ঘরে থাকুন, আম্ফানে সতর্কবার্তা মমতার

আম্ফান পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা বারোটা থেকে বৃহস্পতিবার অন্তত সকাল দশটা পর্যন্ত কেউ ঘর থেকে বেরোবেন না।

Written by SNS Kolkata | May 20, 2020 9:41 pm

সুপার সাইক্লোন'আম্ফান (Photo by Munir Uz zaman / AFP)

একদিকে করোনার থাবা, অন্যদিকে মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো ঘূর্ণিঝড়। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা বারোটা থেকে বৃহস্পতিবার অন্তত সকাল দশটা পর্যন্ত কেউ ঘর থেকে বেরোবেন না। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে এই সতর্কবার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বর্তমান করোনা আবহে লকডাউনে বাইরে বেরনোর জন্য কিছুটা ছাড় মিললেও আম্ফানের সময় একেবারেই ঘরবন্দি থাকতে বললেন তিনি। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে আম্ফান ঘূর্ণিঝড় নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা বলেন, আবহবিদরা বলছেন এই ঝড়ের তীব্রতা আয়লা-বুলবুলের চেয়েও বেশি হতে পারে।

আম্ফানের জন্য মঙ্গলবার সন্ধে থেকে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বুধবার দুপুরে এই আম্ফান ‘হিট’ করবে। আছড়ে পড়বে উপকূল অঞ্চলে। মধ্যরাত পর্যন্ত এর তাণ্ডব চলবে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে আম্ফান বাংলাদেশের দিকে সরে যেতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের তিনটি অংশ, মাথা (হেড), চোখ (আই) এবং লেজ (টেল)।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথম যেটা হিট করবে, সেটা মাথা। তারপর ঝড়টা থেমে গেলেও ভাববেন না যে, সেটা বিদায় নিয়েছে। আরেকটা দমকা আসবে। আর শেষ বড় ধাক্কা দেবে টেল।

মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফণীর সময় এই টেল-এর জন্য ওড়িশায় ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি বেশি হয়েছিল। কারণ ওড়িশার মানুষ ফণীর টেল পর্বটা আসার আগে বুঝতে না পেরে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল। তাই বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসন বার্তা দেওয়ার পর্যন্ত এই রাজ্যের বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে বের না হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই ঝড়ের সময় বাচ্চা এবং বৃদ্ধদের ওপর বেশি নজর দেওয়া জরুরি। ঘূর্ণিঝড়ে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বলেছেন মমতা।

সেইসঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ত্রাণ শিবির থেকে যাতে কোনওভাবেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য সেখানেও মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এগুলির ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষকেই যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।

মমতা এদিন বলেন, উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে প্রায় তিনলক্ষ মানুষকে সরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে প্রত্যেককে সুরক্ষিত রাখার বরকম চেষ্ট করা হচ্ছে। কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশ এই আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে জানান, আম্ফান মোকাবিলায় মুখ্যসচিরে নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উপকূলবর্তী জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ কমিশনার, বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বৈঠক করে দুর্যোগ মোকাবিলায় সবরকম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় বুধবার সারারাত নবান্নেই থাকছে টিম মমতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য নবান্নে টোল ফ্রি হেল্প লাইন নম্বর ১০৭০ চালু রয়েছে। এছাড়াও এই ২২১৪-৩৫২৬ এবং ২২১৪-১৯৯৫ এই দুটি হেল্পলাইন নম্বরে যে কোনও সমস্যায় ফোন করা যাবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই দুর্যোগের মধ্যে যাতে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনগুলি যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুর্যোগ না থামা পর্যন্ত ট্রেনগুলি বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন মমতা। এই বিষয়ে রেলমন্ত্রক এবং একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখ্যসচিব রাজীব সিন্হাকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।