করবাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য বরাদ্দ পেলে ত্রাণের কাজে লাগানো যেত : মমতা

বুলবুলের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কেন্দ্রীয় অনুদানের আশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখেন মমতা।

Written by SNS Kolkata | November 15, 2019 7:00 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

কেন্দ্রের কাছে কর হিসেবে রাজ্যের যে টাকা প্রাপ্য হয়, তার চেয়ে এবছর ১৭ হাজার কোটি টাকা কম পাওয়া গিয়েছে। এই টাকা পেলে বুলবুল দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণের কাজে লাগানাে যেত বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বুলবুলের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কেন্দ্রীয় অনুদানের আশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখেন মমতা।

দুর্যোগ পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসার আগে রাজ্যের তরফে দ্রুত রিপাের্ট তৈরি করতে বলেছেন মমতা । বৃহস্পতিবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে বিভিন্ন দফতরের কাজে গতি আনতে কড়া নির্দেশ জারি করেছেন। কয়েকটি দফতরের কাজে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রশাসনিক বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে করবাবদ নিয়ে যাওয়া টাকার যে ৪২ শতাংশ কেন্দ্র রাজ্যকে দেয়, এবছর তার থেকে অনেক কম টাকা এসেছে। কেন্দ্রের আর্থিক নীতির জন্য তাদের রাজস্ব আদায়ে ৬৪০ কোটি টাকা লােকসান হয়েছে। যার ধাক্কা এসে পড়েছে সব রাজ্যের ওপর। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের টাকাও কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে।

বরাদ্দ টাকার চেয়ে আবারও কেন্দ্রের কাছে চিঠি দেনে মমতা। কেন্দ্রের কাছ থেকে এই প্রাপ্য টাকা পাওয়া গেলে বুলবুল দুর্গত অঞ্চলে বিপর্যয় মােকাবিলায় কাজে লাগানাে যেত বলে আক্ষেপ মমতার। তবে রাজ্য সরকারের তরফে বুবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বুলবুলের আগাম সতর্কতায় আগে থেকে বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাণহানির সংখ্যা কম হয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগণায় ৫ জন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় ৩ জন এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ১ জন– মােট ন’জনের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু ১৫ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ৬ লক্ষ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। ১৬ লক্ষ মানুষ দুর্যোগের কবলে। বহু জায়গায় মাঠের আমন ধান, পান ও বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণভাবে জলের তলায় চলে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের পাঠানাে হচ্ছে কোনও পদ্ধতিতে শস্য উদ্ধার বা বিকল্প চাষ করা যায় কিনা তা দেখতে। দুর্গত অঞ্চলে চাল, আলু, ডাল, বেবি ফুড, হ্যারিকেন, ৫ লিটার করে কেরােসিন তেল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে ৬ লক্ষ কিট দেওয়া হবে জানান মমতা।

দুর্গত এলাকায় একশাে শতাংশ মানুষকে ফসল বিমার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি নতুন করে বসানাে হচ্ছে। বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে পুনর্গঠনের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মমতা। এজন্য প্রশাসনের আধিকারিক, কর্মীদের প্রশংসা করেন মমতা।

তবে সুত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের প্রশাসনিক বৈঠকে বেশ কয়েকটি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর রােষানলে পড়েছে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, পূর্ত, পরিবেশ, ক্ষুদ্র, ছােট ও মাঝারি শিল্প দফতর, আইন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ দফতরের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। নবান্নের অভিযােগ জানানাের জন্য যে সেল রয়েছে, সেখানে আসা সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

এছাড়া কাজে দ্রুততা আনতে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের মধ্যে প্রয়ােজনীয় ফাইলের সরাসরি আদানপ্রদান করতে বলেছেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকে মন্ত্রীদের ঠিকমতাে প্রশ্নোত্তরের জন্য তৈরি না হয়ে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। এজন্য নােডাল অফিসারে সাহায্য নিতে বলেন। বিভিন্ন কোর্টে সরকারি মামলা জমে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কেসের বিবরণ মুখ্য সচিবের কাছে জমা দিতে বলেন।

ক্ষুদ্র, ছােট ও মাঝারি শিল্প দফতরকে ফান্ড নষ্ট করার জন্য না করেন। নির্দিষ্ট অনুমােদন ছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফ্ল্যাট তৈরি যেন না হয়, সেজন্য পূর্ত দফতরকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনের সময় মন্ত্রীদের এবং বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের রাজ্য ছেড়ে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। এছাড়া নিয়ম ভেঙে টেন্ডার না ডাকতে সব দফতরকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।