রাজ্যের শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রথম সারিতেই আসে। সম্প্রতিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে গিয়েছে জাতীয় মূল্যায়ন সংস্থা ‘ন্যাক’ (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল)। তারই মধ্যে পরীক্ষায় নম্বর দেওয়া নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগের আঙুল তুললেন পড়ুয়ারা। জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন (সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন) বিভাগে ঘটেছে এমনটা, দাবি বিভাগীয় পড়ুয়াদের।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শুভম গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপকদের অনেকেই পরীক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অবস্থান বা দলমতের উপর নির্ভর করে নম্বর দেন। বিভাগের কিছু বাম-মনস্ক অধ্যাপকদের দিকেই মূলত আঙুল তুলছেন পড়ুয়ারা। জার্নালিজম বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র দেবকুমারের দাবি, যাঁরা ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বেশি বেশি নম্বর পান।যেসব শিক্ষার্থী এসএফআই করেন না, তাঁদের অনেক কম নম্বর দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ফেল করিয়েও দেওয়া হয়। এই কারণে অনেকেই পিএইচডি বা গবেষণামূলক কাজের দিকে এগোতে পারছেন না। অনেক যোগ্য পরীক্ষার্থী ফার্স্ট ক্লাস পাচ্ছেন না।
Advertisement
আন্দোলনকারীরা জানান, বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই নিয়ে ৫০ খানার বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাতেও কোনও ফল হয়নি। শেষমেশ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে পড়ুয়াদের। শুক্রবার বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথি চক্রবর্তীকে ঘেরাও করেন তাঁরা। অবস্থান চলতে থাকে। শেষে অনশনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও সদুত্তর না পাওয়া যায়, ততক্ষণ অনশন চালাবেন বলে জানান তাঁরা।
Advertisement
অবশেষে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তড়িঘড়ি ডাকা হয় বিভাগীয় শিক্ষা পর্ষদ (বোর্ড অফ স্টাডিজ)-এর বৈঠক। রিভিউয়ের দাবিতে সরব হন শিক্ষার্থীরা। রিভিউয়ের সময়ে এক্সটার্নাল পরীক্ষকদের দিয়ে খাতার মূল্যায়ন করানোর কথাও ওঠে। পড়ুয়ারা আরও জানান, যে সকল অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের লিখিতভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
বিভাগের প্রধান পার্থসারথি চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এক শিক্ষককে শো কজ নোটিশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।তবে, রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়ার অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। দাবি মেনে নেওয়ায় শেষমেশ রাতের বেলা অনশন ও অবস্থান তুলে নেন পড়ুয়ারা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতিই দশ বছরে পা দিল ২০১৪-তে কলকাতার বুকে হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ‘হোক কলরব’, যার সূত্রপাত হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। তারই আবহে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আরও একবার দেখিয়ে দিল, প্রতিবাদ-প্রতিস্পর্ধার সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য থাকে সকল প্রকার অন্যায়।
Advertisement



