সন্দেশখালিতে এখন চলছে র‍্যাফ ও পুলিশের টহলদারি

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময়। যদিও এর পরও আতঙ্ক কাটেনি সন্দেশখালি ন্যাজাটের হাটগাছি এলাকায়। আতঙ্কের ছাপ ধরা পড়েছে সেখানের মানুষের চোখে মুখে।

Written by SNS Kolkata | June 10, 2019 2:32 pm

শোকের ছায়া নেমে পড়েছে মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবারে (Photo: IANS)

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময়। যদিও এর পরও আতঙ্ক কাটেনি সন্দেশখালি ন্যাজাটের হাটগাছি এলাকায়। আতঙ্কের ছাপ ধরা পড়েছে সেখানের মানুষের চোখে মুখে। এলাকার প্রতি গলিতে রয়েছে র‍্যাফ ও পুলিশ। একই সঙ্গে চলছে গাড়িতে করে টহলদারি।

মৃত তৃণমূল কর্মী কায়ুম মােল্লার বাড়িতে সন্তানহারার যন্ত্রণায় শােকার্ত হয়ে যন্ত্রনায় ছটপট করছেন। একই দৃশ্য ধরা পড়েছে সুকান্ত মন্ডল এবং প্রদীপ মন্ডলের বাড়িতেও। শােকার্ত অবস্থায় সকল পরিবারের সদস্যরা চোখের জল মুছতে মুছতে একই কথা বলে চলেছে যেন কারাের সাথে এ ঘটনা না ঘটে। কারাে মায়ের কোল যেন খালি না হয়।

শনিবাবের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে হাটগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রশাসনের তরফে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। পরিস্থিতি যেন না বিগড়ােয় সেকথা মাথায় রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। গ্রামে মােতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।

তৃণমূল এবং বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে কয়েকজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁদের। এলাকাবাসীদের কথামত আশেপাশের ভেড়িগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে র‍্যাফ এবং পুলিশ। এলাকাবাসীর আশঙ্কা হামলা চালানাের পর মেরে দেহ ভেড়ির মধ্যে রেখে দিতে পারে দুষ্কৃতীরা।

বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিত দেবদাস মন্ডলের খোঁজ না মেলায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের একটাই আবেদন তাঁদের ছেলেকে খুজে দিন তাঁর। বাবা বাসুদেব মণ্ডল অভিযােগ করে বলেন, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বােমা নিয়ে। যদিও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে খুন করেছে বলেও আশঙ্কা করেছেন। পরিবারের একমাত্র রােজগেরে ছিলেন দেবদাস। ন’বছরের এক ছেলে ও ছােট্ট সাত বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর। দেবদাস নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় বিধ্বস্ত মন্ডল পরিবার।

পরিবারে তরফ থেকে অভিযােগ করে বলা হয় শনিবার যখন এ ঘটনা ঘটছে তখন পুলিশ সামনেই ছিল। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। হামলা ঠেকাতে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। নিছক দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এ ঘটনায় পুলিশে উপরও একপ্রকার ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

এদিনই নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবারে সঙ্গে দেখা করতে রবিবার যান বিজেপির শীর্ষ নেতারা। ছিলেন দিলীপ ঘােষ, মুকুল রায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, অর্জুন সিং, শান্তনু ঠাকুর সহ নেতৃত্ব। বিজেপি নেতৃত্ব বসিরহাট হাসপাতালে পৌঁছে কথা বলেন নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সমবেদনা জানান।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে মুকুল রায় অভিযােগ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী উস্কানি দিচ্ছেন বাংলায় গন্ডগোল করার জন্য। সন্দেশখালিতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আমাদের কর্মীরা। আরও বহু কর্মীরা গ্রামছাড়া। পাশাপাশি অভিযােগ করে বলেন, শেখ শাহাজাহানের নেত্বত্বেই এই হামলা হয়েছে। পুলিশ কোনও সহযােগিতা করছে না। পুরাে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জানিয়েছেন তিনি।

বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূল বিজেপি জানি না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে আক্রমণ করা হচ্ছে। আমরা এই হত্যার প্রতিবাদ করছি। রাহুল সিনহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দলের সদস্যরা চোর, গুন্ডা। ওরা শহিদদের মর্যাদা পেতে পারে না। আসল শহিদ হলেন নহত বিজেপির কর্মীরা। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দলও যায় ন্যাজাটে। খাদ্যমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে পাঁচ জন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যায় সেখানে। নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

কায়ুম মােল্লার মৃত্যুতে সিবিআই সিআইডি তদন্তের দাবি তুলেছেন মৃত কায়ুমের বাবা। ছেলের মৃত্যুর জন্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ, রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে দায়ী করেছেন তাঁরা। নিহত কায়ুম মােল্লার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সবরকম সহযোগীতার আশ্বাস দেওয়া হয়।

নিহত দুই কর্মীর দেহ নিয়ে পরিবার কলকাতায় দাহ করতে চান বলে জানা যায়। তাদের ইচ্ছেমত নিমতলা শ্মশ্মানে শেষকৃত্য করার জন্য নিয়ে যাওয়ায় ব্যবস্থা করে বিজেপি নেতারা। মালঞ্চ মোড় এবং পরে মিনাখায় আটকে দেওয়া হয় বিজেপিকে। পুলিশ বাধা দেওয়ায় মিনাখায় রাস্তাতেই শব দেহ দাহ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বিজেপির তরফে। বিজেপির নিহত কর্মীদের শেষকৃত্য সম্পন্নের জন্য কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও শহরে আসতে পারলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে রাজ্য সভাপতিকে জানানাে হয় যে কর্মীদের দেহ তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে। সেখানেই অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া হবে। শেষকৃত্য পর্যন্ত সেখানে থাকতে বলা হয়েছে রাজসভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ দলের পাঁচ সাংসদকে।

এখনও পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ এবং র‍্যাফ টহলদারি চালাচ্ছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে তল্লাশি চালানাে হচ্ছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।