বাজপেয়ী ও মোদির ভারতে বিস্তর ফারাক : মমতা

এ এক অন্য মমতাকে দেখল শহরবাসী। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় এদিন পার্ক সার্কাস ময়দানে সুকৌশলী মমতাকে পেল মানুষ।

Written by SNS Kolkata | December 21, 2019 12:08 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

এ এক অন্য মমতাকে দেখল শহরবাসী। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় এদিন পার্ক সার্কাস ময়দানে সুকৌশলী মমতাকে পেল মানুষ। যে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী এতদিন বলে এসেছিলেন খােদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, সেই রাজনৈতিক দলেই এদিন সুকৌশলে বিভাজনের রেখা টেনে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী।

বাজপেয়ী ও মােদির ভারতে যে বিস্তর ফারাক তা মােলায়েম সুরেই সকলের সামনে তুলে ধরলেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। মমতা বলেন, বাজপেয়ীজি বেঁচে থাকলে দেশে এই পরিস্থিতি সম্মুখীন হত না। তিনি রাজধর্ম পালন করতে বলতেন। তিনি লােকতন্ত্রে বিশ্বসী ছিলেন। ঐক্যের নীতিতে শাসন করা যায় বিভেদে নীতির স্থায়ীত্ব কখনও বেশি দিনে কায়েম করা যায় না । লােকতন্ত্র কখনও ‘মজবুর’ হয় না বরং ‘মজবুত’ হয় বলেও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাতারাতি এক আইন প্রণয়নের মধ্যে দিয়ে গােটা দেশ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চূড়ান্ত অরাজকতা। প্রসঙ্গক্রমেই তিনি নিয়ে আসেন সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের চিত্র। যেভাবে মধ্যরাতে সরকার তৈরি হয় সেখানে পার্ক সার্কাস ময়দানের সভা থেকে সেই স্মৃতি উসকে দিলেন মমতা। বিজেপি চালাকি করে চুপি চুপি মহারাষ্ট্রে সরকার তৈরি করলেও তার স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে পারলাে না। ঠিক তেমনই এনআরসি ও ক্যাএএ’রও একই হাল হবে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গােটা দেশের বিভিন্ন প্রন্তে বিদ্বেষের আগুন জ্বলছে। দেশের এমন সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কোনও সুযােগই দিতেন না প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। আর এর মধ্যে দিয়েই দেশের শাসক গােষ্ঠি বিজেপি সরকারের সময়কালে দুই ভারতের ছবি সামনে নিয়ে এলেন মমতা। একদিকে যেভাবে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। অন্যদিকে মােদির জামানাকে সুকৌশলে ভৎসনা করেন তিনি।

একসময়ে গুজরাটে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তেমন পরিবেশ কি ফিরে আসুক গােটা দেশ জুড়ে সেই প্রশ্নও এদিনের জনসভা থেকে রেখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে প্রতিদিনই দেশের এক এক প্রান্ত থেকে কখনও গুলি চলার তাে কোথাও জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধের খবর সামনে আসছে। যা রীতিমতাে ভয়াবহ। দেশের আকাশ কালাে চাদরে ঢেকে গিয়েছে। এত স্বার্থপর কিভাবে হতে পারে। কোনও কেন্দ্র সসরকার আর এই কথা বলতে গিয়েই নাম না করে মােদি কে ‘সেলফিস জায়েন্ট’ বলেও কটক্ষ করেন মমতা।

তবে এদিন মােদির বিরুদ্ধে মমতার ক্রোধের আঁচ ছিল অনেকটাই মােলায়েম। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির উদ্দেশ্যে খােলা মঞ্চ থেকেই প্রশ্ন রাখেন, ভােটাভুটির মধ্যে দিয়ে ক্যাব যখন আইনে পরিণত হচ্ছিল। সেই সময় মােদি কেন নিজের ভােটটি দেননি? তাহলে কি দেশের প্রধানমন্ত্রীও এই আইন সমর্থণ করেন না। আর যদি তাই হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এই কালা কানুন বাতিল করা হােক বলেও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘ছুপা রুস্তম’র মতাে এই জনবিরােধী আইন পাশ করানাে হয়েছে। আর যারা এই আইনের বিরােধিতা করছেন তাদের দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে বলে সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী এজেন্সি পাঠিয়ে ভয় দেখানাে হচ্ছে বলে অভিযােগের আঙুল তােলেন মমতা। তবে দেশের মানুষ যে আর ভয় পায় না তাও তিনি এদিনের সভা থেকে বিজেপি শাসিত সরকারকে জানিয়ে দেন। যারা দেশের মানুষের মা-বাবার জন্ম শংসাপত্র চাইছেন তাদের নিজেদেরকেও প্রথমে সেই পরীক্ষায় বসতে হবে। তারা কি পারবেন? বলেও এদিন ফের প্রশ্ন করেন তিনি।

ভারতীয় বিমানে যেভাবে আমিষ নিরামিস খাবারের বিভাজন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আমিষ খাবার তা নিয়েও এদিন সমালােচনা করেন মমতা। এককাট্টা হয়ে আগামী দিনে এনআরসি এবং সিএএ’র বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। পার্ক সার্কাসের জনসমাবেশ থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের আগামীর কর্মসূচিও জানিয়ে দেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।