শূন্য আর সিপিএম এই দুটো যেন সমর্থক হয়ে গেছে। রাজ্যের যে নির্বাচনই হোক না কেন, একটা আসনও জোটে না একদা চৌত্রিশ বছরের ক্ষমতায় থাকা দলের। দলটা যে সাইনবোর্ড হয়ে গেছে, বিরোধীদের কটাক্ষ শুনে শুনে কান ঝালাপালা সিপিএম নেতাদের। বৃদ্ধ নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ তুর্কি নেতা নেত্রীদের সামনে এনেও ভোটের ফলের কোনও হেরফের হয়নি। এমনকি গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে মাত্র দু’টি আসনে জামানত রক্ষা করতে পেরেছিল সিপিএম। এর পরেই সিপিএমের অন্দরে আওয়াজ উঠেছিল, প্রশান্ত কিশোরের মত একজন পেশাদারকে দরকার। অবশেষে দলের অন্দরের আওয়াজ মান্যতা পেল। লোকসভা ভোটের মাস ছয়েক পর শুক্রবার এই মর্মে বিজ্ঞাপন দিয়েই ফেলল সিপিএম।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ফেসবুকে ‘লোক খুঁজছি’ মর্মে একটি পোস্ট করেছেন। তাতে বেশ কয়েকটি পদে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, প্রথম পদটিই হল রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। অর্থাৎ, পরিস্থিতি বুঝে যিনি পরামর্শ দেবেন যা অনেকটা প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র মতো। যে কাজটি দু -হাজার একুশে এ তৃণমূলের হয়ে করেছেন প্রশান্ত কিশোর। তাতে অভাবনীয় সাফল্যও পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। যদিও সিপিএম আনুষ্ঠানিক ভাবে বিষয়টিকে পিকের মতো নিয়োগ বলে মানতে চায়নি। সেলিমের বক্তব্য, ‘এত দিন মানুষ সিপিএম ডিজিটাল দেখেছেন। এ বার সিপিএম প্রফেশনাল দেখবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দু হাজার ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হচ্ছে। আমরা সেই মতোই কাজ শুরু করে দিলাম।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ছাড়াও গণমাধ্যমে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লেখার লোক, গ্রাফিক ডিজাইনার, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এগজিকিউটিভ নিয়োগের বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে সিপিএম ভেবেছিল তাদের ভোট শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। নির্বাচনের আগে থেকেই বাম-কংগ্রেস নেতারা বলছিলেন, এ বারের ভোট হবে ত্রিমুখী। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি দ্বিমুখী লড়াই হয়েছে। সেই মেরুকরণে সিপিএম আসন তো পায়নি বটেই, উল্টে বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী হেরে গিয়েছেন। ২৩ জন সিপিএম প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দু’জন তাঁদের জামানত রাখতে পেরেছেন। মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম ও দমদমে সুজন চক্রবর্তী। সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধরের মতো তরুণ-তরুণীদের কেউ দাঁড়াতেই পারেননি গত লোকসভা ভোটে । তাই দিকে দিকে শূন্য হয়ে যাওয়ার পর হয়তো সেই পিকের ধাঁচের কারও শরণাপন্ন হতে চলেছে বামেরা।
Advertisement
Advertisement



