রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সম্পূর্ণ পুরভোট বাতিল করে পুনর্নির্বাচন, দাবি করলেন শুভেন্দু 

পুরভোটের শেষ প্রহরে উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। কলকাতার পুরভোটকে তৃণমূলে নেত্রী শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও বিরোধী দলনেতার কাছে তা প্রহসন।

Written by SNS Kolkata | December 20, 2021 9:17 pm

পুরভোটের শেষ প্রহরে উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। কলকাতার পুরভোটকে তৃণমূলে নেত্রী শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও বিরোধী দলনেতার কাছে তা প্রহসন।

ঢালাও ছাপ্পা ভোট সিসিটিভি অকেজো রাখা, বুথ জ্যাম, বিরোধী প্রার্থী ও এজেন্টদের মারধর, কুড়ি শতাংশের বেশি সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারা ইত্যাদি যুক্তি দেখিয়ে কলকাতা পুরসভার সব ওয়ার্ডের ভোট বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

রবিবার সন্ধেয় জনা কুড়ি বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে কলকাতার সব বুথে ভোট বাতিলের আবেদন জানান বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।

একই দাবি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছেও গিয়েছেন তারা। রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, উত্তর কোরিয়ার মতো এখানেও তানাশাহি নির্বাচন হয়েছে।

সেখানকার স্বৈরশাসক কিম জঙের মধ্যে তবু গণতন্ত্রের এক-দুই শতাংশ অবশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাজলজ্জা সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

এদিন বাম আমলের কথা স্মরণ করিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ২০০৫ সালে এর থেকে কম পরিমাণ ভোট লুঠ হয়েছিল সেইসময় যারা শাসক ছিল তাদের পতন তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।

গণতন্ত্রের শুভেন্দু অধিকারী এদিন অভিযোগ করেন এক একজন পাঁচ-ছটা করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। স্টিকার লাগিয়ে অধিকাংশ সিসিটিভ অচল করে রাখা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের ২০ শতাংশও ভোটও দিতে পারেননি।

কলকাতায় যেভাবে নির্লজ্জভাবে ভোট লুঠ হয়েছে সেজন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

তিনি বলেন হচ্ছে, সৌরভ দাস আর সৌমেন মিত্রের নেতৃত্বে হচ্ছে। আর নেপথ্যে থেকে অঙ্গুলিহেলন করছেন আর একজন।

শুভেন্দু এদিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, হাইকোর্টের অর্ডারে ভোট হচ্ছে। যা বোঝার হাইকোর্ট বুঝবে। পুরভোটের অনিয়মের সমস্ত প্রমাণ, ফুটেজ তাঁদের কাছে রয়েছে বলে জানিয়ে দেন শুভেন্দু প্রয়োজনে তা কোর্টে দাখিল করবেন বলেও জানান শুভেন্দুবাবু।

তবে আদালত তো শেষ অস্ত্র। আপাতত গণ আন্দোলনকেই হাতিয়ার করতে চান বিরোধী দলনেতা রবিবার রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি জানিয়ে দেন জেলায় জেলায় অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

অন্তত শতাধিক জায়গায় এই বিক্ষোভ দেখানো হবে। এদিন বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বৈঠকের জন্য তার সল্টলেকের বাড়িতে ছিলেন জনাকুড়ি বিধায়কসব গেরুয়া পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা।

ওই বাড়ি বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে পুলিশ। বিশাল পুলিশবাহিনী দিয়ে কমিশনারেটের আধিকারিকদের বচসায় জড়ান বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। কোন নির্দেশের ভিত্তিতে এই ঘেরাও, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এরপর বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরনোর সনয় শুভেন্দু অধিকারীকে আটকে দেয় পুলিশ। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি ঘেরাওয়ের বিষয় নিয়ে টুইটে সোচ্চার হন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।

অন্যদিকে রবিবার বিকেল তিনটে নাগাদ জনা ছ’য়েক বিজেপি বিধায়ক এমএলএ হস্টেল থেকে বেরোতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে তালা লাগানো রয়েছে। বেরোতে না পেরে উঠোনেই বসে স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা।

অথচ ওই একই সময়ে এমএলএ হোস্টেল থেকে বাইরে আসার জন্য মানস ভুঁইয়্যাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী।

এইসব ঘটনার জন্য নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে শুভেন্দু বলেন, তোলামুল পার্টির মালিকের নির্দেশে এদিন বিজেপি বিধায়কদের ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে পুলিশ আটকে দিয়েছে। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদি-শাহদের ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়েছিলেন।

এদিন এমএলএ হস্টেলে বিধায়কদের কার্যত গৃহবন্দি করে রাখার জন্য কলকাতা পুলিশকে কাঠগড়ায় তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের বিরুদ্ধে এদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ আনেন শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী এদিন প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যপালকে কীভাবে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই ভোট দিতে হল? আইএএস অফিসার সৌরভ দাসকে এর মাসুল দিতে হবে এমন ইঙ্গিতও দেন বিরোধী দলনেতা।

এই প্রসঙ্গে তিনি প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার জন্য বিপাকে পড়ার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। সব মিলিয়ে রবিবারের পুরভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূল-বিজেপির দ্বৈরথ জমে ওঠে।