও কাচা হলুদ, রস এবং নারকেল তেল সমপরিমাণ মিশ্রণ প্রলেপ্য।

Advertisement

শুক্রতারল্যে চারা শিমূল গাছের মূল (এক দু বছর বয়সী) চূর্ণ প্রতি মাত্রা তিনটি গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে সেব্য। দুধের সঙ্গে ফুটিয়ে বা গরম দুধের সঙ্গে সেবন করলে এই যোগের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

মোচরস (শিমূল গাছের আঠা ) দমকা দাস্ত, বমি, আমাশা, রক্তদুষ্টি, জ্বালা পোড়ায় বিশেষ উপযোগী। প্রদর নিরাময়ে শিমূল ফুলের রস, ক্কাথ বা চূর্ণ খালিপেটে প্রযোজ্য। শিমূল বীজ এক বলবর্ধক ভেষজ হিসাবে দারূণ কার্যকর। গ্রন্থিস্ফীতি , গণোরিয়া , ব্যঙ্গ, শিশুর হাজা, স্বেতী সারানোর কাজে প্রযোজ্য।

শেওড়া (Streblus Asper):

শাঘোট পীতফল, ভূতাবাস, খরচ্ছদ প্রভৃতি শেওড়ার নাম পর্যায়ক শব্দ। সাহড়া এর পারস্প্রিক কুড়মালি নাম। এটি একটি বৃক্ষশ্রেণিজাত ভেষজ উদ্ভিদ। সাধারণত এর ছাল ও ফল ওষুধ হিসাবে প্রযোজ্য। শেওড়ার প্রয়োগ্মাত্রা = এক আনা = পঁচাত্তর মিলিগ্রাম পরিমাণ।

শেওড়া মূলতঃ বায়ু ও কফনাশক ভেষজ সম্পদ। রক্তপিত্ত , অর্শ সারাতে শেওড়া কার্যকর । রক্তপিত্ত নিরাময়ে শেওড়া গাছের ছালের ( কান্ড অথবা মূলের) ক্কথ বা চূর্ণ ঠান্ডা অবস্থায় বা ঠান্ডা জলের সঙ্গে সেব্য। এটি দিনে ২-৩বার সেবন করা বিধেয়।

অর্শ (বলিযুক্ত) সারাতে শেওড়া ছাল বা চূর্ণ বা ক্কাথ অথবা পরিপক্ক ফল সেবন এবং শেওড়া কাঠ ঘসা (চন্দনের মত) ব্লিএর ঘায়ে (বলি ঘসে পড়ার পরবর্তী  পর্যায়ে ) প্রলেপ্য।

অতিসার সারানোর কাজে শেওড়া ছালের ক্কাথ প্রতিমাত্রা তিনটি গোলমরিচ সহযোগে একঘ্ন্টা অন্তর তিনবার প্রযোজ্য। অবস্থা অনুধাবন সাপেক্ষে পরবর্তী মাত্রা প্রয়োগ করা বিধেয়। পরম্পরা প্রাকৃত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শরীরের কফজ প্রকোপ উপ্সহ্মে শেওড়া পাতার রস বা ক্কাথের প্রয়োগও প্রচলিত।

সর্পগন্ধা ( Ophioxylan Serpentinum):

নাকুলী , সুরসা , সর্পক্ষে, নাগসুগ্ন্ধা , গন্ধনাকুলী , ভজঙ্গাক্ষী, বিষনাশিনী , ঐগুলি সর্পগন্ধার নাম পর্যায় । চাদড় এর কুড়মালি নাম পরম্পরা। এটি একটি গুল্মজাতীয় ত্রিদোষ নাশক ভেষজ উদ্ভিদ। এর মূল অষুধ হিসাবে ব্যবহার্য। এর ব্যবহারিক মাত্রা = চার আনা =তিন গ্রাম পরিমাণ। সাধারণভাবে সর্পগন্ধা মূলের সঙ্গে শতকরা সাড়ে বারো ভাগ গোলমরিচ মিশিয়ে প্রয়গ করা বিধেয়।

বিষদোষ , জ্বর, কৃমি, ব্রণ ,অনিদ্রা, উন্মাদ, রক্কচাপ বৃদ্ধি (রক্তগত মূর্চ্ছা) প্রভৃতি অসুখবিসুখ প্রতিকার ও প্রতিরোধকল্পে সর্পগন্ধা যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ওষুধটি সাধারনভাবে সকাল ও বিকেলবেলা হাল্কা খাবার পর প্রযোজ্য। অনুপান হিসাবে গরম দুধ ব্যবহার করলে সব থেকে ভাল কাজ করে। বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে ওষুধটি একঘণ্টা অন্তর তিন্ মাত্রা প্রয়গ করা দরকার। উন্মাদের চিকিৎসায় সর্পগন্ধা মূলচূর্ণ ও নারকেল তেল শতকরা পঁচিশ ও পঁচাত্তর ভাগ মিশ্রণ হাল্কা আঁচে পাক করে ওই তেল মাথার তালুতে ঘষে ঘষে প্রয়োগ করতে হয় এবং সর্পগন্ধা ও গোলমরিচ মিশ্রণ্টিও সেবন করতে হয়। কাঁপুনি , আম্বাত , উরুস্তম্ভ , কর্ণমূল , শোথ, পেটফাঁপা , শ্লীপদ (গোদ) , স্নায়ু সংকোচন সারানোর কাজেও সর্পগন্ধা এক শ্রেয় ভেষজ হিসাবে কাজ করে।

হরীতকী(Terminalia Chebula): 

অভয়া, প্থ্যা, কায়স্থা , পূতনা, অমৃতা , হৈম্বতী, অব্যথা , চেতকী, শ্রেয়সী, শিবা, বয়স্থা , বিজয়া , জীবন্তী, রোহিণী নামেও অভিহিত। Myrobalan এর ইংরিজি নাম। কুড়মালি নাম পরম্পরায় একে বলে কষা ফল। এটি একটি বৃক্ষজাতীয়। ভেষজ উদ্ভিদ। অষুধ হিসবে এর ফল ই ব্যবহার করা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এগাছের ছাল ও ব্যবহার করা হয়।  এর ব্যবহারিক মাত্রা আধ থেকে এক তোলা= ছ্য় থেকে বার গ্রাম পরিমাণ।

হরিতকী চিবিয়ে খেলে অগ্নিবল বৃদ্ধি, পিষে খেলে মল শোধন , সিদ্ধ খেলে মল সংগ্রাহী , ভেজে খেলে ত্রিদোষ নাশ এবং বিবদ্ধতা নাশ হয়। আহারেও হরিতকী খেলে ত্রিদোষ ও অন্নপান জনিত পীড়াসমূহ নিবারিত হয়।

হরিতকী নুনের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কফ , চিনির সঙ্গে খেলে পিত্ত, ঘিয়ের সঙ্গে বাতজ অসুখ ও গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সর্বরোগ নাশ হয়। কালানুসারে, বর্ষায়  সৈন্ধব নুন, শরতে চিনি, হেমন্তে শূঁঠ, শীতে পিপুল, বসন্তে মধু ও গ্রীষ্মে গুড়ের সঙ্গে ব্যবহার্য। এটি ঋতুহরিতকী বিধি। রোজ সকালে হরিতকী চুর্ণ হাল্কা গরম জলের সঙ্গে সেবনে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়। সমপরিমাণ হরিতকী চূর্ণ ঘিএর সঙ্গে সেবনে অম্লশূল প্রশমন হয়। আহারের আগে গুড় মিশিয়ে হরিতকী সেবনে রক্তার্শে ভাল ফল পাওয়া যায়। মধুর সঙ্গে হরিতকী চুর্ণ মিশিয়ে সেবনে বমন নিবারণ হয়। প্রতিমাত্রা হরিতকী এক গ্রাম পরিমাণ পিপুলচূর্ণ মিশিয়ে অল্প অল্প পরিমাণ লেহন করলে হিক্কা নিবারণ হয়। বার বার অল্প অল্প আমযুক্ত পায়খানা হলে, প্রতিমাত্রা হরিতকীচূর্ণের সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ পিপুলচূর্ণ মেশানো ক্লপ হাল্কা জলের সঙ্গে সেবনে প্রভূত উপকার হয়। অম্বল ও বুক জ্বালাতেও এটি যথেষ্ট কার্যকর । চুলের পুষ্টিসাধনে হরিতকী কল্ক-নারকেল তেল পাক ( ২৫% ও ৭৫%) বিধি চমৎকার কাজ ক্রে।এছাড়াও হরিতকী আরও বহু গুণাধার।

Advertisement