গত ২০ জুন ‘অসম সাহিত্য সভা, কলকাতা শাখা’ ও অসম সোশিও লিটারারি ক্লাবের (এএসএল ক্লাব) উদ্যোগে কলকাতার সল্টলেকে অসম ভবনের সভাঘরে সৈনিক শিল্পী কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ‘সরস্বতী’ উপাধিতে ভূষিত অসমের সুবিখ্যাত কবি নির্মলপ্রভা বরদলৈয়ের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কলাগুরু ও কবির দ্বৈতবীণা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল। সভার শুরুতে প্রদীপ জ্বালিয়ে এই দুই মহান শিল্পী ও কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যার্পণ করেন এএসএল ক্লাবের অধ্যক্ষা রেখা চলিহা। এরপর এএসএল ক্লাবের সভাপতি হেমেন্দ্র ভট্টাচার্য ও ‘অসম সাহিত্য সভা, কলকাতা শাখা’র সভাপতি জীবন রায় মাল্যার্পণ করেন। পরে সভায় উপস্থিত সকলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার পর এই সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন এএসএল ক্লাবের সম্পাদিকা পিকু সাহা। এরপর ‘উপস্থিত সকলে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘বিশ্বর ছন্দে ছন্দে’ গানটি।
হেমেন্দ্র ভট্টাচার্য সৈনিক শিল্পী রাভার জীবন সংগ্রামের উপর আলোকপাত করেন এবং সদস্যা মামণি গোস্বামী রাভার জীবন বৃত্তান্ত ও তাঁর সঙ্গীত বিষয়ক আলোচনা করেন। অসম সাহিত্য সভার অন্যতম সভাপতি প্রয়াত কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার নির্মলপ্রভা বরদলৈয়ের উপর বক্তব্য রাখেন সাহিত্যিক-অনুবাদক রঞ্জিত বিশ্বাস। কবির কালজয়ী সঙ্গীত পরিবেশন করে জয়ন্ত হাজরিকা, পুলক ব্যানার্জ্জী, ডলী ঘোষ প্রমুখ শিল্পীরা যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, সেকথা উল্লেখ করেন রঞ্জিতা বিশ্বাস। নির্মলপ্রভার গবেষণামূলক কালজয়ী সৃষ্টি ‘দেবী’, ‘শিব’ ও ‘সূর্য’-এর কারণে নির্মলপ্রভাকে সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ গবেষক ও অসমীয়া সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Advertisement
নির্মলপ্রভার কন্যা স্বপ্নালী বরদলৈ এদিনের এই সাংস্কৃতিক পদক্ষেপের জন্য উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান, সেটি সভায় পাঠ করে শোনানো হয়। বাংলাভাষার বিশিষ্ট কবি সৈয়দ হাসমত জালাল মহীয়সী কবির ‘মর্মান্তিক’, ‘হরিণাটো’, ‘করুণতম’, ‘আইনা’ প্রভৃতি সাতটি কবিতার বাংলা অনুবাদ করে এদিন পাঠ করেন। প্রথমে অসমীয়া ভাষায় মূল কবিতা পাঠ করেন মনীষা শর্মা বরঠাকুর ও পরে বাংলা অনুবাদ শোনান তিনি। এই দ্বৈত পাঠ একটি সুন্দর আলেখ্যরূপে পরিবেশিত হয়। সদস্য কমলি বরুয়া, মিতালী শইকীয়া, নমিতা ফুকন, কস্তুরী গোস্বামী, বিদ্যুৎ গগৈ ও পার্থপ্রতিম বরঠাকুর ওই দুই মহান শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশন করেন। নতুন প্রজন্মের সমন্বিতা বিশ্বাস ও সিদ্ধিক্ষা বিক্রম ওই দুই শিল্পীর গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। দুই শিশুশিল্পী মাহিকা ও দিয়া কবি নির্মলপ্রভার গান গেয়ে শোনায়। কলাগুরুর উপর কবিতা আবৃত্তি করেন অবসরপ্রাপ্ত বেতারশিল্পী নেকিব আহমেদ, করুণাকান্ত ডেকা, রেণুকানন্দা হাজরিকা, মণিকুন্তলা গগৈ ফুকন ও দিলীপ কর্মকার। অসমীয়া সাহিত্য থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্য সাহিত্য অকাদেমি অনুবাদ পুরস্কার প্রাপ্ত অনুবাদক-সাহিত্যিক বাসুদেব দাসকে সংবর্ধনা করা হয়।
Advertisement
অসম থেকে জি টিভি সারেগামা অনুষ্ঠানের জন্য মনোনীত বাঁশিবাদক অভি কাশ্যপ বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। এই বালক শিল্পী কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ও নির্মলপ্রভার গান বাঁশিতে বাজিয়ে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। সব শেষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শেষ হয় এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি।
Advertisement



