আমার কাজ তথ্য তুলে ধরা, নির্দেশ দেওয়া নয় : পিকে

পিকে’র হাত ধরেই বাংলায় দিদিকে বলো এবং বাংলার গর্ব মমতার মতো কর্মসূচি গ্রহন করেছে রাজ্যের শাসক দল।

Written by SNS Kolkata | March 19, 2020 7:28 pm

প্রশান্ত কিশোর (File Photo: IANS)

বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কোনও রকম শত্রুতা করতে তিনি এ রাজ্যে আসেননি। তিনি এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেস দলটির ভেতরের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ এবং একত্রিত করে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তুলে ধরতে। যাতে পুরসভা হোক বা বিধানসভা, যে কোনো নির্বাচনেই সেইসমস্ত তথ্য গুলোকে কাজে লাগিয়ে দলের তরফে কোনও রণকৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। বুধবার সল্টলেকে সেক্টর ফাইভের অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে নিজের এমন চিন্তা ধারাই তুলে ধরলেন বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। 

তাঁর মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তারপর তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী। সুতরাং তাঁর মাথায় প্রশাসনিক নানা দায়িত্ব পালনের চাপ অনেক বেশি, তুলনায় তাঁর দলের অন্দরে প্রতিনিয়ত কী ঘটে চলেছে তা জানার। কোনো কারণবশত কেউ অভিমান করলে বা কেই নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকলে সেটা দেখার কাজ তাঁর নয়। আর তাই এই সব কিছুর তথ্য সংগ্রহ করে, তা বিশ্লেষণ করার জন্যই তাঁকে রাখা হয়েছে। 

উল্লেখ্য পিকে’র হাত ধরেই বাংলায় দিদিকে বলো এবং বাংলার গর্ব মমতার মতো কর্মসূচি গ্রহন করেছে রাজ্যের শাসক দল। যদিও বিরোধী দলগুলি এই কর্মসুচি দুটি একেবারে শুরু থেকেই কটাক্ষ করে এসেছে তবুও পিকে এর বক্তব্য, এক বছর আগে যেখানে দিদিকে বলো নম্বরে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার ফোন আসতো সেখানে এখন তা বেড়ে দশ থেকে বারো হাজার ফোন প্রতিদিনে পৌঁছেছে। 

রাজ্যের সাধারণ মানুষ যদি এটা মনে না করত যে এখানে ফোন করলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে তাহলে প্রতিদিন এত ফোন আসে কিভবে? তিনি আরও জানিয়েছেন, যে এখনো পর্যন্ত পনেরো লাখের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে দিদিকে বললা কর্মসুচির মাধ্যমে। 

একই সঙ্গে তিনি জানান, সাধারণ মানুষের সমস্যা কখনো শেষ হবার নয়। তাই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার কাজ তাদের পক্ষেও কঠিন। কিন্তু যতটা সম্ভব ততটা করার চেষ্টা করা হয়। তবে শুধুমাত্র সমস্যার সমাধান নয় বরং এর মাধ্যমে সারা রাজ্যে বলা ভালো প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে প্রতিদিন কি ঘটে চলেছে সে তথ্য আমাদের কাছে আসছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকাদের তাদের জেলার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে না। এই সিদ্ধান্তটিও নেওয়া হয়েছে কিছু শিক্ষক শিক্ষিকারা ফোন করে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন বলেই। সুতরাং আমার ফিডব্যাকের ওপর রিঅ্যাক্ট করেছি বলেই মানুষের আস্থা দিন দিন বেড়েছে। এরপর তিনি বাংলার গর্ব মমতা প্রসঙ্গে বলেন, শুধুমাত্র ফিতে কাটলেই কর্মসুচির বাস্তবায়ন হয় না। এর জন্য কাজ করতে হবে। আমরা মোট ৭৫ দিনের জন্য এই কর্মসূচি গ্রহন করেছি। 

যেখানে আমরা রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে দলে জনসংযোগের কাজটিও করছি সমানতালে। এছাড়া দলীয় সংগঠনকে আরও মজবুত করতে আমরা দলের পুরনো সব কর্মীদের যারা দল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন বা অভিমান করে আছেন তাদের পুনরায় সক্রিয় করতেও উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে এই কর্মসুচির ভেতরেই। এরই সঙ্গে তিনি আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে টিকিট বিলি করার প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, নতুন হোক বা পুরনো সাধারণ মানুষ যাকে চাইবে তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এরপর রাজ্যের বিরোধী দলগুলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে দলের শক্তি যেটা সে দল সেটা নিয়েই কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। বিরোধী দলের কাজ রাজ্যের শাসকদলের সমস্ত ত্রুটি বের করে সেটাই জনসমক্ষে তুলে ধরা, আর শাসকদলের কাজ উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা। কেউ যদি ধর্মকে হাতিয়ার করে বিভাজনের রাজনীতি করে ভোট আদায়ের কাজে পটু হয় তার মানে নয় যে আমাদেরও তাই করতে হবে। রাজ্যের যখন প্রধান বিরোধী ছিল সিপিএম তখন একরকম রণকৌশল ছিল। সেই কৌশলই যে বিজেপির বিরুদ্ধে কাজে আসবে এটা ভাবা উচিত নয়। 

অন্যদিকে একাধিক ক্ষেত্র এমন অনেক কানাঘুসো ভেসে আসছিল যে তৃণমূলের অনেক নেতা পিকে’র নির্দেশ মানতে চাইছেনা। এ প্রসঙ্গেও এদিন পিকে’র সোজা বার্তা, তৃণমূল কংগ্রেস দলটি কারোর ব্যক্তিগত জমিদারি নয়। এই দলের একটাই মাথা হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের কাজকর্মের যার নির্দেশ আসছে সব তিনি দিচ্ছেন। আমি নির্দেশ দেওয়ার কেউ নই। আমার কাজ সমস্ত তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা। এই জন্যই আমাকে রাখা হয়েছে। এই তথ্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে যার নির্ণয় গ্রহন করার তা মুখ্যমন্ত্রীই নিচ্ছেন। কেউ যদি তার নির্দেশনা অমান্য করে, তবে সেটা তিনি তার ব্যক্তিগত ঝুঁকিতেই করছেন।