রং ও তুলির টানে প্রতিবাদী মমতা

মঙ্গলবার দুপুরে গান্ধিমূর্তির পাদদেশে আসর বসেছিল ছবি আঁকার। যেখানে ৪২ জন প্রথিতযশা শিল্পীর তালিকায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Written by SNS Kolkata | January 29, 2020 1:48 pm

ছবি এঁকে অভিনব প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। (Photo: IANS)

মঙ্গলবার দুপুরে গান্ধিমূর্তির পাদদেশে আসর বসেছিল ছবি আঁকার। যেখানে ৪২ জন প্রথিতযশা শিল্পীর তালিকায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর্ট কলেজের ডিগ্রি কিংবা প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও প্রাণের টানে, তুলির টানে, রং-এর টানেই তিনি ওই আসরে গিয়েছেন। একথা নিজের মুখেই জানালেন মমতা। বললেন, আমি শিল্পী নই, মাঝে মাঝে একটু চেষ্টা করি মাত্র।

তবে এদিন তাঁর হাতের তুলির টানে ক্যানভাসে ফুটে উঠল প্রতিবাদের ভাষা, প্যালেটের ডােবানাে ব্রাশে ছড়িয়ে পড়ল রাজনীতির রং। তৃণমূলনেত্রীর এই অভিনব কায়দায় প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষের মন্তব্য, ‘অনেকদিন পর ছবি আঁকার সুযােগ পেলেন মমতা’।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি নিয়ে একসময় রাজনীতিতে বিতর্ক হয়েছে। এমনকী প্রশ্ন উঠেছে তাঁর আঁকা ছবির মুল্য-মান নিয়েও। সেই ছবি বিক্রি নিয়েও হাজারাে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এদিন যােগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, ঈশা মহম্মদ প্রমুখ প্রথিতযশা শিল্পীদের সঙ্গে সমানতালে ছবি এঁকে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, সিন্থেসাইজারে তোলা নিজের সুরে গান, ছড়াকবিতায় ভরিয়ে ফেলা ‘কবিতাবিতান’ কিংবা রং-তুলির টান– কোনটাতেই পিছিয়ে নেই তিনি।

মঙ্গলবার গান্ধিমূর্তির সামনে মমতা প্রথমে ক্যানভাসে আঁকলেন একটি গােলাকার বিন্দু। তারপর সেই বিন্দুই ক্রমশ স্পষ্ট করে তুলল একটি মেয়ের মুখ। তখনও কৌতূহল জাগছে উপস্থিত দর্শকদের মনে। এই নারী কি হয়ে উঠবেন ‘কন্যাশ্রী’ নাকি দেবী ‘দুর্গা’। কিন্তু একটু পরেই দেখা গেল সেই নারীর একটি চোখের তারায় ফুটে উঠল ইংরেজি ‘এন’ অক্ষরটি, অন্য চোখে ‘ও’ আর দু ভ্রূ পল্লবের মাঝখানে সিএএ। এরপর নারী দৃঢ় থুতনির একপাশে এনপিআর অন্যপাশে এনআরসি। আর ঠোটের মধ্যে অনেকগুলি গােলাকার রিং। সেগুলি কি শুন্যের প্রতীক। মানে এই এনপিআর, এনআরসি, সিএএ’র নিট ফুল শূন্য বােঝানাের জন্য? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, মােদি সরকার যে মুখে শিকল আটকে দিচ্ছে, এটা তারই প্রতীক।

তবে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু রং-তুলির আঁচড়ে নীরবে প্রতিবাদ জানাননি গর্জে উঠেছেন মােদি সরকারের বিরুদ্ধেও। বলেছেন, মােদি সরকার মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। বিরােধীরা কিছু বললেই তাদের দেশদ্রোহীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি নেতাদের পাকিস্তানের দূত বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়ে দেন, গণতন্ত্রে কথা হতেই পারে, কিন্তু তার আগে প্রত্যাহার করতে হবে সিএএ-এনআরসি। প্রধানমন্ত্রী যদি আলােচনা চান, আগে সিএএ প্রত্যাহার করুন। ক্যানভাসে মমতার আঁকা মেয়েটির মুখ শেষ অংশ এদিন মিশে গিয়েছে ক্যানভাস জুড়ে। যা হয়তাে বুঝিয়েছে প্রতিবাদের ব্যাপ্তি।

মমতা বলেন, যে গান্ধিজি একতার কথা বলেছিলেন, তার সামনে সেই রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হল। যা মানুষে মানুষে ভাগাভাগি, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ধর্মের নামে ঘৃণ্য রাজনীতির কথা বলে। এই সিএএ আসলে সভ্যতার লজ্জা, সংস্কৃতির লজ্জা। তবে আমরা ভাষা দিয়ে গুলিগােলা চালাই না। ভাষা দিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করি। তাই এদিন সংস্কৃতির ক্যানভাসে রাজনীতির চিত্রকে ফুটিয়ে তােলা হল রং-তুলির আঁচড়ে।

এদিন দিলীপ ঘােষ মমতার এই অভিনব কায়দায় প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে বলেছেন, অনেক দিন পর ছবি আঁকার সুযােগ পেলেন মমতা। মানুষ যখন হতাশ হয়ে যায়, তখন কেউ গিটার বাজান, কেউ ছবি আঁকেন। সিএএ এবং এনআরসি বিক্ষোভে উনি (মমতা) একা হয়ে গিয়েছেন। ওঁর সঙ্গে লােক নেই। অথচ আমাদের সভায় হাজার হাজার লােক আসে। মমতাকে এখন অসফল প্রশাসক বলেও আক্রমণ করেন দিলীপ ঘােষ।