কলকাতার এক নামি স্কুলের বাথরুম থেকে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার, তদন্তে কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগ

শহরের এক নামি স্কুলের শৌচালয় থেকে উদ্ধার হল এক ছাত্রীর দেহ। অচৈতন্য অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী হাসপাতালে।

Written by SNS Kolkata | June 22, 2019 11:27 am

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

শহরের এক নামি স্কুলের শৌচালয় থেকে উদ্ধার হল এক ছাত্রীর দেহ। অচৈতন্য অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা ছাত্রীটিকে মৃত বলে ঘােষণা করেন।

বাথরুম থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নােট। পড়াশােনায় ভালাে ওই ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগ।

পুলিশ সূত্রের খবর, জি ডি বিড়লা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা পালের অচৈতন্য দেহ স্কুলের বাথরুম থেকে উদ্ধার হয়। হাতের শিরা কাটার চেষ্টা ও মুখে প্লাস্টিক জড়ানাে অবস্থায় স্কুলের বাথরুমে মেলে কৃত্তিকার দেহ। তাকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ইইডিএফ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘােষণা করে।

একটি তিন পাতার সুইসাইড নােট শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেখানে পারিবারিক গণ্ডগােলের কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিল বলে লেখা আছে। তার জন্যই আত্মহত্যা করে বলে উল্লেখ করেছে ওই ছাত্রী।

এদিকে নামি স্কুলের ভিতরে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা জানতেই যাদবপুর থানার পাশাপাশি গােয়েন্দা বিভাগের হােমিসাইড শাখার আধিকারিকরা একযােগে তদন্তে নেমেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ছাত্রীর দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নােটটি। হাতের লেখা কৃত্তিকার কিনা, পরীক্ষা করে দেখছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

তদন্তকারী আধিকারিক সূত্রে খবর, নিজের ক্লাসে টপার ছিল কৃত্তিকা পাল। সে কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিল তাই জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শুক্রবার যষ্ঠ পিরিয়ডের পর ক্লাস টিচারকে মাথা ব্যথা করছে জানায় কৃত্তিকা। কিছুক্ষণ ‘সিকরুমে’ গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার অনুমতি দেন শিক্ষিকা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ হয়ে গেলেও ক্লাসে ফিরছে না দেখেই খোঁজ পড়ে কৃত্তিকার। সিকরুমে না পেয়েই শৌচাগারগুলি খুঁজে দেখতে শুরু করেন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। এরপরই একটি শৌচাগারের মধ্যে তার হদিশ পাওয়া যায়।

যদিও শৌচাগারটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। দরজা ভেঙে তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুপুর ২টা ৪০ মিনিট নাগাদ তার দেহ উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘােষণা করেন।

প্রাথমিক তদন্তে অনুমান কৃত্তিকা আত্মহত্যারই চেষ্টা করেছে। হাতে ‘সেলফ ইনফ্লেকটেড ইনজুরিস’ পাওয়া গেছে। তবে সেই কাটা দাগ জীবন হননকারী নয় বলেও মনে করছেন গােয়েন্দারা। তার জন্যই প্লাস্টিক মুখে জড়িয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিল কিনা তা একমাত্র ময়নাতদন্তের রিপাের্ট হাতে আসলেই বলা সম্ভব বলে জানান পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক।

আত্মহত্যার পিছনে আসল কারণ জানাতেই কৃত্তিকার সহপাঠী ও পরিবার পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ওই আধিকারিক। খতিয়ে দেখা হবে সিসিটিভি ফুটেজ।

অন্যদিকে বিশেষ সূত্রে খবর, শান্ত প্রকৃতির নয়, বরং বেশ মিশুকে স্বভাবের ছিল কৃত্তিকা। দাবা খেলতে ভালােবাসত। অবসর সময় কাটাতাে বিভিন্ন ধরনের ইংরাজি বই পড়ে। স্কুলে নিজের ক্লাসে টপার ছিল। সেই কৃত্তিকাই কেন এমন ঘটনা ঘটালাে, তা নিয়ে হতবাক পরিচিতরাও।

বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা কৃত্তিকার বাবা সম্প্রতি কাজের সূত্রে হায়দরাবাদে গেছে। তাদের একমাত্র সন্তান ছিল কৃত্তিকা। তবে সুইসাইড নােটে কৃত্তিকার উল্লেখ করে পারিবারিক গােলযােগের কথা মানতে নারাজ তাদের পারিবারিক বন্ধুমহল।

এমনকি এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ অসুস্থ বলে সিকরুমে যায় কৃত্তিকা। কেন প্রায় আধ ঘণ্টা পর তার খোজ পড়ল, তা নিয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিকেই অভিযােগের আঙুল তুলেছে মৃতার পরিজনরা।