রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট

সিবিআইয়ের গ্রেফতারি বেড়াজাল থেকে ‘সাময়িক’ মুক্তি পেলেন রাজ্যের এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমার।

Written by SNS Kolkata | October 2, 2019 4:15 pm

রাজীব কুমার (File Photo: IANS)

সিবিআইয়ের গ্রেফতারি বেড়াজাল থেকে ‘সাময়িক’ মুক্তি পেলেন রাজ্যের এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমার। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সীর ডিভিশন বেঞ্চ আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে জানিয়ে দেয়, ‘রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়ােজন নেই। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ- রাজীব তদন্তে সহযােগিতা করেছেন’।

এদিন বেশ কিছু শর্ত আরােপ করে ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে (দু’জন জামিনদার সহ) হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে। কলকাতা পুলিশের আওতাধীন এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না আইপিএস রাজীব। সেই সঙ্গে পাসপাের্ট জমা রাখতে হবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের কাছে, এবং বিধ শর্তাবলির মাঝে নতুন নির্দেশাবলি হল এবার যে, সিবিআই রাজীবের সম্পত্তি প্রয়ােজনে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। আইপিএস রাজীব কুমারকে হাজিরার জন্য সিবিআই ডাকলে তা দু’দিন আগে রাজীব কুমারকে অবগত করতে হবে বলেও এই মামলার রায়দানে জানানাে হয়েছে। যদি সিবিআই তদন্তে জেরার নামে ডেকে গ্রেফতার করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পেয়ে যাবেন রাজীব, তাও জানিয়েছে হাইকোর্ট।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় জানার পর থেকেই সক্রিয় হয়েছে সিবিআই কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারই দিল্লির সিবিআইয়ের লিগাল সেলকে জানিয়েছেন কলকাতার তদন্তকারীরা। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি চলছে বলে সিবিআইয়ের অন্দরের খবর। কেননা ৪ অক্টোবরের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে ছুটি পড়ছে। আদালত খুলবে আগামী ১৪ অক্টোবর। তাই এই তিনদিনের মধ্যেই রাজীব কুমারকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হেস্তনেস্ত করতে চায় সিবিআই। যদিও সারদা রিয়ালিটি মামলায় আইপিএস রাজীব কুমার আগাম জামিন পেলেও রােজভ্যালি মামলায় পুনরায় নােটিশ পাঠিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই।

প্রায় একমাস পূর্বে সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের সমন খারিজ মামলায় আইপিএস রাজীব কুমারের উপর থেকে আইনি রক্ষাকবচ তুলে নিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের এজলাস। এরপর থেকে বারাসতের স্পেশাল কোর্ট এবং জেলা দায়রা কোর্টে মামলার এক্তিয়ার নিয়ে মামলার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনও রায় উঠে আসেনি। এরপর আলিপুর এসিজেএম এজলাসে সিবিআইয়ের গ্রেফতারি পরােয়ানা ইস্যু মামলায় আইপিএস রাজীব কুমারকে গ্রেফতারে বাধা নেই বলে জানায়।

অনুরূপভাবে গত ২১ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলা ও দায়রা এজলাসে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়। সেখানে রাজীবের বিরুদ্ধে সারদা তদন্তে অপরাধমূলক ভূমিকার কথাও উঠে আসে। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে আইপিএস রাজীব কুমারের পক্ষে তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা কুমার আগাম জামিনের আবেদন জানান। টানা চারদিন রুদ্ধদ্বার শুনানি চলে।

গত সােমবার এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতিরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ এই মামলার রায়দান ঘটে। রাজীবের আইনজীবী দেবাশিস রায় শুনানিতে জানিয়েছেন, সারদা তদন্তে আইপিএস রাজীব কুমার সহযােগিতা করেছেন। এমনকি শিলঙে টানা ৪০ ঘণ্টার সিবিআইয়ের জেরার সম্মুখীন হন তিনি। অপরদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুর শুনানিতে জানিয়েছে, সারদা তদন্তে ৮ বার তলব করা হলেও মাত্র দু’বার তদন্তে সাড়া দিয়েছেন রাজীব। তাও আইনি রক্ষাকবচ সঙ্গে নিয়ে।

এদিন ব্যক্তিগত ৫০ হাজার বন্ডে আইপিএস রাজীব কুমারকে বেশ কিছু শর্ত আরােপ করে আগাম জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ। জেরার জন্য রাজীবকে ডাকলে দু’দিন আগে সিবিআইকে জানাতে হবে। কলকাতা পুলিশের এলাকার বাইরে যাওয়া যাবে না। পাসপাের্ট জমা রাখতে হবে। তবে সিবিআইয়ের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা প্রদান করেছে এই ডিভিশন বেঞ্চ। সিবিআই তদন্তের নামে ডেকে গ্রেফতার করলে, তাতে সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পাবেন আইপিএস রাজীব কুমার। এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই দিল্লির লিগাল সেলে বিষয়টি দ্রুত জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ৪ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর ছুটি থাকছে সুপ্রিম কোর্ট সহ অন্যান্য আদালত। এখন হাতে মাত্র তিনদিন, এই তিনদিনেই আপিল করতে হবে সিবিআইকে। কেননা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে এই আগাম জামিনের সময়সীমা নেই অর্থাৎ রাজীব কুমারকে গ্রেফতারের পথে সিবিআইকে যেতে হলে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতেই হবে সুপ্রিম কোর্টে।