এসআইআর আতঙ্কে ফের আত্মহত্যার অভিযোগ উঠল রাজ্যে। এবার ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন আরও একজন। মৃত প্রৌঢ়ের পরিবারের সদস্যরা এই দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, মৃতের পরিচয়পত্র ছিল না। সেই ভয় থেকেই বুধবার গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।
মৃতের নাম সফিকুল গাজি। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ঘুসিঘাটা এলাকায়। কয়েকদিন ধরে তিনি ভাঙড়ের জয়পুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকছিলেন। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে একটি দুর্ঘটনায় তিনি জখম হন। এরপর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। এই আবহে রাজ্যে শুরু হয় এসআইআর। তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান সফিকুল। কারণ তাঁর পরিচয়পত্র ছিল না। মৃতের স্ত্রী জানিয়েছেন, বুধবার সকালে তিনি সফিকুলকে চা খেতে দিয়ে ছাগল বাঁধতে গিয়েছিলেন। সেই সময় গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ফিরে এসে স্বামীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান স্ত্রী।
সফিকুলের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। বিধায়ক জানিয়েছেন, তৃণমূলের সর্রভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তিনি মৃতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এই মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআর আতঙ্ক রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর–এর দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে এসআইআর আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এসআইআর ঘোষণার পর সর্বপ্রথম আত্মঘাতী হয়েছেন পানিহাটির প্রদীপ কর। এরপর বীরভূমের ইলামবাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার, টিটাগড়ের কাকলি সরকার আত্মহত্যা করেন।
পরিবারেরও দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের বাসিন্দা বিমল সাঁতরা এবং হুগলির ডানকুনির হাসিনা বেগমের। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের শেখ সিরাজউদ্দিনেরও। মঙ্গলবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জাহির মাল ও মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখের আত্মঘাতী হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। এরপর বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে আত্মহত্যা করেন সফিকুল গাজি।
মঙ্গলবার এসআইআর ইস্যুতে প্রতিবাদ মিছিলের পর জোড়াসাঁকোর সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘নিজের অমূল্য প্রাণ শেষ করে দেবেন না। আমরা থালা–বাটি বেচেও আপনাদের সাহায্য করব। বুথ থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত লড়াই হবে।’ অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আশ্বাস দেন, তৃণমূল সব রকমভাবে রাজ্যবাসীকে সাহায্য করবে।
Advertisement