পরিবেশ ব্রাত্যই থাকে

Written by SNS April 19, 2024 1:02 pm

ভোটের ঝুলি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীরা বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তাদের মুখে অনেক গালভরা প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গেলেও পরিবেশ নিয়ে একটি শব্দও শোনা যায় না৷ রাজনৈতিক দলগুলির ইস্তাহার হোক বা নেতানেত্রীদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা — কোথাও জায়গা পায় না পরিবেশ রক্ষার কথা৷

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম ভারত৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে জলসঙ্কট৷ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহর, সেখানকার প্রশাসন নাগরিকদের জানিয়ে দিয়েছে তারা আর পানীয় জল সরবরাহ করতে পারবে না৷ দ্বিতীয় আমাদের দেশের বেঙ্গালুরু শহর৷ কেপটাউন এখন জলশূন্য, বেঙ্গালুরুও সেই পথে অগ্রসর হচ্ছে৷ এমন অবস্থা যে দেশের আরও কত প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, তার হিসাব নেই৷ বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষকে পানযোগ্য জল বহন করে আনতে হচ্ছে, নয়তো কিনে খেতে হচ্ছে৷ এটা হল উষ্ণায়নের এক পর্যায়৷ অন্যদিকে এই উষ্ণায়নের জেরেই হাজার হাজার বছর ধরে জমে থাকা হিমবাহগুলি গলতে শুরু করেছে৷ মেরু-বরফ ও হিমশৈল গলে সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ ফলে বিশ্বের বেশ কিছু দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকুলীয় অঞ্চল এখন হুমকির মুখে৷ গ্রীষ্মের দাবদাহে জলের সঙ্কটে নাজেহাল দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক৷

আমাদের দেশের রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে উন্মাদনা বেড়েই চলেছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও পরিবেশ সমস্যা ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে৷ তাই কারও মুখে জলসঙ্কটের কথা শোনা যায় না৷ শোনা যায় না নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদনের কথা৷ উন্নয়নের নামে লক্ষ লক্ষ গাছ কাটা হলেও রাজনৈতিক দলগুলির এতে মাথাব্যথা নেই৷ তাই হিমালয়কে কেটে-ছিঁড়ে সহজগম্য রাস্তা বানালেও কোনও প্রতিবাদ ওঠে না রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে৷ সামান্য কয়েকজন পরিবেশ গবেষক বা পরিবেশপ্রেমী কেবল চিৎকার করতে থাকেন৷ বিশ্বের ৬০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য দায়ী ১২টি দেশের মধ্যে ভারতও অন্যতম৷ সু্যইৎজারল্যান্ডের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এক সমীক্ষা চালিয়েছিল প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে৷ তাতে জানা গিয়েছে, ২০২১ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ৭.১১ শতাংশ বেড়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, এবছর বিশ্বে ২২ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ৭০ মিলিয়ন টন পরিবেশ দূষণ করবে৷ বিশ্বের ৬০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য যে ১২টি দেশ দায়ী, তার মধ্যে প্রথম চিনের পরেই রয়েছে ভারতের স্থান৷ তারপর রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ইরান প্রভৃতি দেশ৷ ভারত এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷ অথচ আমাদের দেশে নির্বাচনী প্রচার বা রাজনীতিতে এই ধরনের দূষণচিত্র ইসু্য হয়ে ওঠে না৷ পরিবেশ নিয়ে আসলে ইউরোপ-আমেরিকার মতো আমাদের দেশে রাজনীতি হয় না৷

মানুষের দ্বারা যেসব কারণে পৃথিবীর ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, তার মধ্যে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র, ভূ-উষ্ণায়ন, সমুদ্রজলের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সিনথেটিক বায়োলজির সৌজন্যে নতুন কোনও অতিমারির আগমন এবং প্লাস্টিকের আত্মঘাতী ব্যবহার৷ একমাত্র রাষ্ট্রশক্তিগুলিই পারে কঠোর বিধিনিষেধের মাধ্যমে মানুষকে আসন্ন বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর জ্বর মেপে শঙ্কিত হচ্ছেন৷ কিন্ত্ত রাষ্ট্রনেতাদের তাতে কোনও মাথাব্যথা নেই৷ আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে উন্নত দেশগুলি সুবিস্তৃত পরিকল্পনা ও প্রস্ত্ততিও সেরে ফেলেছে৷ কিন্ত্ত আমাদের দেশে নির্বাচনের প্রাক্কালে কোনও দল বা নেতার মুখে শোনা যায় না প্রকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা৷ শোনা যায় না পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার কথা৷ পরিবেশ সমস্যা আমাদের দেশে কেন যে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারল না, তা নিয়ে পরিবেশরক্ষা কর্মীদের যথেষ্ট আফশোস রয়েছে৷ এবারের ভোট ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ এই মানবিক সমস্যাটি এখনও ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে৷