গুজব রটালে কড়া ব্যবস্থা, দোকান বাজার খোলা থাকবে : মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, দোকান বাজার সব খোলা থাকবে, কিছু সীমান্ত বন্ধ হলেও পণ্যের কোনও ঘাটতি হবে না রাজ্যে।

Written by SNS Kolkata | March 20, 2020 4:22 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File photo: IANS)

করোনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন তখনও এসে পৌছয়নি রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে। তার আগেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে একসঙ্গে ডেকে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগেই করোনা প্রতিরোধে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করলেন। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে মাস্ক, গ্লাভস, থার্মাল গান, সংক্রমণরোধী বিশেষ পোশাক ইত্যাদি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। 

জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে করোনা কিট না এলেও রাজ্য সরকার নিজস্ব উদ্যোগে সেগুলির তৈরি পরিকল্পনা করেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইসোলেশন কেন্দ্রগুলিতে মোট ৮০০ বেডের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাই অকারণে আতঙ্কিত না হয়ে করোনা সতর্কতার নিয়মগুলি মেনে চলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে করোনাকে কেন্দ্র করে দোকান বাজার বন্ধ রাখা, পণ্যের ঘাটতি হওয়ার গুজব রটালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি মমতার।

মমতা এদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, দোকান বাজার সব খোলা থাকবে, কিছু সীমান্ত বন্ধ হলেও পণ্যের কোনও ঘাটতি হবে না রাজ্যে। তার মতে এটা ব্যবসায়ে মুনাফা লোটার সময় নয়, বিপদের সময়। যেখানে সবাইকে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। সরকারি দফতরের আধিকারিকদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির ওপর রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার সারা দেশে যখন চতুর্থ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে, তখন এই রাজ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করোনা মোকাবিলায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বিশেষ রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সম্মিলিতভাবে কাজে লাগাতে বেশ কিছু কর্মপদ্ধতি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

করোনা আক্রান্তদের মোকাবিলায় রাজ্যের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার চিত্রটি ফুটে ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। রাজ্যের বেলেঘাটা আইডিতে আইসোলেশন ওয়ার্ডের বেডের সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে। এম আর বাঙ্গুরের মাল্টি সুপার বিল্ডিং-এ ১৫০’টি শয্যা রাখা হয়েছে করোনা সংক্রামিতদের চিকিৎসার জন্য। আর জি কর হাসপাতালে ৫০ বেডের নাইট স্টে বিভাগটিকেও আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিণত করা হবে অস্থায়ীভাবে। এছাড়াও রাজারহাটে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের ক্যাম্পাসের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ জনকে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা আক্রান্ত ৮০০ জনকে স্থান দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলাগুলিতেও আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির ভানাচিন্তা করছে রাজ্য সরকার। 

বৈঠকে উপস্থিত সরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও প্রতিনিধিদের মাস্ক, গ্লাভস, থার্মাল গান, বিশেষ পোশাক (পিপিই) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ইতিমধ্যেই দু’লক্ষ মাস্ক এবং ৩০ হাজার গ্লাভস, ১০ হাজার থার্মাল গান ইত্যাদির অর্ডার দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও এই ধরনের অ্যাক্সেসরিজ অর্ডার দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। সরকারি যোগান ছাড়াও ফুসফুস পরিশুদ্ধ করার ইসিএমও মেশিন, ভেন্টিলেটর মেশিন কেনার জন্য করপোরেট স্পনসরদেরও এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান। 

করোনা চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে ১০’টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালগুলিতে ৫’টি করে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হবে বলে জানান। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত বলে মনে করেন মমতা । মাস্ক কিংবা গ্লাভসের ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করতে রাজি নন মমতা। আইসিডিএস কর্মীদের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। 

রাজ্যের মানুষের স্বার্থেই বিদেশ থেকে আগতরা যাতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরীক্ষা করান এবং দু’সপ্তাহ পর্যন্ত গৃহবন্দি বা কোয়ারান্টাইনে থাকেন সেজন্য আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। 

করোনা আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে কোথাও কোথায় বাজার বন্ধের জন্য হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে পুলিশি নজরদারির নির্দেশ দেন। কোনও মুল্যেই কালোবাজারি বরদাস্ত করা হবে না। কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ানো হয় সেদিকে পুলিশ নজর দিতে বলেন। এই বিষয়ে জেলাতেও পুলিশ সুপার, কমিশনার, আই সি’দের সক্রিয় থাকতে বলেন। 

স্কুলগুলি বন্ধ থাকলেও মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ করা চাল এবং আলু বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। 

বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু ট্রাক মালপত্র নিয়ে সীমান্তে আটকে রয়েছে। সেগুলিকে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। ট্রাকের মধ্যে থাকা পণ্যসামগ্রী নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চান মুখ্যমন্ত্রী। 

করোনার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের শনি ও রবিবারও দিনও প্রয়োজনে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। বেসকারি হাসপাতালের ডাক্তারদেরও আহ্বান জানান সরকারি হাসপাতালে ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে পরিষেবা দিতে। 

করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিবদের মধ্যে জেলাগুলির দায়িত্ব বন্টন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা ওই জেলাগুলির পরিস্থিতি দেখে সামগ্রিক রিপোর্ট দেবেন মুখ্যসচিব এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে। সুব্রত গুপ্তকে দার্জিলিং ও কালিম্পং, এস কিশোরকে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার, অজিত বর্ধনকে জলপাইগুড়ি, বি পি গোপালিকাকে দুই দিনাজপুর, রাজেশ সিনহাকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ, রাজেশ পাণ্ডেকে নদীয়া  ও উত্তর চব্বিশ পরগণা, নবীন প্রকাশকে পশ্চিম মেদিনীপুর, এস এ বাবাকে পূর্ব মেদিনীপুর, হৃদেশ মোহনকে বীরভুম, সুনীল কুমারকে দুই বর্ধমান, এম বি রাওকে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া, মনোজ পন্থকে হুগলি, ওংকার মীনাকে হাওড়া, প্রভাত গুপ্তকে কলকাতার দায়িত্ব দেন। 

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার এবং নবান্নের আধিকারিকদের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরিরও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আশা যুদ্ধ যতই কঠিন হোক এইভাবে একজোট হয়ে করোনার আক্রমণ রুখতে সফল হবে বাংলা।