কনটেইনমেন্ট জোনে সাতদিনের জন্য লকডাউন

করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ফের কঠোর লকডাউনের জারি করা হচ্ছে।

Written by SNS Kolkata | July 9, 2020 2:41 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ফের কঠোর লকডাউনের জারি করা হচ্ছে। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আপাতত সাতদিনের জন্য এই লকডাউন বহাল থাকবে। কড়া নজরদারি চালানো হবে। পরিস্থিতি বুঝে সাতদিন পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এই লকডাউন’এ পুরো বাংলাই যে গৃহবন্দি, এই তত্ত্ব মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কিছু কিছু জায়গায় সংক্রমণ বেড়েছে। যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেড়েছে সেই এলাকাগুলিকে ছোট ছোট পকেট করে কনটেইনমেন্ট জোন করা হবে। সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হবে ওই এলাকাগুলি। সেখানকার বাসিন্দাদের লকডাউনের সতর্কতাবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

মাস্ক না পরে রাস্তায় বের করে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথায় কোথায় কনটেইনমেন্ট জোন কীরকম হবে তার তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, বারুইপুর, রাজপুরে কি সব এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জোন করা হয়েছে? জেলাশাসক কি নিজে জানেন এলাকাগুলো? ডায়মন্ড হারবার, রাজপুর, সোনারপুরে বেশি কনটেইনমেন্ট জোন করা হয়েছে। পুরো ওয়ার্ডকেই কনটেইনমেন্ট জোন করে দেওয়া হয়েছে।

কীভাবে তালিকা তৈরি হল? ভোটার লিস্টের জোন দেখে? একটু বেড়ে খেলেছে। ঘরে বসে টুকে দিয়েছে। এভাবে হলে তো পুরো জেলাটাকেই স্তদ্ধ হয়ে যাবে। এদিন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা আর একবার ভালো করে রিভিউ করে তারপর বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে কলকাতার কনটেইনমেন্ট জোনের তালিকা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই মুখ্যমন্ত্রীর। মুখ্যসচিব রাজীব সিন্হার আর্জি ছিল বুধবারের মধ্যে রিভিউ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি। তিনি বলেন আগে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কেস স্টডি হবে। তারপর তালিকা প্রকাশ করা হবে। দরকার হলে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালিকা প্রকাশ করা হবে।

বুধবার করোনা মোকালা নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান, পরিকাঠামোর কী কী উন্নতি দরকার? সেইসঙ্গে নিজে কিছু পরামর্শও দেন তাদের। করোনার পাশাপাশি অন্য রোগিদেরও সমান গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী।

মমতার কথায়, সব রোগিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে এটা করতে হবে। হাসপাতালেই সংক্রমণজনিত কারণে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে চিকিৎসকদের তরফে আর্জি জানানো হয়, ডাক্তারি পড়ুয়াদের কেরিয়ারে যাতে কোনও সমস্যা না হয়।

মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, শুধু চিকিৎসা বিভাগের পড়ুয়ারাই নয়, করোনার জন্য কোনও পড়ুয়ারই অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে কোনও সমস্যা হবে না। মমতা বলেন, রাজ্যের চিকিৎসকরা করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এটা খুবই চিন্তার। এর প্রতিরোধে যা দরকার সব করতে হবে। সুরক্ষার জন্য সাবান, পিপিই, মাস্ক সব দেওয়া হচ্ছে এবং হবেও।

তিনি চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করেন, রোগিদের ভালো চিকিৎসার জন্য আর কীকী লাগবে আপনারা বলুন। উত্তরে বৈঠকে উপস্থিত মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা বলেন, সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব নেই। চিকিৎসকদের চেষ্টায়ও কোনও ত্রুটি নেই। তবে সাধারণত যারা অন্য কোনও মারণব্যাধিতে আক্রান্ত তারাই মারা যাচ্ছেন বেশি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই কো মরবিড রোগির পরিসংখ্যানটা জেনে রাখতে হবে। এদিন মাস্ক পরার ওপর আরও গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, মাস্ক না পরলে আর্থিক জরিমানার বিধান দিতে পারতাম। কিন্তু এই লকডাউন’এর সময় অর্থদণ্ড কি দেওয়া যায়। তাই পুলিশকেই নির্দেশ দেন মাস্ক ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।