চলন্ত মেট্রোয় হাত আটকে মৃত্যু

মেট্রোয় হাত আটকে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা মেট্রোর যাত্রী নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে এলাে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা মেট্রোতে ঘটেছে , যা অনভিপ্রেত ছিল।

Written by SNS New Delhi | July 14, 2019 12:23 pm

আবার মরণফাঁদ মেট্রো! এবার ফাঁদ মেট্রোর দরজায়।

অথচ ‘আপনাদের যাত্রা শুভ হােক ’, যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে মেট্রো স্টেশনগুলিতে লাগাতার এই ঘােষণা করে থাকে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যাত্রীদের যাত্রায় চূড়ান্ত অশুভ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মেট্রো রেলের মেট্রোতে ধুঁকতে থাকা পরিকাঠামাে। আর এই পরিকাঠামাের ফাঁক গলেই প্রাণ হারাতে হল এক ব্যক্তিকে।

বিক্ষোভ, সমালােচনার সুর উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কতটা সুরক্ষিত মেট্টোযাত্রীরা? তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ কবি সুভাষগামী মেট্রোয় ওঠার সময় পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে এক যাত্রীর হাত দরজার মাঝে আটকে যায়। দেহ ট্রেনের বাইরে। এই অবস্থায় চলতে শুরু করে মেট্রোটি। টানতে টানতে ওই যাত্রীকে কিছুটা দুর নিয়েও যায় চলন্ত মেট্রো। এরপর ট্রেন থেকে পড়ে  গিয়ে মৃত্যু হয় ওই যাত্রীর।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তির নাম সজল কাঞ্জিলাল। তিনি কসবা পােস্টঅফিস এলাকার বাসিন্দা। কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে এধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। ইতিমধ্যেই  এই ঘটনায় ট্রেনের চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

ট্রেন যখন দ্রুতবেগে চলছে সেই সময় প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার পরে যাত্রীটির দেহ ক্রমশ বাইরের দিকে ঝুলতে থাকে। এরপর ট্রেন টানেলে ঢুকলে যাত্রীর দেহ পাশের দেওয়ালে ধাক্কা খায়। সেই সময় দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে থার্ড লাইনে পড়ে যান ওই  ব্যক্তি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়, এমনটাই জানা যাচ্ছে। এরপর দ্রুত থার্ড লাইনের বিদ্যুৎ সংযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। মেট্রো কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করেন।

মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানাে হয়েছে এসএসকেএমে। এদিন এই মেট্রোর অন্যান্য যাত্রীদের ড্রাইভারের কেবিনের দরজা দিয়ে বের করে আনা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের কথায়, মেট্রোর তৃতীয় নম্বর কামরায় আটকে গিয়েছিল ওই ব্যক্তির হাত। পার্কস্ট্রিট স্টেশন থেকে ময়দানের পথে কিছুটা এগিয়েও থমকে যায় মেট্রোটি। প্রাথমিকভাবে যাত্রীরা  ভাবেন আগুন লাগার কারণে তাদের বার করে দেওয়া  হচ্ছে। ফলে আতঙ্কের পাশাপাশি মেট্রো পরিষেবার অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন তারা। কয়েকজন যাত্রী মেট্রোর কর্মীদের সঙ্গে বচসায়ও জড়িয়ে পড়েন।

মেট্রোয় হাত আটকে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা মেট্রোর যাত্রী নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে এলাে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা মেট্রোতে ঘটেছে , যা অনভিপ্রেত ছিল। মেটোর সুরক্ষায় যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তার মধ্যে বিভিন্ন সময়েই বড়সড় গলদ লক্ষ্য করা গিয়েছে সম্প্রতি। কলকাতার গর্ব মেট্রো রেল মাঝে মধ্যেই যাত্রীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও কেন কর্তৃপক্ষের এত ঢিলেঢালা মনােভাব  তা নিয়ে উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।

বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে , কর্তৃপক্ষের  উদ্যোগে প্রায়ই খামতি থেকে যাচ্ছে। মেট্রো রেলের জনসংযােগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই সংবাদমাধ্যমে মেট্রো রেলের উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়েই নিজের দায় সেরেছেন। কিন্তু বড়সড় গলদ দেখা গেলেও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ কেন নিশ্চুপ তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে  না।

সূত্রের খবর, মেট্রোর নতুন যে রেকগুলি আনা হয়েছে , সেগুলির দরজাতে অত্যাধুনিক সেন্সর বসানাে হয়েছে। এই সেন্সরগুলি এতটাই স্পর্শকাতর যে এতে সামান্য কাগজ আটকে গেলেও ট্রেন চলার কথা নয়। তাহলে একজন যাত্রীর হাত আটকে থাকার পর কিভাবে ট্রেন ছুটল ? সেই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত এই নতুন রেকগুলির একটিতেই সওয়ার হয়েছিলেন এই যাত্রী। আমজনতার ক্ষোভ কমাতে প্রাথমিকভাবে ট্রেনের চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করে ঘটনার জন্য কারা কারা দায়ী তার তদন্ত শুরু করেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে  থাকেন আরপিএফের জওয়ানরা। এক্ষেত্রে তাঁদের  ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মুখে যাত্রীটির হাত বাইরে ঝুলতে দেখেও তারা চালককে সতর্ক করলেন না কেন ? তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর প্রতিটি মেট্রো স্টেশনে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে যান কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফিরহাদ হাকিম ।