• facebook
  • twitter
Friday, 13 December, 2024

নেমন্তন্ন করে ‘বেইজ্জত’ করায় বক্তব্য রাখলেন না মমতা

মমতা বলেন আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানাের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী এবং সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অসম্মান করাটা ঠিক নয়। এর প্রতিবাদে আমি আর কিছুই বলব না।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: Twitter | @narendramodi)

একুশের নির্বাচনের আগে নেতাজি আবেগ ভিক্টোরিয়ায় মিলিয়ে দিয়েছিল মােদি-মমতাকে। কিন্তু তাল কাটল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। যা শুনে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বক্তব্য না রেখে শুধুমাত্র বললেন, ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি ছিল, তাঁকে নেমন্তন্ন করে ডেকে ‘বেইজ্জত’ করা হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গােটা অনুষ্ঠানে চুপ করে বসেছিলেন মমতা।

নেতাজির জন্মদিবসের নামকরণ ‘পরাক্রম দিবস’ বনাম ‘দেশনায়ক দিবস’ নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংঘাত ছিল। শনিবার সকাল থেকেই সেই সংঘাতের সুর চড়ছিল রেড রােডে কেন্দ্রের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর চোখা চোখা মন্তব্যে। সেখানেই তিনি বলেছিলেন অ্যাকশন উল্টোপাল্টা হলে রি-অ্যাকশনও সেইরকম হবে। কিন্তু দিনের শেষে নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে মমতা এইভাবে কাজে লাগাবেন তা এমনকী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বােধহয় ভাবেননি।

নেতাজির জন্মদিবস উপলক্ষে এদিন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি, রাজ্যপাল জাদীপ ধনকড়, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যােশী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় পাশাপাশি বসে সেই অনুষ্ঠান দেখেন। সংস্কৃতিমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে ওঠেন। 

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চেয়ার ছেড়ে পােডিয়ামের দিকে এগোতেই কিছু মানুষ জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন পােডিয়ামের সামনে দাঁড়ানাে। সঞ্চালক বারবার স্বেচ্ছাসেবকদের বলতে থাকেন, আপনারা শান্ত হন, মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে দিন। এরপর মাইকে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

হিন্দিতে মমতা বলেন, সরকারি অনুষ্ঠানে শালীনতা বজায় থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়, এটা সমস্ত দলের কর্মসূচি, জনতার কর্মসূচি। এর পর মমতা বলেন আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানাের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী এবং সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অসম্মান করাটা ঠিক নয়। এর প্রতিবাদে আমি আর কিছুই বলব না। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মাইকের সামনে শুধুমাত্র বলেন, জয় হিন্দ, জয় বাংলা।

তবে বক্তব্য না রাখলেও সৌজন্য দেখিয়ে পুরাে অনুষ্ঠানটিতেই চুপ করে বসে থাকেন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বহেন মমতা’ বলে সম্বােধন করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সৌজন্যের ভাব বিনিময় হয়নি। 

শনিবার সন্ধেয় ভিক্টোরিয়ায় আসার পর থেকেই মােদি মমতার মধ্যে একটা ‘দু গজ দূরি’ বজায় ছিল। প্রথম সাক্ষাতে নমস্কার বিনিময়ের পর মােদিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা। কিন্তু সেই অভিবাদনেও তেমন উষ্ণতা বিনিময় করতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে।

এরপর ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়ালে প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় মােদি-মমতা পাশাপাশি হলেও কাছাকাছি হননি। মধ্যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব কমানাের চেষ্টা করলেও তা হয়নি। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর ছবি তােলার সময়েও ফ্রেমের বাইরেই থাকতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

এমনকী পােডিয়ামে মােদি-মমতার আসন পাশাপাশি থাকলেও তাদেরকে কাছাকাছি হতে দেখা যায়নি একবারও। কথাও বলেননি একে অপরের সঙ্গে। এরপর মমতা পােডিয়ামের দিকে এগােলে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তাদের মধ্যেকার দূরত্ব বাড়িয়ে দিল। এরপর পুরাে অনুষ্ঠানে দুজনে পাশাপাশি থাকলেও মুখােমুখি হলেন না। এমনকী তাঁদের মধ্যে চোখাচোখিও হল না। মােদি রইলেন সামনের দিকে তাকিয়ে। আর মমতা কখনও মুঠোফোনে, কখনও আকাশপানে চেয়ে রইলেন। 

নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি অঙ্গরাজ্যে পা রেখেছেন। সেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তাদের মধ্যে দূরত্ব বজায় ছিল। নেতাজি আবেগও মেলাতে পারল না মােদি ও মমতাকে। 

শনিবার সকালে নেতাজির জন্মদিনে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরাের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বা কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতাকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা রিসার্চ ব্যুরাের কর্মকর্তা সুগত বসু বলেছিলেন, নরেন্দ্র মােদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেখানে স্বাগত, কিন্তু কোনও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়। কিন্তু সেইদিনই সন্ধেবেলায় ভিক্টোরিয়া হলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার আগে রাজনৈতিক স্লোগান বুঝিয়ে দিল প্রত্যেক ক্রিয়ার সত্যিই প্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

এরপর এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ‘অসম্মান’-এর প্রতিবাদে টুইট করে নুসরত জাহান। লেখেন, সরকারি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দেওয়ার তীব্র নিন্দা করছি। গলা টিপে ধরে রামনাম কীসের? এরপর হ্যাশট্যাগ দিয়ে নুসরত লেখেন, সেভ বেঙ্গল ফ্রম বিজেপি। অন্যদিকে এদিন ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়ালের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির নেতারাও। যা বুঝিয়ে দিল নেতাজির জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংঘাতের সুর ক্রমশ তীব্র হতে চলেছে।