‘প্রতিটি কোষের মধ্যে যে জীবন-স্পৃহা তাকে আমি প্রণাম করেছি’- লিখেছিল কবি নাসের হােসেন। সেই নাসের আজ প্রয়াত হয়েছে, ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। নাসের আমার জেলার, বরমপুরের ছেলে। ১৯৭১ সাল থেকে তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের যােগাযোগ। নাসেরের দাদা কবি-সাহিত্যিক, পেশায় চিকিৎসক, কামাল হােসেন আমার ছােড়দা কবি জমিল সৈয়দের সেই সময়কার বন্ধু।
সত্তর দশকের শেষদিকে নাসের, প্রয়াত শুভ চট্টোপাধ্যায়, শান্তিময় মুখােপাধ্যায়, সমীরণ ঘােষ এরা প্রায় একসঙ্গে বহরমপুর শহরে কবিতাচর্চা শুরু করে। নাসের ছবিও আঁকত। আমি তখন দিল্লিতে থাকতাম। সেসময় বহরমপুরে গেলে কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে অথবা ভ্রাতৃসঙ্ঘের মাঠে বসে ওদের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে। কবিতা পড়া ছাড়া গানও হতাে। শান্তিময় গাইত, আমিও গেয়েছি। তখন জমিল বহরমপুরের কবিতাচর্চার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
Advertisement
এর পরের পর্ব কলকাতায়। কবিতাই ছিল নাসেরের জীবন। যদিও কলকাতায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে তার আকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উঙ্গাধন করেছেন সেই প্রদর্শনী। মকবুল ফিদা হুসেন এসেছেন সেই প্রদর্শনীতে।
Advertisement
প্রভাত চৌধুরী সম্পাদিত কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার সঙ্গে ওতপ্রােত জড়িত ছিল নাসের। অত্যন্ত ভদ্র, নির্বিবাদী নাসের বয়ােজ্যেষ্ঠ কবিদের স্নেহ যেমন পেয়েছে , তেমনি তরুণ এবং তরুণতর কবিদের সঙ্গে ছিল তার আত্মিক যােগ। প্রতি সপ্তাহান্তে কলকাতা থেকে বল্লমপুর যেত নাসের। সেখানকার কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত যােগাযােগ রাখত সে। শান্ত, নির্বিরােধী, মধুর-স্বভাব এই কবির ছিল এমনই প্রাণশক্তি। অথচ সেই চলে গেল অসময়ে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত কবি নাসের হােসেন। আগামী মাসে ৬৩ বছর পূর্ণ হতাে তার। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২ জানুয়ারি।
নাসেরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অপারেশন টেবিল’। তারপর আর ও পঁচিশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। আশির দশকের একজন সুপরিচিত কবি নাসের হােসেন। কবিতা বিষয়ক আলােচনা এবং অনেক গদ্যও লিখেছে সে। তার বােন সােনালি বেগম এবং ভাগ্নি রােশনি ইসলাম কবি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। নাসেরের মৃত্যুতে কবিমহলে নেমে এসেছে গভীর শােকের ছায়া।
Advertisement



