অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোপুরি লকডাউন

নবান্ন জানিয়ে দিল কনটেইনমেন্ট এলাকার সব জোনেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কমপ্লিট লকডাউন কার্যকর হবে আগামীকাল ৯ জুলাই, বিকেল পাঁচটা থেকে।

Written by SNS Kolkata | July 8, 2020 4:05 pm

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতাসহ কয়েকটি জেলায় করোনার গ্রাফ উর্ধ্বমুখী। বাড়ছে মৃত্যুর হারও। শেষ পর্যন্ত কলকাতা সহ কয়েকটি রাজ্যে কনটেইনমেন্ট জোনে পুরোপুরি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার কলকাতা এবং জেলা প্রশাসনের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে নবান্ন জানিয়ে দিল কনটেইনমেন্ট এলাকার এ (অ্যাকটিভ), বি (বাফার), সি (ক্লিন)- সব জোনেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কমপ্লিট লকডাউন কার্যকর হবে আগামীকাল ৯ জুলাই, বিকেল পাঁচটা থেকে।

কতদিন পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে তা এখনই নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, মালদহ, শিলিগুড়ি এবং দুই চব্বিশ পরগণা’তে যেভাবে গত কদিন ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল, তা রাজ্য সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুই চব্বিশ পরগণা এক মালদহের জেলাশাসকদের পক্ষ থেকেও লকডাউন কড়াকড়ি করার সুপারিশ আসে।

মঙ্গলবার সেই আবেদনে সিলমোহর পড়ে নবান্নের। সোমবার থেকেই কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণে লকডাউন কড়াকড়ি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তৎপরতা দেখা যায়। মঙ্গলবার কনটেইনমেন্ট জোনে লকডাউন কড়াকড়ি করার জন্য মাইকিং শুরু করে পুলিশ।

কলকাতায় লকডাউন অঞ্চলে বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। অন্যদিকে জেলাগুলিতে লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। লকডাউনের সূচনা পর্বের ধাঁচেই কনটেইনমেন্ট এলাকায় কড়াকড়ি করা হবে।

কনটেইনমেন্ট এলাকায় পুরোপুরি লকডাউন চালু হয়ে গেলে সেখানে অত্যাবশকীয় পণ্য এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য সব কিছু বন্ধ থাকবে। কনটেইনমেন্ট এলাকাভুক্ত সরকারি বেসরকারি অফিস সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। যে কোনও জমায়েতের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। ব্যাঙ্ক, এটিএম, টেলিকম, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের বেশি কর্মী হাজিরা থাকবে না। বর্তমানে যা সত্তর শতাংশের মতো রয়েছে।

অত্যাবশকীয় পণ্য ছাড়া শিল্প, ব্যবসা, মার্কেট বন্ধ থাকবে। চায়ের দোকান, খাবারের দোকান, পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান বন্ধ থাকবে। কনটেইনমেন্ট জোনে ধর্মস্থান বন্ধ থাকবে। পরিবহণ পরিষেবা বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যবাহী পরিবহণ ব্যবস্থা চালু থাকবে। যে সব জায়গায় ইতিমধ্যেই নির্মাণকাজ চলছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে স্থানীয় ঠিকাকর্মীরাই শুধু কাজ করবেন।

মঙ্গলবার লকডাউনের নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আনলক পর্বে সবে দোকানপাট খোলা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই আবার কনটেইনমেন্ট জোনে লকডাউনের কড়াকড়ি চালু করা হল। কতদিন লকডাউন চলবে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। তবে নবান্ন সূত্রে খবর, আপাতত ১৪ দিন লকডাউনের প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে ১০ দিন পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে।

এদিকে, উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা সংক্রমণের ঢেউ উপচে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বারাকপুর ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং বসিরহাট, বনগাঁ ও বারাসত জেলা পুলিশ প্রশাসন, এছাড়াও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকাকিদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর জেলাশাসকের পক্ষ থেকে লকডাউনের প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হয় বলে খবর। এই প্রস্তাবে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

মোট ১৪ দিনের পরীক্ষামূলক লকডাউনর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্দেশিকায় মুদি, শাকসবজি, মাছ, মাস, দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, ফল, ওষুধের দোকান ব্যতীত সমস্ত বাজার বন্ধ রাখার প্রস্তাব রাখা হয়। আরও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হবে হোম ডেলিভারির ওপর।

অপেক্ষাকৃত ফাঁকা অঞ্চলের দোকানগুলি সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। চায়ের দোকান সহ সমস্ত রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলি বন্ধ থাকবে। অটো, টোটো, ভ্যান-রিকশা, বাসের চালনা কেবল জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে। এক্ষেত্রে পণ্যবাহী যানবাহনের উপর ছাড় থাকবে।

এছাড়াও জরুরি কাজকর্মের জন্য রাস্তায় বেরোতে হলে তার জন্য থানাগুলির মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাস বিতরণ করা যেতে পারে। অফিস, শিল্প ও উৎপাদন ইউনিটগুলিকে ২০ শতাংশ কর্মী নিয়ে খোলা থাকার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে টেলিকম ব্যাঙ্ক, এটিএম, আইটি ও আইটিইএস, ডাক পরিষেবা, ফায়ার, সিভিল ডিফেন্স এবং জরুরি পরিষেবা এবং পেট্রোল পাম্পগুলিকে।

দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমানগুলি ছাড়া অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় স্থানগুলি জনসাধারণের জন্য বন্ধ রাখারও প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। যদিও ওই ধর্মীয় স্থানগুলির রক্ষণাবেক্ষণকারী ব্যক্তিরা রক্ষণাবেক্ষণের ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যেতে পারবেন। কম সংখ্যক শ্রমিক ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালানো যেতে পারে।

এবং সবার শেষে শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে কঠোরভাবে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলি কলবৎ করা যেতে পারে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, পুনরায় লকডাউনের সমর্থন করতে তারা রাজি, যদি প্রশাসন তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করতে পারে অথবা সাধারণ মানুষ যাতে সবাই দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে পারে।

পাশাপাশি, তারা এও মনে করছেন যে, সাধারণ মানুষকেই নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য খেয়াল নিজেদেরকে দেখে সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। না হলে প্রশাসন শতবার লকডাউন করেও এই সংক্রমণ থামাতে পারবে না।