বিজপুরের সভাতেও এনআরএস কাণ্ডে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বে অনড় মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: Facebook/@MamataBanerjeeOfficial)

এনআরএসের ঘটনার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গােটা বাংলায়। জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির ডাকে শিকেয় উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় শুক্রবারও বহিরাগত তত্ত্বে অনড় রইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার বীজপুরের কাঁচরাপাড়ার মিলননগর আদর্শ সংঘের মাঠে সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে দাবি করেন, ‘সেদিন জানেন কে এনআরএসে ভাষণ রাখছিল? গেট আটকেছিল? জানেন কেন বহিরাগত আছে বলছি? সেদিন এনআরএসে যে ছেলেটা বক্তব্য রাখছিল, খোঁজ নিয়ে দেখুন তার নাম দীপক গিরি। সে ক্যালকাটা হার্ট রিসার্চ সেন্টারে ১০ বছর ধরে চাকরি করছে। বলুন তাে, সে কীভাবে এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তার হয়?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলিনি সবাই বহিরাগত। তবে কিছু বহিরাগত যে রয়েছে, সেটা বলেছি’। সংবাদমাধ্যমে বাড়িয়ে দেখানাে হচ্ছে। ‘খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনারাই, ওই ছেলেটা কোন দলের হয়ে কাজ করে? তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে কেন ওই কথাগুলাে বলেছি’।


প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এসএসকেএমে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘যারা আন্দালন করছেন, তারা কেউ জুনিয়র ডাক্তার নন। তারা আউটসাইডার। বিজেপি সিপিআইএম উস্কানি দিচ্ছে। শুধু হিন্দু-মুসলিম করা হচ্ছে’। হাসপাতালে রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এদিনও সেই বহিরাগত তত্ত্বেই অনড় রইলেন মুখ্যমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, তাপস রায়, বিধায়ক নির্মল ঘােষ, রথীন ঘােষ, পার্থ ভৌমিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গােস্বামী, এ কে এম ফারহাদ, সাংসদ দোলা সেন প্রমুখ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাবে যাই, তখন সেখানের ভাষায় কথা বলি। বাংলায় থাকতে হলে, কথা বলতে হবে বাংলায়’। এই মন্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিকতায় জোর দিচ্ছেন বলেই দাবি বিরােধীদের। মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে ভাষা বিভেদকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।

লােকসভা নির্বাচনের পর থেকে বহু নেতানেত্রী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দিয়েছে। এই প্রসঙ্গ টেনে দলত্যাগীদের খোঁচা দিতে গিয়েও বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন ‘যাঁদের চলে যাওয়ার তাঁরা চলে যান। এতে তৃণমূল দলটা শুদ্ধ হবে। এখনও দু’বছর আমাদের সরকার রয়েছে। পাড়ার বখাটে ছেলেদের নিয়ে আসুন। আমার কাছে তাদের বায়ােডাটা জমা দিন। অনেক চাকরি আছে। আমি ওদের চাকরি দেব’।

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে স্বজনপােষণের তত্ত্বকে সামনে আনছে বিরােধীরা। রাজ্যের যােগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবক-যুবতী থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রশাসনিক প্রধান দলীয় কর্মিসভায় এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা নিয়েই উঠেছে সমালােচনার ঝড়।

এদিন নাম না করে গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘ভােটের পরই শুরু হয়েছে সন্ত্রাস। কিছু অশুভ শক্তির নজর পড়েছে বাংলায়। সন্ত্রাসী, মৌল উগ্রপন্থী, অধসত্যি, উন্মত্ত সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। বাংলায় থাকব। বাইকে করে এসে গুন্ডামি করব আমরা শুনব না’।

পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এদিনের মঞ্চ থেকে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। গেরুয়া শিবিরকে প্রতিরােধ করতে দলীয় কর্মীদের সংগঠন আরও মজবুত করে তােলার আহ্বান জানান মমতা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সিপিএমের সাইনবাের্ডটাও বিজেপিকে দিয়ে দিয়েছে। সিপিএমের হার্মাদরা এখন গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে মাস্তানি করছে। তিনি বলেন, ওরা একটা মিটিং করলে, আপনারা দশটা মিটিং করুন।

কর্মীদের ভিড় বাড়াতে এবার দলে গরিব ছেলেমেয়েদের নেওয়ার পরামর্শ দিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেব না। গুজরাতে একবার দাঙ্গা হয়েছিল। তিনি বলেন, পুলিশ কাজ না করলে মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কাচরাপাড়ায় যারা দলের ব্যানার, ঝান্ডা, হাের্ডিং খুলেছে, তাদেরকে তিনদিনের মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে তুলােধনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে কাচরাপাড়া রেলে ঠিকেদারি করতেন। এখন ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন কেন? বাংলায় ভােটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে রাজনীতি করছে। ওর লজ্জাও করে না’।

মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বাংলায় থাকব অথচ বাইকে করে এসে বাংলায় ওড়ানি করব, তা মানব না। একটা-দুটো আসন জিতে ওরা মনে হচ্ছে বাঘ হয়ে গেল। আগামী দিনে লড়াই হবে, ইভিএম চাই না, ব্যালট চাই। আগামী ২১ জুলাই মঞ্চে ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভােটের দাবিতে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হবে’।

উপস্থিত দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তৃণমূল সুপ্রিমাে বলেন, ‘সাতদিন সময় দিলান অন্য দলে চলে যাও। তাহলে দল পবিত্র হয়ে যাবে’। প্রসঙ্গত, এদিন কল্যাণী থেকে সড়কপথে কাঁচরাপাড়ায় আসার সময় কল্যাণী থানার রথতলা মােড়ে গেরুয়া কর্মীরা মমতার কনভয় লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তােলেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এদিন গাড়ি থেকে নামেননি। এদিন হালিশহরের বিজেপি নেতা সুবােধ অধিকারী তৃণমূলে যােগ দিলেন।