পরিস্থিতি সামাল দিতে ডেপুটি চিফ মিনিস্টারের পদ তৈরির সম্ভাবনা

তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। কঠিন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ইতিমধ্যে একপ্রস্থ সাংগঠনিক রদবদল করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে।

Written by SNS Kolkata | May 27, 2019 3:55 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। কঠিন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ইতিমধ্যে একপ্রস্থ সাংগঠনিক রদবদল করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। ৩১ মে দুপুরে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাট সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে।

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তিনি চেয়ারকে কেয়ার করেন না। তাঁর চেয়ারের প্রয়ােজন নেই চেয়ারের তাঁকে প্রয়ােজন। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর থাকার ইচ্ছা নেই। তাঁর এই ইচ্ছায় অবশ্য সম্মতি দিতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতারা। পত্রপাঠ তা খারিজ করে দিয়েছেন নেতারা। রাজ্য মন্ত্রিসভায়ও বড়সড় রদবদলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। দ্রুত এই পরিবর্তন হবে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন সুব্রত মুখােপাধ্যায় তিনি তার দফতরের কাজ চালিয়ে যাবেন। আরেক মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বিষ্ণুপুর লােকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কিন্তু তিনি জয়ী হতে পারেননি। তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকা নিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি। শ্যামল সাঁতরাকে বিষ্ণুপুরের সভাপতি করা হয়েছে।

রাজ্য মন্ত্রিসভায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে ১৯ জন মন্ত্রী নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছেন। এমনই পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গেরুয়া এই ঝড়ে অনেক হেভিওয়েট মন্ত্রি নিজেদের এলাকায় কোণঠাসা হলেও তাঁদের উপর যে কোপ পড়বে এমনটা নয়।

তবে যাঁরা সত্যি সত্যি পরিশ্রম করেছেন এবং দলীয় প্রার্থীকে জেতানাের জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি তাঁরা কোপের মুখে পড়ছে না বলে জানা যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মন্ত্রী এবং সাংসদদের শুধু নিজের এলাকা নয় পাশাপাশি এলাকায়ও সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি করতে হবে কারণ যাঁদেরকে মন্ত্রী করা হয়েছে তাঁরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন এমনটাই চায় দল।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবার তিনি দলের জন্য বাড়তি সময় দেবেন। অভিমানী মুখ্যমন্ত্রী এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনার কথা শােনা যাচ্ছে শাসক দলের অন্দরে। বিভিন্ন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে সেই ধারা বজায় রেখে এই রাজ্যে ডেপুটি চিফ মিনিস্টার পদ তৈরির সম্ভাবনা ক্রমশ  উজ্জ্বল হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

সেই সঙ্গে যুব সংগঠনেও রদবদল হতে পারে এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে যুব সংগঠনের একেবারে শীর্ষস্তরে পরিবর্তন না এনে অন্য পদগুলিতে নতুন মুখ আনা হতে পারে। এক্ষেত্রে রাজ্য মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে কিন্তু বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী নন তাঁর নাম নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে তৃণমূল সুপ্রিমাে দলীয় বাছাই করা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বলে জানা যাচ্ছে। কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে যাঁরা তৃণমূলের প্রকৃত সৈনিক তাঁদের মাঠে নামানাের কৌশল গ্রহন করা হচ্ছে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি যেভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে রাজ্যজুড়ে একের পর এক শাসক দলের দলীয় কার্যালয় দখল করছে তা রুখে দেওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের বুক চিতিয়ে মাঠে নামার কথা বলা হয়েছে।

জঙ্গলমহলের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই আজ সােমবার শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় যাচ্ছেন দলীয় নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। ঘাটালে দেব জয়ী হয়েছেন তা সত্ত্বেও কেশপুরে বেশ কয়েকটি শাসক দলের কার্যালয় বিজেপি জোর করে দখল করে নেয়। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সােমবারের মধ্যে দলীয় কার্যালয়গুলি পুনরুদ্ধার করা হবে। তার এই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার রাতের মধ্যেই বেশ কয়েকটি দলীয় কার্যালয় তৃণমূল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

কেশপুরে এই চিত্র দেখা গেলেও রাজ্যের অন্যত্র ছবিটা কিন্তু শাসক দলের পক্ষে এতটা সুখকর নয়। ফলে দখল ও পুনর্দখলের মাঝে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মতাে নেতাদের আরও বেশি করে কাজে লাগাতে চাইছে দল। দলীয় কাজটা যাতে ভালােভাবে নেতারা করেন সে কারণে পারফরমেন্স বিচার করে এবার মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

‘দল ভালাে থাকলে আপনারাও ভালাে থাকবেন।’ এ কথা নিয়ম করে দলীয় বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠক গুলিতে প্রায়ই তৃণমূল সুপ্রিমমাকে বলতে শােনা যেত। সত্যি কথা বলতে কি তৃণমূল এখন কঠিন সময়ের মুখােমুখি। ফলে দলের নেতা মন্ত্রী সাংসদরা যাতে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বোপরি বাংলার মানুষ যাতে তৃণমূলের থেকে সরে না যায় তার জন্য দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলের বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই আভাস মিলছে।