তথ্য গোপন করা বন্ধ করুন, মমতাকে তোপ ধনকড়ের

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজভবন নবান্নের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত। করোনাভাইরাস নিয়ে রাজ্য তথ্য গোপন করছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

Written by SNS Kolkata | May 3, 2020 6:50 pm

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। (File Photo: IANS)

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজভবন নবান্নের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত। করোনাভাইরাস নিয়ে রাজ্য তথ্য গোপন করছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এই মর্মে শনিবার টুইট করেন তিনি। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখেন, করোনা তথ্য লুকনো বন্ধ করে সবার সামনে তা প্রকাশ করুন।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় গরমিলের অভিযোগ তুলে শনিবার টুইটে রাজ্যপাল রাজ্যের দু’টি নথির কথাও উল্লেখ করেন যার একটিতে রয়েছে ৩০ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে করোনা অ্যাক্টিভের সংখ্যা এবং একই তারিখে স্বাস্থ্যসচিবের কেন্দ্রকে মোট করোনা আক্রান্ত নিয়ে যে তথ্য দিয়েছিল, তার মধ্যে ফারাক থাকার বিষয়টির উল্লেখ করেছেন টুইটে।

রাজ্যপাল টুইটে লিখেছেন ৩০ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে ৫৭২ জন অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের উল্লেখ ছিল। অন্যদিকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে রাজ্যে ৯৩১ জন মোট আক্রান্ত।

৩০ এপ্রিল মুখ্যসচিবের পরিসংখ্যান দেওয়া আক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যার (৫৭২) সঙ্গে মৃত (৩৩) এবং রোগমুক্তদের সংখ্যা (১৩৯) যোগ করলেও কোনওভাবেও ৯৩১ সংখ্যা পাওয়া যায় না। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসচিব এবং মুখ্যসচিবের দেওয়া পরিসংখ্যানের এই গরমিলটিই তথ্য প্রমাণ সমেত টুইটারে তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

একই সঙ্গে পয়লা মে স্বাস্থ্য দফতর থেকে কেন কোনও বুলেটিন প্রকাশ করা হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন রাজ্যপাল। এমনকী স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটটিও কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল।

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান করোনা মোকাবিলায় কোন রাজ্যের কোন জেলা কোন জোনের অন্তর্ভুক্ত তার একটি তালিকা মুখ্যসচিবদের পাঠান। এই চিঠি পাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে কেন্দ্রীয় তালিকায় ভুল রয়েছে বলে যুক্তি দেখান।

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বলেন, এই রাজ্যের চারটি জেলা রেড জোনে আছে, দশটি জেলা নয়। ওই চিঠির সঙ্গেই তিনি এই রাজ্যের কোন জেলায় কতজন এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে, তার হিসেব দিয়ে একটি তালিকা পাঠান যেখানে সব রাজ্যের আক্রান্তের সংখ্যা যোগ করলে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩১। দুই সচিবের দেওয়া পরিসংখ্যানের মধ্যে ফারাকটি বিতর্কের সুত্রপাত ঘটায়।

এদিকে শুক্রবার সন্ধেয় নবান্নের তরফে বলা হয়, বিবেককুমারের চিঠিতে কিছু তথ্যে ভুল রয়েছে। তা সংশোধন করে আসল পরিসংখ্যান জানানো হবে। কিন্তু শনিবার বিকেল চারটে পর্যন্ত নবান্ন থেকে কোনও সংশোধিত পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। এছাড়া শুক্রবার পয়লা মে, ছুটির দিনে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও বুলেটিনও দেওয়া হয়নি। ওয়েবসাইটটি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ দেখাচ্ছিল। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে তা খোলা যাচ্ছিল না।

রাজ্য সরকারের দুই দফতরের দেওয়া তথ্যের অসংগতি এবং শুক্রবার বুলেটিন প্রকাশ না করার ইস্যু নিয়েই শনিবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল। যদিও নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায় একটা অনিচ্ছাকৃত ভুলকে হাতিয়ার করে বিতর্ক তৈরি করছেন রাজ্যপাল। ওই আধিকারিকের কথায় এ পর্যন্ত করোনা তথ্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে রাজ্য সরকার। যথা সময়ে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হবে।

প্রসঙ্গত রাজ্য সরকারে দেওয়া পরিসংখ্যানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বলা হয় না। স্বাস্থ্য দফতর যে বুলেটিন দেয়, সেখানে ওইদিন পর্যন্ত কতজনের শরীরে করোনাভাইরাস সক্রিয় রয়েছে, সেই সংখ্যা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে কেন্দ্রের বুলেটিনে মোট কতজন করোনা আক্রান্তে তার হিসেব থাকে কেন্দ্র এবং রাজ্যের হিসেব দেওয়ার পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। তবে সেই হিসেব ধরলেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যানগত পার্থক্যটা ব্যাখ্যা করা যায় না।

এদিকে শনিবার কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনেও পশ্চিমবঙ্গের কোনও করোনা পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলেই আপডেট দেওয়া যায়নি।

রাজ্যে কতজন করোনা আক্রান্ত এবং কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা সরকার গোপন করছে বলে মার্চের শেষ দিক থেকেই অভিযোগ তুলে আসছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রত্যেকেই শনিবার ফের সরব হয়ে বলেন, সরকার প্রতিদিন যেভাবে তথ্য বদল করছে, তাতেই প্রমাণ হয় যে সরকার তথ্য গোপন করছে।

বিরোধীদের মতো রাজ্যপালও মমতাকে অভিযোগের তির বিধে বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, বিশ্বব্যাপী এই মহামারির সময় রাজনীতিকে দুরে সরিয়ে রাখুন। তার কথায় দেশের কোনও রাজ্যে কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রক দলকে এরকম বাধার মুখে পড়তে হয়নি। শুধু বাংলার সরকারই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে বাধা দিয়েছে।