২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে খড়গপুর সদরে ঘর গোছানোর কাজে হাত দিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু দলের ভিতরে বিভিন্ন উপদলের কোন্দল খড়্গপুরে চিন্তায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
২০১৬ সাল অবধি খড়গপুর সদরের বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল। দশবারের বিধায়ককে হারিয়ে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জেতার পর দিলীপবাবুর ছেড়ে যাওয়া জায়গায় উপ নির্বাচনে জয়ী হন খড়গপুরের তৎকালীন পুরপ্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদীপ সরকার। ২০২১ সালে খড়গপুর সদর হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। জয়ী হন বিজেপির হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। ২০২৬ সালে খড়গপুর সদরের জমি পুনর্দখল করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যে খড়গপুর সদর বিধানসভা এলাকায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। এই বৈঠকে রাজ্য থেকে আগত দুই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
খড়গপুর শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল কারও অজানা নয়। এই গোষ্ঠীর বিন্যাস মাঝে মাঝেই বদলে যায়। ফলে দলের সাধারণ কর্মীদেরও নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা দুষ্কর হয়ে ওঠে। সম্প্রতি ডিআরএম বাংলো ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরেও তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ এই কর্মসূচিতে গরহাজির ছিলেন। শুক্রবারের সান্ধ্যকালীন বৈঠকে দলীয় কাউন্সিলর, ওয়ার্ড সভাপতি এবং বিভিন্ন শাখা সংগঠনের শহর সভাপতিদের ডাকা হয়েছিল। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ সকলকে আমন্ত্রণ জানান। ওই দিনই সকালে পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের বিরোধী গোষ্ঠী একটি বৈঠকে বসে। এই বৈঠকে স্থির হয় সান্ধ্যকালীন বৈঠকে তারা হাজির হবেন না। প্রশাসনের একাংশ চাইছে না তারা ওই বৈঠকে যান। দুই কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ এবং চন্দন সিং কয়েকজন কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আসেন। দলের কাউন্সিলরের কাছেই পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ এই খবর জানতে পারেন। তিনি সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরেই রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে সকলে সান্ধ্যকালীন বৈঠকে হাজির হন।
Advertisement
খড়গপুর শহরে বর্তমানে কোনও স্থায়ী সভাপতি নেই। বৈঠকে এই বিষয়টি অনেকেই তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, স্থায়ী সভাপতি নিয়োগ না হলে নির্বাচনে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নমিতা চৌধুরী বৈঠকে বলেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেবাশিস চৌধুরীকে যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ভারতী ঘোষ এসপি থাকাকালীন একজন অপরিপক্কের হাতে সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ কর্মী এবং নেতা দল যাঁকে প্রার্থী করবে তাঁকেই সমর্থন করার কথা জানিয়ে দেন। বৈঠক প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ। তিনি বলেন, এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ বলেন, আমরা কারও কাছে গিয়ে বৈঠকে না যাওয়ার কথা বলিনি। আমাদের নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
শুক্রবারের সান্ধ্যকালীন বৈঠকের একটাই নির্যাস, খড়গপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ এত সহজে কমার নয়। রাজ্য নেতৃত্বের চাপে সকলে একসঙ্গে হলেও ভোট ঘোষণা হলে কে কোন পথে হাঁটেন, সেটাই দেখার।
Advertisement



