গত ২৫ মে ‘অসম সাহিত্য সভা, কলকাতা শাখা’র উদ্যোগে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদযাপিত হল রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম-জয়ন্তী। সভার শুরুতে প্রথা মতো ‘চির চেনেহী মোর ভাষা জননী’ গানটি গেয়ে ভাষা জননীকে প্রণাম জানানো হয়। এরপর দুই মহান কবির প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ জ্বালান ও তাঁদের প্রতিকৃতিতে মাল্য অর্পণ করেন ‘অসম সোশিও লিটারারি ক্লাব’-এর অধ্যক্ষা এবং অসমের মাতৃস্বরূপা রেখা চলিহা। সভায় উপস্থিত সমস্ত সদস্যই প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ করে দুই কবিকে শ্রদ্ধা জানান।
৯৩ বছর বয়সী বিদূষী রেখা চলিহার কণ্ঠে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা যেন প্রাণবন্ত রূপ পায়। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক সুমিতা ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে তাঁর বক্তৃতায় বলেন যে, বিশ্বপথের পথিক, মানবদরদী রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ১৯০২ সালে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে প্রকৃতির কাছ থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য মুক্ত আকাশের নিচে গাছতলার ছায়ায় তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে সেই বিদ্যালয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। সেখানে বিশ্বের বহু ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার কারণে বিশ্বের মনীষীদের আগমন ঘটেছিল।
কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি সৈয়দ হাসমত জালাল বলেন যে, নজরুল বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন ভক্তির কবি, প্রেমের কবি ও মানবতার কবি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি যেমন বিদ্রোহ করেছিলেন, তেমনি আবার তিনি একই সঙ্গে ইসলামি সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীত রচনা করেছিলেন, তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ধর্মান্ধতার। রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য এই কবি রবীন্দ্রনাথের মতোই বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়।
‘শঙ্করদেব কনশাসনেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি পরিমল দাস একজন সুপরিচিত সঙ্গীতশিল্পী। তিনি পর পর তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। শাখার সম্পাদিকা মনীষা শর্মা বরঠাকুর একটি রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশন করেন। শাখার সদস্য সৈকত পত্রনবীশ পরিবেশন করেন নজরুলগীতি। সদস্য দিলীপ কর্মকার ও শঙ্কর মজুমদারও একটি করে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। সঞ্চয়িতা বিশ্বাস, নিলাক্ষি কলিতা এবং মালবিকা বরুয়া রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন কস্তুরী শর্মা গোস্বামী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেকিব আহমেদ বলেন, ‘অসম সাহিত্য সভা, কলকাতা শাখা’ অসম ও বাংলার সংস্কৃতির সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। লেখিকা রঞ্জিত বিশ্বাস রবীন্দ্রসাহিত্যে নারী বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। এই সভায় অসমের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক এহসান মজিদ এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পূরবী ভট্টাচার্য প্রমুখ বহু বরেণ্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সভার শেষে সম্পাদিকা মনীষা শর্মা বরঠাকুর বলেন, অসমীয়া ও বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে গঠিত ‘অসম সাহিত্য সভা, কলকাতা শাখা’ সবসময় ভ্রাতৃত্ববোধ উজ্জীবিত করার চেষ্টা করবে।