সভানেত্রী মমতা, আপাতত তৃণমূলে সব পদের অবলুপ্তি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আপাতত তৃণমূলের সমস্ত শীর্ষপদের অবলুপ্তি ঘটানো হল। শনিবার জাতীয় কর্মসমিতির ২০ জন সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।

Written by SNS Kolkata | February 13, 2022 12:18 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: SNS)

জাতীয় স্তরে সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আপাতত তৃণমূলের সমস্ত শীর্ষপদের অবলুপ্তি ঘটানো হল। শনিবার জাতীয় কর্মসমিতির ২০ জন সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে এদিন সুব্রত বক্সি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন মমতা।

দলের শীর্ষস্তরে সাতজন নেতানেত্রী এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে মমতা, অভিষেক একান্তে বৈঠক করেন।

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে সুব্রত বক্সির দলীয় কার্যালয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা বৈঠক করেন। এদিনের বৈঠকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে।

এদিন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কমিটিতে তৃণমূল সুপ্রিমো সহ মোট ২০ জন সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এদিন প্রাথমিকভাবে ১৬ জনের নাম ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কর্মসমিতিতে রয়েছেন অমিত মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অসীমা পাত্র, মলয় ঘটক, রাজীব ত্রিপাঠী, অনুব্রত মণ্ডল, বুলুচিক বরাইক, গৌতম দেব।

পরে ফিরহাদ হাকিম জানান, জাতীয় কর্মসমিতির তালিকায় থাকা বাকি সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন তিনি নিজে যশবন্ত সিনহা এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এখনও কোনও পদাধিকারীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

ফলে আপাতত জাতীয় স্তরে সমস্ত পদের অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন করে তৃণমূল সুপ্রিমো পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা না করা পর্যন্ত এই পদের দায়িত্বেও কেউ থাকছেন না। ভিন রাজ্যের অনেক নামী প্রতিনিধিদের জায়গা হয়নি এই তালিকায়।

উল্লেখ্য, জাতীয় কর্মসমিতিতে যে নামগুলি রয়েছে তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের দীর্ঘদিনের কর্মী। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘খুব শীঘ্রই চেয়ারপার্সন পদাধিকারীদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন এবং তা সর্বভারতীয় নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সহ একাধিক হেভিওয়েটরা।

শুক্রবারই ফিরহাদ হাকিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নীতি নতুন করে নির্ধারিত হতে পারে। এছাড়াও প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-প্যাকের সঙ্গে দলের সম্পর্ক আগামী দিনে কী হতে পারে, এদিনের বৈঠকের পর তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছিল।

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির ২০জন সদস্য (Photo: SNS)

যদিও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি দলের নেতারা। এখন পদাধিকারী হিসেবে কাদের নাম ঘোষণা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। দলের ভিতরে পাওয়ার প্লে নিয়ে যে লড়াই চলছিল শেষ পর্যন্ত সমীকরণ কী দাঁড়াল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, সেই তালিকায় লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায়, রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ানের নাম নেই। গোয়ার সংগঠন বিস্তারের জন্য কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে পাঠানো হয়েছিল। সংসদে ভালো বক্তব্য রেখে ইতিমধ্যে প্রশংসিত মহুয়া। সেই মহুয়া তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতিতে থাকার সুযোগ পেলেন না সেই সঙ্গে নাম নেই মুকুল রায়ের।

কারণ মুকুল রায় এখন বিজেপিতে রয়েছেন বলে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। সাংগঠনিক নির্বাচনের পর তৃণমুলের তরফে এই তালিকা জমা পড়বে নির্বাচন কমিশনে। ফলে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতিতে মুকুল রায়ের নাম থাকলে তা নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়বে।

এই কমিটি থেকে তৃণমূলের সংগঠনে বড়সড় রদবদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নতুন জাতীয় কর্মসমিতিতে তিনি কী পদে থাকবেন, তা ঘোষণা করা হয়নি।

কমিটিতে যে পদেই থাকুন না কেন, কর্মসমিতির এই স্বরূপ যদি বজায় থাকে, তাহলে মমতার পরেই গুরুত্ব থাকবে অভিষেকের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতিতে জায়গা করে নিলেন বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এর আগে তাঁকে তৃণমূল সুপ্রিমো সাংসদ এবং আরও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) একটা কথাই বলে যাচ্ছেন, আমি মন্ত্রী হবো না, সাংসদ হবো না, বিধায়কও হবো না, কাউন্সিলরও না, শুধু সংগঠনে থাকব। শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে যে ২০ জনের নামের তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে ঠাঁই পেয়েছেন বীরভূমের কেষ্ট। তাঁকে সম্প্রতি সিবিআই তলব করেছে।

একটি ভোটপরবর্তী হিংসা মামলা, অন্যটি গরু পাচার কাণ্ডে। এই সেই অনুব্রত, যাঁকে নজরে রাখতে ভোটের দিন হিমশিম খেতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। যতই রাজ্যের সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতাদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন না কেন, তিনি কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রতি অগাধ আস্থা রেখে চলেছেন।

সে কারণেই তৃণমূল সুপ্রিমো তাঁর প্রতি স্নেহশীল। বীরভূমের বাইরেও পূর্ব বর্ধমানের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভাল করার দায়িত্ব কেষ্টকেই দেওয়া হয়েছিল। নদিয়া জেলার একটা সময় পর্যবেক্ষকও ছিলেন তিনি। সংগঠনকে তৃণমূলস্তর পর্যন্ত গড়ে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

অন্যদিকে তাঁর গুড়বাতাসা, চড়াম চড়াম বিভিন্ন সংলাপ বঙ্গ রাজনীতিতে অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে বিরোধীদের কাছে তিনি চক্ষুশূল। ভোটের আগেই তিনি সাঁইথিয়া ও সিউড়ি পুরসভা উপহার দিয়েছেন তৃণমূলকে।