শ্রমিকদের লং মার্চ দেখে উজ্জীবিত বামেরা

কেন্দ্র যদি জোর করে এনআরসি বা সিএবি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে জোর আন্দোলন হবে বলে শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

Written by SNS Kolkata | December 12, 2019 2:53 pm

শ্রমিকদের লং মার্চ (Photo: IANS)

লােকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সদ্য সমাপ্ত তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি জোট। কিন্তু বুধবার রানি রাসমণি রােডের লং মার্চের সমাবেশ দেখে উল্লসিত দলীয় নেতৃত্ব। লং মার্চের সমাবেশ থেকে অক্সিজেন পেয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রথম সারির বাম নেতারা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। সকলেই দাবি করেছেন, নির্বাচনের পরে যাঁরা বামেদের শক্তি ক্ষয় হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাদের ব্যাখা ভূল বলে প্রমাণিত হয়েছে এদিনের লং মার্চে।

মােট ১২ দফা দাবির ভিত্তিতে বুধবার চিত্তরঞ্জন থেকে রাজভবন পর্যন্ত এগারাে দিন ধরে প্রায় ২৭৮ কিলােমিটার লং মার্চ করে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন এবং ফেডারেশনগুলি এদিন রানিরাসমণি রােডে এসে পৌঁছায়। শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন করে লং মার্চে যােগ দিয়েছিল কংগ্রেসও। মঙ্গলবার রানিরাসমণি রােডে আয়ােজিত সভায় দুই বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি সহ একাধিক জেলার শ্রমিকরা লং মার্চে অংশগ্রহণ করেন।

কৃষক নেতা অশােক ধাওলে, সিটুর সর্বভারতীয় নেতা তপন সেন, ইউটি ইউসি নেতা অশােক ঘােষ, সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখােপাধ্যায় সহ বিভিন্ন বক্তরা বক্তব্য রাখেন। রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখােপাধ্যায় ৮ জানুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন। বাম নেতাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার এনআরসির নামে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে। ব্রিটিশরা যে কাজ করতে সফল হয়নি, সেই কাজে আগ্রহী হয়েছে কেন্দ্রের মােদি এবং অমিত শাহ। কেন্দ্র যদি জোর করে এনআরসি বা সিএবি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে জোর আন্দোলন হবে বলে শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি তপন সেন নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্র পরিকল্পিতভাবে দেশের শিল্পকে ধ্বংস করতে চাইছে। যে কৃষকরা দেশের মানুষের অন্ন জোগায় তাদের উপর শুরু হয়েছে দমনপীড়ন। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য প্রয়ােজনে প্রতিরােধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিটুর সম্পাদক অনাদি সাহুর অভিযােগ চিত্তরঞ্জন লােকমােটিভ ওয়াকর্স থেকে চলতি আর্থিক বছরে মােট ৪০২টি রেল ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কারখানাকে পুরােপুরিভাবে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। চক্রান্ত করে এই লাভজনক সংস্থাকে রুগ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

শ্রমিক নেতা জি দেবরাজনের কথায়, শ্রমিকদের দাবি মানতে চাইছে না কেন্দ্র। এমতাবস্থায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিনষ্ট করার চক্রান্ত শুরু করেছে কেন্দ্র। এআইকেএসের সর্বভারতীয় নেতা অশােক ধাওলের বক্তব্য, বিগত পাঁচ বছরে সাড়ে তিনলাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বিপিসিএল, এইচপিসিএল, রেল প্রতিরক্ষার মতাে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলিকে বেসরকারিকরণ করার উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। সমস্ত কিছু আম্বানিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। শেষমেষ দেশকে পুঁজিপতিদের হাতি বিক্রি করতে চাইছেন মােদি সরকার।

ইউটিইউসি নেতা অশােক ঘােষ বলেন, নবান্ন এবং পুলিশ কর্তারা মনে করেছিলেন, তাদের সমাবেশে খুব একটা জনসমাগম হবে না। কিন্তু সকলের আশঙ্কা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করতে দিলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভীড় হত। দুর্গাপুর থেকে লং মার্চে আসা সিএলডব্লিউ কর্মী নেপাল চক্রবর্তী আক্ষেপের সুরে জানান, ২০১৮-১৯ সালে চারশােটি ইঞ্জিন নির্মাণ করার টার্গেট তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টার্গেট অতিক্রম করে তারা ৪০২টি রেলইঞ্জিন নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তা সত্বেও লাভজনক সংস্থাকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দিতে তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের এই জনবিরােধী নীতি শ্রমিকরা মেনে নেবেন না বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেপালবাবু।