• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

মতুয়ার নাগরিকত্ব ইস্যুতে চুপ প্রধানমন্ত্রী, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে নিশানা তৃণমূলকে

‘তৃণমূল যে এসআইআর  বিরোধিতা করছে, সবটাই শুধু অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে‘

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রানাঘাটের তাহেরপুরে জোড়া সভা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। একটি প্রশাসনিক এবং অপরটি রাজনৈতিক। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য তাহেরপুর থেকে কপ্টার ফিরে আসতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে অডিও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। অডিও বার্তায় ভোটমুখী বঙ্গে বিজেপিকে জেতানোর ডাক দেন তিনি। এদিনও অনুপ্রবেশের তত্ত্বেও শান দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বললেন, ‘তৃণমূল যে এসআইআর  বিরোধিতা করছে, সবটাই শুধু অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে।‘

সম্প্রতি এসআইআরের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকায় দেখা যাচ্ছে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাতেই বেশি নাম বাদ পড়েছে। শনিবার মতুয়াগড় বলে পরিচিত রানাঘাটে সভা করার কথা ছিল তাঁর। প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের নাগরিকত্ব ইস্যুতে আশ্বাস দেবেন, সেই আশায় ছিলেন তাঁরা। তবে কয়েক মিনিটের ভার্চুয়াল ভাষণে মোদী সে পথে হাঁটেননি। মতুয়াদের মন পেতে মোদীর মুখে শুধুই শোনা গেল ‘জয় নিতাই’। জয় নিতাই বলে এ দিন ভাষণ শুরু করেন তিনি। নদিয়ার ইতিহাস ছুঁয়ে হরিনাম সংকীর্তনের প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। তার সঙ্গেই জুড়েছেন মতুয়া সমাজের কথা। হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং বড়মা-র কথা স্মরণ করে বাংলায় মতুয়াদের গুরুত্বের কথা শোনা যায় মোদীর মুখে।

Advertisement

কয়েকদিন আগেই বন্দেমাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি নিয়ে আলোচনা হয় সংসদে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন করায় তুমুল শোরগোল পড়ে যায়। সংসদের মধ্যেই ভুল শুধরে দেন তৃণমূলের সাংসদ সৌগত বসু। তিনি বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বাবু’ সম্বোধন করার অনুরোধ জানান। এ দিনও বন্দেমাতরম এবং স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। তবে এ দিন ‘বঙ্কিমবাবু’ বলেই সম্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

এসআইআর প্রক্রিয়ায় খসড়া তালিকা অনুযায়ী, শুধুমাত্র রানাঘাট উত্তর-পূর্ব ও রানাঘাট দক্ষিণেই ৪২ হাজার মতুয়ার নাম বাদ পড়েছে। উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে সেখানকার মানুষদের মধ্যে। এই অবস্থায় শনিবার মোদীর সভাকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ বাড়ছিল। হাজার হাজার মতুয়া আশায় ছিলেন, নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও বড় ঘোষণা করতে পারেন মোদী। কিন্তু অডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে সে পথে একদমই হাঁটতে দেখা গেল না।

প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের তৃণমূল খুব প্রিয়। কারণ অনুপ্রবেশকারীদের তৃণমূল লালন-পালন করছে।’ মোদীর দাবি, ‘তৃণমূলের আমলে বাংলায় মহাজঙ্গলরাজ চলছে।’ সদ্য বিহারে এনডিএ জয়ী হয়েছে। সেই জয়ে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী বিহারের সঙ্গে বাংলাকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, ‘গঙ্গা মাইয়া বিহার থেকেই বাংলার উপর দিয়ে বয়ে যায়। বিহারে যেমন এনডিএ জিতেছে, এবার বাংলাতেও তাই হবে। বিহারে জঙ্গলরাজের সমাপ্তি হয়েছে, এবার বাংলাতেও হবে।‘ আর এক প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার উদাহরণও টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরা এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলা পিছিয়ে যাচ্ছে। বিজেপিকে এবার সুযোগ দিন।‘

মোদীর বক্তব্য মতুয়াদের কোনও দিশা দেখাতে পারল না বলে মত অনেকের। চিন্তার কোনও সুরাহা হল না বলে মনে করছে মতুয়া সমাজের একাংশ। যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়েছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে ‘দিশাহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন‘  বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সভার শেষ হওয়ার পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন কুণাল ঘোষ। সেখানে তিনি বলেন, ‘এসআইআর নামক বিজেপি প্রভাবিত নির্বাচন কমিশনের হঠকারিতায় যারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছেন, তাঁদের জন্য বার্তা দিতে পারতেন। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনও বার্তা নেই।‘

তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন কারোর নাগরিকত্ব যাবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শান্তনু ঠাকুর বা বিজেপির নেতারা মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। তবে শনিবার মোদীর বক্তব্যে এ বিষয়টি প্রাধান্য না পাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মোদীর মতুয়া নাগরিকত্ব প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া কি আদতে চাপ বাড়াবে বঙ্গ বিজেপিতে, উঠছে প্রশ্ন।

 

 

Advertisement