শুভেন্দুর চিঠি প্রসঙ্গে মমতাকে পত্রাঘাত, আপনার দীর্ঘদিনের সতীর্থ কি বলছে দেখুন: রাজ্যপাল

বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিহিংসার আশঙ্কা জানিয়ে বুধবার রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

Written by SNS Kolkata | December 18, 2020 1:59 pm

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। (File Photo: IANS)

বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিহিংসার আশঙ্কা জানিয়ে বুধবার রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। লিখেছিলেন আমার রাজনৈতিক অবস্থান বদলের কারণে ক্ষমতাসীনরা আমার প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠতে পারেন। শুভেন্দুবাবুর আশঙ্কা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাকে এবং তার অনুগামীদের মিথ্যে ফৌজদারি মামলায় ফাঁসানাের চেষ্টা হতে পারে।

এই বিষয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে শুভেন্দুবাবুর এই চিঠি আরও সক্রিয় করে তােলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। বৃহস্পতিবার সকালেই শুভেন্দুর চিঠির প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘পত্রাঘাত’ করলেন রাজ্যপাল। শুভেন্দু দলত্যাগের খোঁচা দিয়ে লিখলেন, ‘আপনার দীর্ঘদিনের সতীর্থ কী বলছে দেখুন। চিঠির বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যপাল লেখেন, প্রশাসনিক শুদ্ধিন্ত্রণ প্রয়ােজন। যাতে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসন বজায় থাকে।

শুভেন্দুর চিঠির অংশ উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল লিখেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফৌজদারি মামলায় ফাঁসানাে হলে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার। তাই এই ধরনের যত মামলা আগে করা হয়েছে, সব সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।

প্রসঙ্গত, এর আগে তৃণমূলের আরেক দলত্যাগী মুকুল রায়ের বিরুদ্ধেও নদিয়ার বিধায়ক খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সবংয়ের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার বিরুদ্ধেও তৃণমূল কর্মী খুনের মামলা আনা হয়েছিল। যে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে যােগ দেন বলে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের অভিমত। মানসবাবুর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া সবংয়ের তৃণমূল বিধায়কের পদ পান সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নান, দিলীপ ঘােষ প্রমুখ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় বিরােধীদের ফাঁসানাের অভিযােগ করে থাকেন।

সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল সদ্য দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীর নাম। তবে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, শুভেন্দুর এই চিঠি সম্পূর্ণ কৌশলগত কারণে, আগাম সুরক্ষা নিয়ে রাখার জন্য। শুভেন্দু অধিকারীমন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই সারা কর্তা সুদীপ্ত সেনের লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। যেখানে সুদীপ্ত সেন লিখেছেন, তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে ছয় কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এই চিঠির সূত্র ধরে সুদীপ্তর ‘প্রিজনার্স পিটিশন’ সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানাের আর্জি জানান শুভেন্দু অধিকারী।

অন্যদিকে শুভেন্দু দলত্যাগের ইঙ্গিত দেওয়ার পরই তার অনুগামী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নেয়। এমনকী শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করাও শুরু হয়ে যায়। সেই কারণেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে আগেভাগেই রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর চিঠির সূত্র ধরেই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে ভােটের আগে পরিবেশ যেন নষ্ট করা না হয়।

ধনকড় আরও লিখেছেন, আমি তাে খবর পাচ্ছি, রাজনৈতিক উদেশ্য নিয়ে থানায় থানায় ওসি, আইসি বদল করা হচ্ছে। এই প্রবণতা তাে সাংঘাতিক। তবে রাজ্যপালের আশা, মুখ্যমন্ত্রী হয়ত এই চিঠির উত্তর দেবেন। রাজ্যের আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তার সঙ্গে আলােচনায় বসুন এটাই চান রাজ্যপাল। পুলিশের ওপর ভর দিয়ে যেন রাজনৈতিক ফায়দা না তােলে শাসক সরকার। সেই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।